বিজ্ঞাপন
default-image

নয়া দিল্লি, ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১, ১৩৫৮ জেড

১৯২৮০, বিষয়: নিয়াজির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে মানেক শ’র সাড়া

১. প্রধানমন্ত্রীর সচিব হাকসার স্থানীয় সময় ১৮০০-এ ডিসিএমকে ডেকে এনে জেনারেল নিয়াজির প্রস্তাবের বিপরীতে জেনারেল মানেক শ’র লিখিত প্রতিক্রিয়া হস্তান্তর করেন।

২. হাকসার বলেন, ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র মারফতই নিয়াজির কাছে প্রতিক্রিয়া পাঠাচ্ছে; যেহেতু নিয়াজির মূল প্রস্তাবটি আমাদের মারফতই উত্তমভাবে তাদের কাছে গিয়েছে। তিনি এই প্রত্যুত্তরকে বর্ণনা করেন ‘সতর্কতার সঙ্গে বিবেচিত এবং আন্তরিক প্রতিক্রিয়া’ বলে। এবং জানান যে, ১৫ ডিসেম্বর ১৭০০ সময়ে বিমান আক্রমণও স্থগিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩. ভারত সরকার যে লিখিত বার্তাটি জরুরিভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে তা এই:

‘ভারতের সেনাবাহিনী-প্রধান জেনারেল মানেক শ’র পক্ষ থেকে জেনারেল নিয়াজিকে

প্রথমত, নয়াদিল্লিস্থ মার্কিন দূতাবাস মারফত আপনার পাঠানো বার্তাটি আমি গ্রহণ করেছি।

দ্বিতীয়ত, এর আগে পাঠানো দুটি বার্তায় আমি জেনারেল ফরমান আলীকে জানিয়েছিলাম, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, ক) বাংলা দেশে আমার কাছে আত্মসমর্পণকারী আপনার সকল সেনাসদস্য ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা; খ) যাঁরাই হোন না কেন, বিদেশি নাগরিক, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। যেহেতু আপনি ইঙ্গিত করেছেন যে যুদ্ধ থামাতে আপনি রাজি আছেন, সেহেতু আমি আশা করব আপনি আপনার কমান্ডের অধীন সকল বাহিনীকে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ জারি করবেন এবং যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, তারা যেন আমার অগ্রগামী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

তৃতীয়ত, আমি আপনাকে ঐকান্তিক আশ্বাস দিচ্ছি যে, যেসব ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করবেন তাঁরা সৈনিকের প্রাপ্য মর্যাদা ও সমীহ পাবেন এবং আমি জেনেভা কনভেনশনের বিধিমালা মেনে চলব। এ ছাড়া যেহেতু আপনাদের মধ্যে অনেক আহত আছেন, তাঁরা সুচিকিত্সা পাবেন এবং যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের যথাযথভাবে সমাধিস্থ করা হবে। যিনি যেখান থেকেই আসুন না কেন, নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিংবা আমার আদেশাধীন বাহিনীর দিক থেকে কোনোরকম প্রতিহিংসা ঘটবে না।

চতুর্থত, আপনার দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ামাত্রই আপনার বাহিনীর ওপর সকল বিমান ও স্থল আক্রমণ গুটিয়ে নিতে আমি পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল অরোরাকে নির্দেশ দেব। ইতিমধ্যে শুভবোধের নিদর্শন হিসাবে আজ ১৭০০ সময় থেকে সকল বিমান হামলা থামানোর নির্দেশ দিয়েছি।

পঞ্চমত, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, আপনার বাহিনীর অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিসাধন করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। মানুষের প্রাণনাশ আমি অপছন্দ করি। তা সত্ত্বেও, আমি আপনাকে যা বলেছি তা যদি মেনে চলতে ব্যর্থ হন, তাহলে ১৬ ডিসেম্বর ০৯০০ ভারতীয় মান সময়ে (সকাল ৯টা) সর্বাত্মক আক্রমণের পথ গ্রহণে বাধ্য হব।

ষষ্ঠত, দ্রুত সকল বিষয় নিষ্পত্তি করায় আলোচনার জন্য আজ ১৫ ডিসেম্বর ভারতীয় সময় ১৭০০ থেকে আমি দ্রুত লিসনিন্ট ওয়াচে রেডিও লিংক-এর ব্যবস্থা করেছি। এর ফ্রিকোয়েন্সি হবে দিনে ৬৬০৫ (৬৬০৫) কিলোহার্টজ এবং রাতে ৩২১৬ (৩২১৬) কিলোহার্টজ। বার্তাসংকেত হবে ক্যাল (ক্যালকাটা) এবং ডাক (ঢাকা)। আপনার প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনার সিগনালকর্মীদের দ্রুত মাইক্রোয়েভ যোগাযোগ স্থাপন করার নির্দেশ দিন।’

ডিসিএম আশ্বস্ত করেছেন যে হাকসারের বার্তা দ্রুত সঞ্চারিত হবে।

ধারণা করছি (মার্কিন পররাষ্ট্র) দপ্তর ঢাকা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাবে।

কিটিং

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঢাকাস্থ কনসুলেট জেনারেলকে মানেক শ’র বার্তাটি তাত্ক্ষণিকভাবে জেনারেল নিয়াজির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। কনসুলেট জেনারেল তা করেন, এবং ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাস সে-বার্তার একটি কপি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব সুলতান খানের কাছে পৌঁছে দেয়।

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত