বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের বাড়িতে এখন আনন্দের বন্যা। তাঁর জন্মস্থান বাগপাঁছড়া গ্রামের নাম হচ্ছে রুহুল আমিননগর। বাড়ির সামনে তাঁর পরিবারের দেওয়া ২০ শতাংশ জমির ওপর নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্মাণ করছে রুহুল আমিন স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। এটির কাজও প্রায় শেষ। প্রতিদিন এখানে আসছে দূরদূরান্তের লোকজন।
চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ছয় দিন আগে ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসায় ঘাতকের গুলিতে শহীদ হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ’৪৩ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁছড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তিন ভাই, চার বোনের সংসার। ’৫১ সালে নৌবাহিনীতে নায়েক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। যুদ্ধের সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান তাঁর মা-বাবা। তাঁর নিজের তিন মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মারা গেছেন এক ছেলে। একমাত্র ছেলে শওকত আলী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, বর্তমানে নৌবাহিনীর তৈরি করে দেওয়া বাড়িতে বাস করেন। আর তিন মেয়ে থাকেন চট্টগ্রামে, নৌবাহিনীর দেওয়া বাড়িতে।
গ্রামের বাড়িতে জাদুঘর ও গ্রন্থাগার হওয়ায় দারুণ খুশি বড় মেয়ে নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর এই প্রথম সরকার বাবার প্রকৃত মূল্যায়ন করছে। ২০ জুলাই সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ নিজ হাতে তাঁদের দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের ফলক উন্মোচন করেছেন। তাঁরা আশা করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের পাশাপাশি সব মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।
নূরজাহান বেগমের ছেলে সোহেল চৌধুরী জানান, এ মুহূর্তে সরকারের কাছে তাঁদের একটাই দাবি—যুদ্ধাপরাধীদের যথাযথ বিচার। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের কবর খুলনার রূপসা ফেরিঘাটের কাছে লকপুরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এ কবরকে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের কাছে নিয়ে এসে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনেরও দাবি জানান তিনি।
শওকত আলীও তাঁর বাবার স্মৃতিতে জাদুঘর হওয়ায় খুব খুশি। কেউ দেখতে এলেই ছুটে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
গ্রামের লোকজনের অভিযোগ, বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি আসন থেকে অনেকেই সাংসদ-মন্ত্রী হলেও কেউ বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দিকে তাকাননি। বীরশ্রেষ্ঠর স্মৃতি ধরে রাখতে নৌবাহিনীই শুধু ’৯৪ সালে বাগপাঁছড়া গ্রামে স্থাপন করে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর নৌবাহিনী-প্রধান এক লাখ টাকার অনুদানও দেন। এ ছাড়া বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভ।
রুহুল আমিন একাডেমির দশম শ্রেণীর ছাত্র জাবেদ হোসেন জানায়, এ একাডেমির ছাত্র হিসেবে সে গর্ব বোধ করে।
নোয়াখালী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। এতে ব্যয় হবে ৬২ লাখ টাকা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা করেন। তখন দেশ-বিদেশের মানুষ এসে বীরশ্রেষ্ঠর ব্যবহূত দ্রব্যসামগ্রী ও ছবি দেখতে পারবে।
সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত