১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর এলাহাবাদে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতা মতিলাল নেহরুর পুত্রবধূ কমলা একটি সন্তানের জন্ম দেন। সামাজিক প্রথা অনুযায়ী কাঁসার থালা পিটিয়ে পুত্রসন্তান জন্মের ঘোষণা না দেওয়ায় মতিলালের স্ত্রী স্বরূপরানি উচ্ছ্বাস দেখাননি। কমলার স্বামী কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়ুয়া জওহরলাল নেহরু আবেগ চেপে চুপচাপ বসে ছিলেন। সদ্যোজাত কন্যাশিশুটির নাম মতিলালের মা ইন্দিরানির নামে রাখা হলো ইন্দিরা, পুরো নাম ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহরু। ইন্দিরানি ছিলেন অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, জেদি ও সাহসী মানুষ। ইন্দিরা প্রপিতামহীর স্বভাব পেয়েছিলেন।
ইন্দিরার বন্ধু ও জীবনীকার পুপুল জয়াকার একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। বাংলার ডাকাবুকো নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মতিলালের সঙ্গে দেখা করতে এলাহাবাদে এসেছেন। সঙ্গে তিন বছর বয়সী নাতি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। মতিলাল শিশু সিদ্ধার্থকে আদর করে একটা পুতুল উপহার দিলেন। ইন্দিরা ধারেকাছেই ছিলেন। একটা পিচ্চি বাইরে থেকে এসে দাদুর কাছ থেকে সুন্দর একটা পুতুল নিয়ে যাবে, পাঁচ বছর বয়সী ইন্দিরার এটা সহ্য হলো না। তিনি পুতুলটা খামচে ধরলেন। পুতুল নিয়ে দুই শিশুর টানাটানি চলল কিছুক্ষণ।
একসময় দেখা গেল, পুতুলের মাথা ইন্দিরার হাতে, ঠ্যাং সিদ্ধার্থের হাতে, শরীরটা হাওয়া। পুপুল এটাকে ইন্দিরা চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখিয়েছেন যে শিশুকাল থেকেই তাঁর মধ্যে একধরনের ‘পজেসিভনেস’ ছিল। যেটা করতে চাইতেন, প্রাণপণে সেটাই করতেন। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি পরে নানাভাবে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালে; যখন বাংলাদেশ একটা রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছিল এবং ইন্দিরা শক্ত হতে তা সামাল দিয়েছিলেন।
তরুণ কংগ্রেস নেতা ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর ইন্দিরা নামের সঙ্গে গান্ধী জুড়ে নিয়েছিলেন। ফিরোজের সঙ্গে তাঁর ঘরকন্না বেশিদিন টেকেনি। তবে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী নামটি তত দিনে বেশ প্রচার পেয়েছে। নেহরুর জীবদ্দশায়ই তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নেহরুর মৃত্যুর পর লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার গঠিত হলে ইন্দিরা ওই সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ইন্দিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁকে দুটো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রথমটি হলো কংগ্রেসের বৈরী জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৃন্তচ্যুত করে দলে ও পার্লামেন্টে নিজের অবস্থান মজবুত করা। ১৯৬৯ সালের মধ্যেই তিনি এ কাজে পুরোপুরি সফল হন।
এরপরের চ্যালেঞ্জটি ছিল ‘বাংলাদেশ’। একাত্তর সালের টালমাটাল সময়টা তিনি উতরে গেলেন প্রচণ্ড সাহস, ধৈর্য আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভাসন হলো, যার জন্ম-প্রক্রিয়ায় ইন্দিরার ভূমিকা ছিল ধাত্রীর। বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন তিনি।
এখন যে অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ, তা একসময় ভারতের পেটের মধ্যে ছিল। পরে তা ঢুকে যায় পাকিস্তানে। ভূরাজনৈতিক কারণেই ১৯৭১ সালে ভারত জড়িয়ে পড়ে, যা কিনা ছিল পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ’ রাজনৈতিক সংকট। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হলে বাঙালিরা এটাকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ছল হিসেবেই বিবেচনা করেছিল। ভারত তখনই নড়েচড়ে বসে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২ মার্চ তাঁর দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ দুজন হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসার এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব রামেশ্বরনাথ কাও। কাও একই সঙ্গে ছিলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর প্রধান। ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের ‘বাংলাদেশকে সাহায্য’ করার ব্যাপারে মূল্যায়ন করতে এবং ‘স্বাধীন বাংলাদেশকে’ স্বীকৃতি দেওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন (সূত্র: হাকসার পেপারস, ২ মার্চ ১৯৭১)।
ইন্দিরা ধরেই নিয়েছিলেন বাংলাদেশ নিয়ে একটা যুদ্ধ হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব এপ্রিলের শুরুতেই ইন্দিরার কাছ থেকে অভিযানের নির্দেশ পেয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল স্যাম মানেকশ টেলিফোনে জেনারেল জ্যাকবকে আক্রমণ শুরু করতে বলেছিলেন। জ্যাকব মানেকশকে বলেছিলেন, ‘অসম্ভব’। বাংলাদেশের নদী ও জলাভূমি ছিল অভিযানের জন্য বড় বাধা। জেনারেলরা প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হলেন, একটু অপেক্ষা করতেই হবে, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ইন্দিরা জেনারেলদের যুক্তি মেনে নিয়েছিলেন।
ইন্দিরা অবশ্য বসে ছিলেন না, ২৭ মার্চ ভারতের রাজ্যসভায় ‘পূর্ব বাংলার’ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আগ্রহী, কেননা আমরা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের যে মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, শ্রী মুজিবুর রহমানও তার পক্ষে। মানুষ তাঁর পেছনে এবং এই মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, এটা দেখে আমরা অভিভূত। সম্মানিত সদস্যদের কাছে আবেদন, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’ ৩১ মার্চ ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ‘পূর্ব বাংলা সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব’ সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘পূর্ব বাংলায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের অভ্যুত্থান সফল হবে। এই সভা আশা করে এবং নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে তাদের লড়াই ও ত্যাগ ভারতের জনগণের সর্বাত্মক সহানুভূতি ও সমর্থন পাবে (ইন্দিরা গান্ধী, ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ: সিলেক্টেড স্পিচেস অ্যান্ড স্টেটমেন্টস মার্চ টু ডিসেম্বর ১৯৭১)।’ এরপর থেকে ইন্দিরা নিরন্তর লড়ে গেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। একদিকে চলছিল সামরিক প্রস্তুতি, অন্যদিকে কূটনৈতিক যুদ্ধ।
আগস্ট মাসের ৬ তারিখ পাকিস্তানের জেলে বন্দী শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয় একটি সামরিক আদালতে। বিষয়টি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকার উভয়ের জন্যই ছিল উদ্বেগের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে ১১ আগস্ট ইন্দিরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে বার্তা পাঠিয়ে পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানান। তাঁর বার্তটি ছিল এ রকম:
আমরা আশঙ্কা করছি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার অজুহাত হিসেবে তথাকথিত বিচারকে ব্যবহার করা হবে। এর ফলে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং ভারতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর অনুভূতির কারণে ভারতেও এর চরম প্রতিক্রিয়া হবে। আমরা অনুরোধ করছি, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যেন একটি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন, সে জন্য আপনি তাঁর ওপর আপনার প্রভাব খাটান।’ (বি জেড খসরু, মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস: বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার)
বাংলাদেশের পক্ষে দূতিয়ালি করার জন্য ইন্দিরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে একটি সম্মানজনক সমাধান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে দেনদরবার করেছেন। এই পর্যায়ে নভেম্বরে তাঁর ওয়াশিংটন সফর ঠিক হয়। মার্কিন প্রশাসনের মনোভাবে অবশ্য কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। ইন্দিরা ও মুজিবের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা অধ্যাপক হেনরি কিসিঞ্জারের বিন্দুমাত্র আগ্রহ কিংবা শ্রদ্ধাবোধ ছিল না। ৪ ও ৫ নভেম্বর নিক্সন-ইন্দিরা বৈঠক হয়। নিক্সনের মনোভাব ছিল শীতল। দ্বিতীয় দিন সকালের বৈঠকের আগে ইন্দিরাকে প্রায় ৪৫ মিনিট বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য ইন্দিরা এই উপেক্ষা ও অপমান নীরবে হজম করেছিলেন।
২৫ মার্চ মাঝরাতে শুরু হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র পর্বটি ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে প্রচণ্ড গতি পায়। ৩ ডিসেম্বর খোলামেলাভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর সোমবার লোকসভায় একটি বিবৃতি দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী জানান, বাংলাদেশকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাঁর বিবৃতির অংশবিশেষ ছিল এ রকম: ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের বারবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, সতর্কতার সঙ্গে সবকিছু বিবেচনা করে ভারত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (গান্ধী, প্রাগুক্ত)।’ পরদিন মঙ্গলবার ৭ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশের ভারতবিরোধী লবি পরে একটা প্রচার চালিয়েছিল যে ভুটানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ইন্দিরার ‘কৃতিত্ব’ খাটো করে দেখানোর এই মানসিকতা এখনো দেখা যায়।
১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ইন্দিরা গান্ধী সুইডেনের একটি টেলিভিশনের কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। এমন সময় জেনারেল স্যাম মানেকশ তাঁকে টেলিফোনে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরটি দেন। ইন্দিরা দ্রুত চলে যান লোকসভায়। অধিবেশনকক্ষে তখন উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনা। এক লিখিত বিবৃতিতে ইন্দিরা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত রাজধানী।
এ যুদ্ধে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়েছিলেন। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একজন সাংবাদিক ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধে আপনার দেশ অনেক মূল্য দিয়েছে। বিনিময়ে ভারত কী পেয়েছে? এ প্রশ্নের জবাব ইন্দিরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসা র্যালফ চ্যাপলিনের একটি কবিতার চার লাইন উদ্ধৃত করে বলেন:
মোর্ন নট দ্য ডেড
বাট র্যাদার মোর্ন দ্য প্যাথেটিক থ্রং
হু সি দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেট অ্যাংগুইশ অ্যান্ড ইটস রং
বাট ডেয়ার নট স্পিক
(মৃতের জন্য কেঁদো না
বরং জমে থাকা ভুলের জন্য কাঁদো
জগতের সব দুঃখ আর অন্যায় দেখেও
কেন প্রতিবাদ করে না কেউ)
ইন্দিরা আরও বলেছিলেন, ‘ভারত কথা বলেছে কেবল বাংলাদেশের মানুষের জন্য। ভারতের জন্য নয় শুধু, দুনিয়ার সব নির্যাতিত মানুষের জন্য।...আমি আশা করব, মার্কিন প্রশাসন রাগ ভুলে সবকিছু নতুন করে দেখবে। (গান্ধী, প্রাগুক্ত) ।’
ইন্দিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিক্সন প্রশাসনের রাগ পড়েনি। এর আছর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের ওপরও পড়েছিল। সে আরেক ইতিহাস।
সবার ওপর দায়িত্ব
অশেষ দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যে বাংলাদেশের মানুষেরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, তা আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশে যা ঘটছে তার জন্য ভারতকে কোনোভাবে দায়ী করা হীন মনোবৃত্তির প্রকাশ। এটি বাংলাদেশের মানুষের মহান আকাঙ্ক্ষা ও স্বতঃস্ফূর্ত ত্যাগের প্রতি চরম অবমাননা এবং ভারতকে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর দুষ্কর্মের বলির পাঁঠা বানানোর সুপরিকল্পিত হীন চেষ্টা। এটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভাঁওতা দেওয়ারও একটি অপচেষ্টা। বিশ্বের গণমাধ্যম পাকিস্তানের এই ভাঁওতাবাজি দেখেছে। ভারতে এই কথিত অনুপ্রবেশকারীদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে এই হাউসে (লোকসভায়) আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির মতো অন্য কোনো বিষয় আমাদের এত আলোড়িত করেনি। গভীর সংকটময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই হাউসে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের গুরুত্ব অনুধাবন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টির সঙ্গে আমাদের আপামর জনসাধারণ এখন সম্পৃক্ত। আমাদের সবার ওপর এর দায়িত্ব এসে পড়েছে।
ভারতের লোকসভায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ, ২৪ মে ১৯৭১
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক; গবেষক
সূত্র: ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত