বিজ্ঞাপন
default-image

আজ থেকে প্রায় দু যুগ আগের কথা। আমি তখন ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক। একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন একজন হিন্দু ভদ্রলোক। তার বয়স হবে ৩০-৩৫। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। সুপুরুষ-নাদুস-নুদুস চেহারা। নাম ঠাকুরগোপাল বণিক। নিবাস ধামরাই। তার ভরাট কণ্ঠস্বর, বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও চমত্কার বাচনভঙ্গি চট করে মনোযোগ কাড়ে। ভদ্রলোক এসেছেন আমাকে ধামরাইয়ের বিখ্যাত রথযাত্রা অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করতে। তিনি ওই অনুষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি।

২.

রথযাত্রার কথা শুনলেই আমার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই সুন্দর পঙিক্তগুলো মনে পড়ে যায় : রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহাধুমধাম-/ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।/পথ ভাবে ‘আমি দেব’, রথ ভাবে ‘আমি’,/মূর্তি ভাবে ‘আমি দেব’-হাসে অন্তর্যামী\ আরো মনে পড়ে শৈশবের রথযাত্রা অনুষ্ঠানের কথা : মানুষের ভিড়, হৈ-হুল্লোড়, চিত্কার, ঢোলের বাদ্য, কাঁসরঘণ্টা, উলুধ্বনি, আর মাঝে মাঝে সবকিছু ছাপিয়ে হরিলুটের বাতাসা। ঠাকুরগোপাল বাবুর আমন্ত্রণ পেয়ে এক মুহূর্তের জন্য শৈশবের সেই সোনাঝরা দিনগুলোতে ফিরে গেলাম। সত্যি, জীবনটা তখন কত সহজ ছিল। শুধু কি আমাদের মানে শিশুদের জন্য সহজ-সরল ছিল সেসব দিন? না বোধহয়।

আসলে আজ থেকে অর্ধ শতাব্দী বা তারও বেশি আগে বাংলাদেশটা সত্যিই খুব মায়াভরা শান্তির একটা দেশ ছিল। দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন আজ যেমন আছে, তখনো তেমনি ছিল। কিন্তু তখন মানুষের মনে প্রেম-ভালোবাসা ছিল। মুখে হাসি ছিল। পরসঙ্র পরসেরর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। জনসংখ্যা ছিল অনেক অনেক কম। মাত্র ৫ কোটি বা তার চেয়ে একটু বেশি বা কম। জীবন ছিল অনেক নিরাপদ, নির্ঝঞ্ঝাট। তখন শুধু নুনই সস্তা ছিল, খুন সস্তা ছিল না।

৩.

লন্ডনে এসে অবধি একটা গান প্রায়ই শুনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। গানটি মরমি কবি শাহ আবদুল করিমের লেখা। এর শুরুটা এরকম : গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান/মিলিয়ে বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম/আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। সুদর্শন নৃত্যশিল্পী নবীন যুবা অমিত এবং আরো একজনকে এই গানটির সঙ্গে চমত্কার একটা দ্বৈত-নৃত্যও পরিবেশন করতে দেখেছি। ভারি সুন্দর গান। তেমনি সুন্দর নাচ। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে প্রাণ ছুঁয়ে যায় গানের কথাগুলো। মনে হয় যেন আমার বয়সী শ্রোতাদের হূদয় নিংড়ানো কথামালা : আগে কী সুন্দর দিন কাটাতাম। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এ গানটি শুনে আমাদের বয়সী সব শ্রোতার চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে, একটি করুণ আর্তনাদের মতো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুক চিরে।

পৃথিবীটা হঠাত্ কত বদলে গেছে। ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’। চারদিকে শুধু হানাহানি, শুধু শোণিতপাতের মহোত্সব। মানুষ যেন আর মানুষ নেই। মানুষ এখন এক হিংস্র শ্বাপদে পরিণত হয়েছে। মানুষের আদি ও অকৃত্রিম পরিচয় সে মানুষ। তারপর তার অন্য সব পরিচয়। এ কথাটি মানুষ যেন এখন ভুলে গেছে। এখন সে হয়ে গেছে একটি লেবেলসর্বস্ব রোবট। সে জানে না কার হুকুমে পাগলের মতো এ মারণখেলায় মেতে উঠেছে সে। প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা এসব কিছু তার কাছে এখন অর্থহীন হয়ে পড়েছে, এই একবিংশ শতাব্দীর সিংহদরজা দিয়ে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে।

৪.

আমাদের ছেলেবেলা স্কুলে কী সুন্দর সুন্দর কবিতা পড়তে হতো আমাদের। সে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগেকার কথা। সেসব পদ্যে-কবিতায় মানুষকে ভালোবাসার কথা থাকত, ‘সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’ এই আকুল কামনার কথা বলা হতো। ক্লাস ফাইভে, সেই ১৯৫০ সালে, মৌলভীবাজার গভর্নমেন্ট স্কুলে একটা কবিতা পড়েছিলাম। যদ্দূর মনে পড়ে বিহারীলাল চক্রবর্তীর লেখা। তার শুরুটা ছিল এরকম : মানব আমার ভাই বড় প্রিয়জন/মানব-মঙ্গল সদা করি আকিঞ্চন।/জন্মেছি মানব-অঙ্গে, বেড়েছি মানব-সঙ্গে...। আর মনে নেই। এমনি কত কবিতা, কত সুন্দর সুন্দর হিতোপদেশমূলক গল্প। মহাপুরুষদের জীবনী। ‘শুনহ মানুষ ভাই/সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই’। ‘গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,/সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’-বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ দীর্ঘ কবিতাটি তো আমাদের অনেকেরই মুখস্থ ছিল। আরেকটি ছোট কবিতা সে আমলে সবাই পড়েছি। পড়েছি এবং পড়ে তার ভাবার্থ অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছি। এখন এ পঙিক্তগুলো কতদিন শুনি না। দেখি না কোথাও। এই ছোট্ট কবিতাটি লিখেছিলেন লালমনিরহাটের কবি শেখ ফজলুল করিম। স্মৃতি হাতড়ে উদ্ধার করা যাক কবিতাটি। কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর/মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেই সুরাসুর।/রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায় গো লয়/আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনই পুড়িতে হয়।/প্রীতি ও প্রেমের পুণ্যবাঁধনে মিলি যবে পরসের/স্বর্গ আসিয়ে দাঁড়ায় তখন আমাদেরই কুঁড়েঘরে। তেমনি প্রখ্যাত মহিলা কবি কামিনী রায়ের প্রায়শ উচ্চারিত কবিতার লাইন : পরের কারণে স্বার্থে দিয়ে বলি এ জীবন মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে, আপনার কথা ভুলিয়া যাও। এগুলো স্কুলে আমরা পড়েছি। শুধু পড়িনি, পড়ে বুঝতে হয়েছে এবং নিজে থেকে না হোক, শিক্ষক ও গুরুজনদের গুঁতোয় জীবনে এগুলো যত্সামান্য হলেও আমল করতে হয়েছে।

৫.

তখন কমিঙ্উটার-টেলিভিশন ছিল না। এমনকি সিনেমাও ছিল নাগালে বহুদূরে। ফলে আজকালকার সংজ্ঞায় আমরা স্মার্ট ছিলাম না মোটেই, ছিলাম ‘খেত’। ফেনসিডিল-হেরোইন এগুলো তখনো ছিল অনাবিষ্কৃত। হ্যাঁ, বিড়ি ছিল। তবে সেই সঙ্গে বিড়ি খেতে ধরা পড়লে বিরাশি দশ আনা ওজনের চপেটাঘাতও ছিল, যার একটা মুখমণ্ডলের কোথাও শোয়েব আখতারের বোলিংয়ের মতো পতিত হলে তিন দিন বিছানা থেকে ওঠার জো ছিল না। তবে ওই বিড়ি পর্যন্তই। তাও সেবনকারীদের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা দু-চারজন। আর সে আমলের গ্রেনেড ছিল দু-চারটে ইট-পাথরের ঢিল-পাটকেল। দুই পাড়া বা দুই টিমের মধ্যে ঘোরতর কুরুক্ষেত্র না বাঁধলে ওগুলোও অনাদরে-অবহেলায় পড়ে থাকত রাস্তায়।

গ্রেনেড বোমা এগুলো তা আমরা চিনলাম একাত্তরের পর। ভিয়েতনামের লোকেরা তিন যুগ এসবের সঙ্গে ঘর-বসতি করেও এগুলোর আত্মঘাতী ব্যবহার চিনতে পারেনি। আর আমরা? জিনিয়াস কারে কয়! যুদ্ধ করলাম নয় মাস, আর যুদ্ধের স্যুভেনির হিসেবে এসব মূল্যবান বস্তু পকেটে পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি যুগ যুগ ধরে। কথায় কথায় আবার এগুলো ফুটাচ্ছিও যখন-তখন, যত্রতত্র। যে বাঙালি নাকি এককালে গাদা বন্দুকের আওয়াজ শুনলে দু কানে আঙুল গুঁজে লা-হাওলা অথবা দুর্গা দুর্গা জপত, সে এখন মানুষ মারে মশা-মাছি মারার মতো। আমার মনে আছে, ষাটের দশকে পেশোয়ার অঞ্চলে পাঠানদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ দেখে আমরা মানে বাঙালি অফিসাররা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতাম-ওরা অসভ্য, বর্বর। আনকালচার্ড, ব্রুট। হিংস্র পশুর চেয়েও অধম।

৬.

হায়! এ কদিনে কী হয়ে গেল। এ আমরা কোথায় নেমে গেলাম। আমরা কী করে আমাদের সেই সুকুমার বৃত্তিগুলো, আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আমাদের সহস্র বছরের ভালোবাসার বন্ধন ভুলে গেলাম। আমরা তো ‘হিন্দু-মুসলমান মিলিয়ে বাউলা আর মুর্শিদি গাইতাম।’ এখন কেন আমরা এত লেবেল লাগাচ্ছি নিজেদের কাপালে, বুকে, পিঠে, বাহুতে। সবখানে। আগেও তো এই আমরাই ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম-কর্ম পালন করেছি, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল করেছি। তখনো তো ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল, প্রতিযোগিতা ছিল। রাজনীতি নিয়ে হৈ-হুলস্থুল ছিল। কিন্তু কোনোকিছুর মধ্য থেকে তো শালীনতাবোধ, পারসিরক সম্ভ্রমবোধ হারিয়ে যায়নি। এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীর ওপর এখনকার মতো কারণে-অকারণে চড়াও হয়নি।

আসলে দু-একটি অতীব জরুরি মূল্যবোধ সমাজ থেকে দ্রুত হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে, ওই একটু আগে যে বলেছি সেই বোধটি : মানুষ প্রথমত একজন মানুষ এবং শেষবিচারেও একজন মানুষ। সে মানুষ হয়ে জন্মায়-কুকুর-বেড়াল, গরু-ছাগল বা অন্য কোনো প্রাণী হয়ে জন্মায় না। এ জন্মের ওপর তার কোনো হাত নেই। বার্থ ইজ, পিওর অ্যান্ড সিমঙ্ল, অ্যান একসিডেন্ট। জন্মের সময় বস্তির শিশুটি যেভাবে কাঁদে, রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণকারী রাজপুত্র বা রাজকন্যাও একইভাবে কাঁদে। আর সে কান্নার কোনো আলাদা ভাষা নেই। বিলেতের বাচ্চা ইংরেজিতে, বাংলাদেশের বাচ্চা বাংলায় এবং আরব দেশের বাচ্চা আরবিতে কাঁদে না বা হাসে না। দ্য বেবি ইজ ক্রাইং ইন ইংলিশ, অথবা দ্য বাংলাদেশী চাইল্ড ইজ লাফিং ইন বেঙ্গলি, এ ধরনের উদ্ভট কোনো কথা কোনো ভাষাতেই নেই। তেমনি অন্য সব অনুভূতির প্রকাশও হয় একই রকম। আর তা শুধু শিশুদের বেলায় নয়, ছেলে-বুড়ো, ধনী-গরিব সবার বেলায়ই সমান।

আবার মরার সময় সবাইকেই মরতে হয় একই স্টাইলে। এমন নয় যে শুধু আমেরিকার মহাশক্তিশালী প্রেসিডেন্ট মরবেন (নাকি ইন্তেকাল ফরমাবেন!) মণিমুক্তাখচিত পালঙ্কে শোয়া অবস্থায়, সন্ন্যাসী বাবা মরবেন পদ্মাসনে থেকে এক হাত উঁচু করে, আর ঘুঁটেকুডুনি বুড়ি মরবে কুঁজো হয়ে ফোকলা দাঁত কেলিয়ে। ‘ডেথ দ্য লেভেলার’ এমন এক সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা করে রেখেছে যে সবাইকেই মরার সময় চোখ বুজতে হবে-চোখ বুজে একটা মাটির ডেলা হয়ে পড়ে থাকতে হবে, নিশ্চল-নিশ্চুপ, নট নড়ন-চড়ন, নট কিচ্ছু নাথিং হয়ে। তারপর সেই ডেলাটাকে মাটির নিচে রাখা হবে, না পোড়ানো হবে, না ভাসানো হবে সে ব্যাপারে বাদশা নামদারই হোন আর নুলো ফকিরই হোন কোনো রা কাড়তে পারবেন না। লাশ পচে গেলেও না। তখন ‘আজিকে হয়েছে শান্তি, জীবনের ভুলভ্রান্তি/সব গেছে চুকে।/রাত্রিদিন ধুক্পুক্, তরঙ্গিত দুঃখ সুখ/থামিয়েছে বুকে।/যত-কিছু ভালোমন্দ যত-কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব/কিছু আর নাই!/বলো শান্তি, বলো শান্তি, দেহ সাথে সব ক্লান্তি,/হয়ে যাক ছাই’ (‘মৃত্যুর পরে’ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। অথবা ওমর খৈয়ামের ভাষায় সেই মাটি ডেলাটির গতি হবে এরকম : ডাস্ট্ ইন্টু ডাস্ট্, অ্যান্ড আন্ডার ডাস্ট্ টু লাই/সাঁ ওয়াইন, সাঁ সং, সাঁ সিংগার, অ্যান্ড সাঁ অ্যান্ড। জীবদ্দশায় হাজার হাজার পাইক-বরকন্দাজ, সেপাই-শান্ত্রী মাছিটাও যার কাছে ভিড়তে দিত না, কী আফসোস, তাঁকে একটা কষে লাথি লাগালেও তিনি হাত তুলে ঠেকান দিতে পারেন না। সাধে কি আর ইংরেজ কবি টমাস গ্রে বলেছেন : দ্য পাথস্ অব গ্লোরি লিড বাট টু দ্য গ্রেভ।

তাহলে বেঁচে থাকতে এত চোটপাট কিসের? কেন ওকে ধর, ওকে খতম কর, ও ভালো না শুধু আমি ভালো, এসব হম্বিতম্বি? এর কারণ একটাই। কারণ ওই লেবেল। হ্যাঁ লেবেল। মানুষ জন্মায় একই রকমভাবে। জন্মের সময় তার পরিচয় একটাই। সে মানুষ। তারপর থেকেই শুরু হয় তার গায়ে লেবেল লাগানো। সে আফ্রিকান। সে এশিয়ান। সে ইউরোপিয়ান। সে আমেরিকান। সে চীনা। গায়ের রঙের কারণে লাগানো হয় আরেক লেবেল। সে শাদা। সে কালো। সে বাদামি। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে তার জ্ঞানবুদ্ধির উন্মেষ হয়। লাগতে থাকে আরো অনেক লেবেল। অর্থনৈতিক-সামাজিক-ধর্মীয়-রাজনৈতিক ইত্যাদি ধরনের লেবেল। -এক মানুষ হয়ে যায় হাজার মানুষ।

আচ্ছা, জন্মের পরমুহূর্তে যদি ওই কালো-শাদা-বাদামি, ওই ধনী-দরিদ্র, ওই হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান সব নবজাতককে কোনো নির্জন দ্বীপে কোনো এক স্মৃতিভ্রষ্ট সন্ন্যাসী বা দরবেশের জিম্মায় রেখে আসা হয় তাহলে কী হবে? বাকি জীবন সেখানে যদি পার্থিব কোনো জ্ঞান, কোনো সংবাদ তাদের কাছে না পৌঁছায়, আর কোনো মানুষের সংসের্শ তারা যদি না আসে, তবে?

৭.

ঠাকুরগোপাল বণিকের আমন্ত্রণ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তখন আমার ‘জোয়ান ভি থা, বুড়বক ভি থা’ সময়। চাকরিটাও তেমনি। জীবনকে দেখার, জগেক চেনার অফুরন্ত সুযোগ। চাকরির গাধাখাটুনির মাঝে এই সুযোগটাই আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে ট্র্যাজেডি নাটকের কমিক রিলিফের মতো। কাজেই নাচইন্যা বুড়ি ঢোলের বাড়ির আওয়াজ শুনলেই হয়। বণিকবাবুকে বললাম, যাব। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, একা গেলে হবে না স্যার, বেগম সাবকেও নিতে হবে। তথাস্তু। আমি বললাম। কিন্তু একটা ব্যাপার। এখন রোজার মাস। আপনাদের অনুষ্ঠান সন্ধ্যায়। ওই সময় তো ইফতারের টাইম। আমরা দুজনেই তো রোজাদার। ঠাকুরগোপাল বাবু মনে হয় প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমাদের এলাকায় অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলমান আছেন। তাদের বাড়ি যদিও একটু দূরে তবু অসুবিধা হবে না। তাদের কারো বাড়িতে আপনাদের জন্য ইফতারির ব্যবস্থা করা হবে। আর যদি মনে করেন রথের ভিড়ের ভেতর দিয়ে ওখানে গিয়ে ইফতার করতে অসুবিধা হবে তা হলে গরিবের বাড়িতে পয়পরিষ্কার করে আপনাদের নামাজ ও ইফতারের জায়গা করে দিতে পারি। অবশ্য হুজুরের যদি আপত্তি না থাকে। আমি বললাম, কেন, আপত্তি কিসের? আপনার বাড়িতে বসে কি আমি আল্লাহকে ডাকতে পারব না? নাকি আপনার বাড়ি আল্লাহর আঠার আলমের বাইরে? তার চেয়ে বলুন আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে কি না। বণিক মশায় জিভ কেটে বললেন, স্যার যে কী বলেন। আমরা আমাদের পূজা-অর্চনা করব, আপনারা নামাজ-কালাম পড়বেন, এতে অসুবিধা কোথায়?

আসলে অসুবিধা কোথায় আমিও বুঝি না। অসুবিধা আসলে মনে। তা না হলে সেদিন এত প্রশান্ত হূদয়ে ওই হিন্দুবাড়িতে বসে আমি ও আমার স্ত্রী নামাজ-কালাম করলাম কীভাবে।

এখানে আরেকটা কথা বলে রাখা ভালো। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ধামরাইয়ের সুবিশাল-তা প্রায় তেতলা দালানের সমান উঁচু-ঐতিহাসিক জগন্নাথের রথটি পুড়িয়ে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারি অর্থানুকূল্যে ওই রথ পুনর্নির্মিত হয় এবং সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে প্রতি বছর নির্বিঘ্নে রথাযাত্রা উত্সব উদযাপন করতে পারেন সে জন্য সব রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। আমি যখন বণিক মহাশয়ের প্রস্তাবে সম্মতি জানাই তখন অনেকটা আক্ষরিক অর্থে রথ দেখা কলা বেচার মতো প্রশাসনিক কারণেও ওইদিন অকুস্থলে আমার উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথাটাও মনে ছিল।

৮.

আরেকবার ওই ঢাকাতেই এ ধরনের আরেকটা ঘটনা ঘটেছিল। সেটাও ছিল রমজান মাস। গাজীপুর মহকুমার (এখন জেলা) কালিয়াকৈর থানার ভৃঙ্গরাজ গ্রামে বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এক হিন্দু ভদ্রলোকের বাড়ির আঙিনায়। ওই গ্রামটি ছিল হিন্দুপ্রধান। যে বাড়িতে অনুষ্ঠান সেটি একটি সমঙ্ন্ন গৃহস্থ বাড়ি। প্রধান অতিথি আমি। বিদ্যুতের সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে আলোকিত করা হবে গ্রাম। কাজেই সন্ধ্যাবেলার অনুষ্ঠান। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার-মাতবর সবাই উপস্থিত। সেই সঙ্গে আরো প্রায় শ খানেক লোক হাজির হয়েছে। দেখা গেল ওই বাড়ির একটা ঘরে কয়েকজন মুসল্লি ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে নানা প্রকার ইফতারির আয়োজন করছেন। বাড়ির উঠানে তারা তাদের সঙ্গে আনা জায়নামাজ-মাদুর-চাটাই ইত্যাদি বিছিয়ে সুন্দর জায়গা করেছেন মাগরিবের নামাজের। উঠানের এক কোনে অজুর ব্যবস্থাও আছে চমত্কার। এক সময় আজান দিলেন একজন। তারপর ইফতার ও নামাজ। নামাজ শেষ করে আমরা যখন চা-টা খাচ্ছি তখন ওই বাড়ির ঠাকুরঘরে শুরু হলো সন্ধ্যা আরতি। উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, ঘণ্টাধ্বনি সবই হলো যথারীতি। কোনো লজ্জা-সঙ্কোচ যেমন নেই তেমনি নেই কোনো বাড়াবাড়ি। আমরা হাজিরানে মজলিস সবাই যার যার ধর্ম-কর্ম করলাম অত্যন্ত সহজ-স্বাভাবিকভাবে। একজনের উপাসনায় যাতে বাধা সৃষ্টি না হয় সে জন্য অন্যজনের কী সুন্দর সহযোগিতা, কী অপূর্ব সহমর্মিতা। কেউ বলল না মুসলমানরা এখানে নামাজ পড়লে আমাদের জাত যাবে। কিংবা এই মাত্র এই উঠানে নামাজ আদায় করেছি, এখন এর পাশের ঘরে পূজা হচ্ছে কেন। সবাই বরং হূষ্টচিত্তে নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম পালন করতে পেরে খুশি।

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে আমাদের ইসলাম ধর্মে কঠোরভাবে নিষেধ করা আছে। তেমনি ধর্মে যে জোর-জবরদস্তির কোনো স্থান নেই সে কথাও সঙ্ষ্টভাবে বলা হয়েছে। অবশ্য কোনো ধর্মেরই এর উল্টোটা বলা হয়েছে বলে আমরা জানা নেই। কিন্তু দেশে দেশে ধর্ম-সাহিত্য-দর্শন ইত্যাদির সব ভালো ভালো কথাগুলোই এখন লঙ্ঘিত হচ্ছে বেশি। দেখে-শুনে মনে হয় যেন ‘এটা করতে নিষেধ করা হয়েছে তাহলে এটাই বেশি করে করব’, এ ধরনের একটা মনোভাব কাজ করছে। যেন ‘পাগলা সাঁকো নাড়াসনে’ অবস্থা।

৯.

যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করে সুন্দর সুগঠিত অমিত শক্তির আধার দেহ গড়ে তোলেন তাদের নাকি মন্ত্রপাঠের মতো সব সময় একটি কথা উচ্চারণ করতে হয় : আমার এ শরীর, আমার এ শক্তি, আমার নিজেকে এবং আমার চারপাশের দুর্বল অসহায়কে রক্ষা করার জন্য নিয়োজিত করব। কাউকে আক্রমণের জন্য নয়। যারা সত্যিকারের নিষ্ঠাবান ব্যায়ামবিদ তারা আজীবন এই নীতি মেনে চলেন। কিন্তু ব্যক্তির ক্ষেত্রে যাই হোক, অতীব পরিতাপের বিষয়, সমাজ জীবনে কিংবা রাষ্ট্রজীবনে দেখতে পাওয়া যায় এর বিপরীত আচরণ। পরাশক্তি মানে যেন পরকে গ্রাস করার শক্তি। ‘দুর্বলেরে রক্ষা করো দুর্জনেরে হানো’ বাস্তবে হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্জনের রক্ষা করো দুর্বলেরে হানো।...একেবারে মাত্স্যন্যায় অবস্থা।

শক্তি, এবং শক্তিই-তা সামরিক, আর্থিক বা জনশক্তি যাই হোক না কেন- হচ্ছে একমাত্র নিয়ামক। আমরা সবাই সমস্বরে বলব সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রকৃতির ধর্মই তো তাই। সারভাইভেল অব দ্য ফিটেস্ট। সৃষ্টির আদিকাল থেকে এটাই তো হয়ে আসছে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। এটাই তো বাস্তব। বুঝলাম। তাহলে এ পৃথিবী কি শুধু দানবের জন্য, মানবের জন্য নয়? রাক্ষস-খোক্কসের জন্য, ডাইনোসরদের জন্য, ক্ষুদ্র পিপীলিকার জন্য নয়? আরো সহজ কথায়, শুধু পরস্বাপহারী দুর্বৃত্ত মাস্তানদের জন্য, নির্বিরোধ ক্ষীণকায়দের জন্য নয়? তাই যদি হয় তাহলে শিল্প-সাহিত্য-দর্শন, এমনকি ধর্ম যা মানুষকে ধারণ করার জন্য পৃথিবীতে এসেছে, সবই যে মিথ্যা হয়ে যায়। না, এটা সত্যি হতে পারে না। মানুষ মানুষকে ধ্বংস করবে এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেননি। তাই যদি করতেন তাহলে মানুষকে হূদয় নামক একটি বস্তু দিয়ে পৃথিবীতে পাঠাতেন না এবং সেই হূদয়ের ভেতর প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, দয়া-মায়া-মমতা ইত্যাদি অপার্থিব অনির্বচনীয় অনুভূতি ভরে দিতেন না। ওখানে আনন্দ-হাসি-গান, সুখ-দুঃখ-যন্ত্রণা, ‘হূদয় দিয়ে হূদি অনুভব’ করার মতো ব্যাপার-স্যাপার থাকত না। থাকত শুধু হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ-জিঘাংসা।

এখন মানুষ ভুলতে বসেছে প্রেমের কথা, মায়া-মমতার কথা। এখন সে আরেকজন মানুষের দিকে প্রীতিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় না, হিংসা-বিদ্বেষভরা চোখে তাকায়। একটি রাষ্ট্র আরেকটি রাষ্ট্রের দিকে লোভের দৃষ্টিতে, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তাকায়। ঝরনায় জলপানরত মেষশাবকের দিকে গল্পের নেকড়ে বাঘ যেমন করে তাকিয়েছিল তেমনি।

১০.

ফিরে আসি সেই লেবেল প্রসঙ্গে। লেবেলগুলো মানবজাতিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমরা লক্ষ করছি না। অথচ ইচ্ছা করলেই আমরা নানা রঙের লেবেল সত্ত্বেও পরসঙ্র পরসঙ্রকে কাছে টানতে পারি। তাতে আর কিছু না হোক, মনে এক অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়। একটু ভাবলেই তো হয়, আমার মনের ভেতর মণিমুক্তার যে অপার ভাণ্ডার তার থেকে অন্যকে কয়টি তুলে দেওয়ার যে অপার্থিব আনন্দ তা থেকে কেন আমরা নিজেকে বঞ্চিত করব। ও কালো তাই ওকে কাছে টানা যাবে না, ও গরিব ওকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে, ও দুর্বল ওকে ফুত্কারে উড়িয়ে দিতে হবে-এই মানসিকতায় আমরা কিন্তু অবচেতনে অহর্নিশ নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি, নিজেই জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছি-এ কথাটা একটু ভেবে দেখলে জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারে।

১১.

আমাদের সামাজিকতায়, পায়-পরবে, আচার-অনুষ্ঠানে আমরা যূথবদ্ধতা ও কূপমণ্ডূকতায় বিশ্বাসী। যত দিন যাচ্ছে ততই আমাদের চারপাশের দেয়ালগুলো আমাদের চাপতে চাপতে ইঞ্চিখানেক মানুষে পরিণত করছে। আমরা ওই এক ইঞ্চির বাইরে তাকাতে পারছি না। এখন তো এমন হয়েছে রাস্তায় দেখা হলে কুশল বিনিময়ের আগে ভেবে নিই লোকটা কোন দল করে। আর না হয় তার সামাজিক মর্যাদা-অবস্থান কী। বিয়েশাদির সম্বন্ধ করতে গেলে তো আর কথাই নেই। সবই তো ভালো, ছেলে ভালো, চাকরি করে, স্বভাব-চরিত্র-বংশ সবই ভালো, দেখতে শুনতেও খারাপ না, কিন্তু মেরেছে তো ওই এক জায়গায়। ছেলের চাচা তো অমুক পার্টি করে।’ ব্যস, এখানেই কুল্লু খালাস। মেয়ের বাবা না হয় বড় মামা রায় দিয়ে দিলেন : অসম্ভব। ওই পার্টির লোকের ভাতিজার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে মেয়ে সারাজীবন আইবুড়ো থাকবে, তবু-।

১২.

বিয়ের কথায় মনে পড়ল। আমাদের দেশে মুসলমানের বিয়েতে হিন্দুদের এবং হিন্দুর বিয়েতে মুসলমানদের নিমন্ত্রণ জানানোর প্রথা আগে খুব প্রচলিত ছিল। এখনো আছে, তবে আগের মতো ঘটা করে নিমন্ত্রণ হয় না। আমার মনে আছে, ১৯৬৪ সালে সিলেটে আমাদের এক হিন্দু বন্ধুর বিয়ে হলো মালিনীছড়া চা-বাগানে। তার নাম ছিল খেলুবাবু (খুবই দুঃখের বিষয়, এই বন্ধুবত্সল, হাসিখুশি মানুষটি অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সে মারা যান। তার আত্মা শান্তিলাভ করুক)। তিনি ওই বাগানে চাকরি করতেন। তার বাবাও ছিলেন ওখানকার হেডক্লার্ক। খেলুবাবু আমাদের অর্থাত্ শিক্ষককুলের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সে সুবাদে আমরা দলবেঁধে গেলাম তার বিয়ে খেতে। গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। মুসলমানদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা হয়েছে। মুসলমান বাবুর্চির রান্না ভাজাভুজি, তরকারি, মাছ-মাংস মিলে গুনে গুনে বত্রিশ পদের আয়োজন। আহা, এখনো যেন সেই লাবড়া আর সেই শুকতোর ঘ্রাণ হাতের তেলোয়া লেগে আছে।

আমাদের পরিবারের আমাদের ভাইবোনের বিয়েতে আমার আব্বা-আম্মা তাদের সব হিন্দু বন্ধু-বান্ধব, দাদা-দিদি, কাকা-কাকীকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। তাদের খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্বে থাকতেন আমাদের কোন কাকাবাবু বা কাকীমা। সবচেয়ে বড় কথা, সব বিয়েতে আলাপ-আলোচনায়, যোগাড় যন্ত্রে আমাদের প্রতিবেশি হিন্দু কাকা-জ্যাঠারা স্বত:স্ফূর্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। আমার এখনোও মনে আছে, আমার মেজো বোনের বিয়ের সময় প্রতিবেশি কাকীমা-মাসীমারাও আমার মায়ের সঙ্গে চোখের জল ফেলে কনে বিদায় করেছিলেন। মরমী কবি শাহ আবদুল করিমের প্রাগুক্ত গানটি শুনে এমনি কি আর আমাদের চোখে পানি আসে।

১৩.

গোটা দেশটা এখন ঢাকা স্টেডিয়াম হয়ে গেছে। ঢাকা স্টেডিয়ামে যেদিন আবহানী-মোহামেডানের খেলা হয় সেদিন কানাও বুঝতে পারে পুরো স্টেডিয়াম দুই ভাগে বিভক্ত। দেশটাও হয়ে গেছে তেমনি।

ব্রিজ খেলায় কাগজে পয়েন্ট লেখা হয় ইংরেজিতে ‘উই’ (আমরা) এবং ‘দে’ (তারা) শিরোনামে। দেশবাসী সবাই এখন ব্রিজ (নাকি জুয়া?) খেলায় মত্ত; সবার কপালে হয় ‘উই’ না হয় ‘দে’ ছাপ মারা।

১৪.

আমাদের গুরুজনরা বলতেন, বাবা তাস খেলো না, তাসে নাশ।

প্রভু, তুমি আমাদের জাতিকে এই সর্বনাশা ‘তাস’ খেলা থেকে রক্ষা কর।

লন্ডন, ২০ অক্টোবর ২০০৪

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত