বিজ্ঞাপন
default-image

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরিত চিঠিপত্র নিয়ে কোনো গবেষণামূলক কাজ বা চিঠিপত্রের সংকলন বিগত ৩৬ বছরে কেউ প্রকাশ করেছেন—এমনটি চোখে পড়েছে বলে মনে হয় না। বেশ কয়েক বছর আগে আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন চিঠিপত্র নিয়ে একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করা যায় কি না। এ বিষয় নিয়ে সংবাদ পত্রিকায় একটি লেখাও লিখেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী মানুষজনের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আর এগোতে সাহস করিনি।

আমার সংগৃহীত অনেক চিঠিই আজ আর পাওয়া যাবে না। ইঁদুর আর তেলাপোকা আমাকে মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে অনেকখানি! স্মৃতি হিসেবে এখনো ক’টি চিঠি বহন করে চলেছি। বিগত তিন যুগ ধরে মুক্তিযুদ্ধের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে আমার কাছে এসব চিঠি সমাজ ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন গুরুত্ববহ—তেমনি অতি পবিত্র আমানত বলেও মনে হয়েছে। চিঠিপত্রে যুদ্ধের নানা খবরাখবর যেমন আছে তেমনি আছে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, মান-অভিমান, ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও। এসব চিঠিতে সমাজের অনেক কঠিন কঠোর অপ্রিয় সত্য উঠে এসেছে, যা ইতিহাস রচনায় নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দেবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিঠিতে নিজের নাম ব্যবহার না করে সাংকেতিক নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন ‘বড় ভাই’, ‘ছোট ভাই’ ইত্যাদি। চিঠির মূল পাঠেও ব্যবহার করা হয়েছে নানা সাংকেতিক শব্দ। মুক্তিযোদ্ধারা এসব চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য। এসব চিঠির কয়েকটি অন্তত প্রথম আলোর পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে চাই। চিঠিগুলোতে বানান, বাক্য যেমন ছিল তেমনই রাখা হলো।

চিঠি: ১

মুক্তিযোদ্ধার নাম গিয়াস। ঢাকা বিভাগের কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে তিনি ১৭ জুলাই ১৯৭১ তাঁর কমান্ডারকে এ চিঠি লেখেন:

PAHARPUR

MURAD NAGAR

17/7/71

My dear Sir,

পত্রে আমার শ্রদ্ধা ও ভক্তিপূর্ণ ছালাম গ্রহণ করিবেন। আশা করি পরম করুণাময় আল্লাহ পাকের অনুগ্রহে কুশলেই আছেন। পর সমাচার এই যে গত ১৫/১৬ তারিখের রাত্রে ১টার সময় ইলিয়াটগঞ্জের দেড় মাইল পশ্চিমে পুটিয়া গ্রামের সামনে কুমিল্লা দাউদকান্দি রোডের উপর দুইটি A/T Mine দুইটি Ap/Mine লাগাইয়াছিলাম। ১৬ তারিখ ভোর ৮ ঘটিকার সময় পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন একখানা ওয়াপদার ট্রাক সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে প্রকাশ ঐ ট্রাকে একজন মিলিটারি এবং ২ জন রিজাকার বাহিনীর লোক ছিল এবং ড্রাইভারসহ আরো তিনজন সিভিলিয়ান শ্রমিক ছিল। তাহারা সবাই ঘটনাস্থলে মারা যায়। বিস্ফোরণের অনতিকাল বিলম্বে আমাদের নির্দ্দিষ্ট Hideout হইতে আমার বিশিষ্ট সহকর্মী নায়েক মোস্তফা কামাল ছদ্মবেশে ঘটনাস্থলের সম্ভাব্য নিকটবর্তী স্থানে পৌছে যায়। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে মোস্তফা কামাল দেখতে পাইলেন যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০টি মিলিটারি গাড়ি (কুমিল্লা হইতে দাউদকান্দিগামী) প্রায় পৌনে এক মাইল পর্যন্ত লাইন আপ হইয়া দাঁড়াইয়া ছিল। একটু পরেই একটা গাড়ি হইতে পাঁচজন নামিয়া নির্দ্দিষ্ট স্পট এর দিকে অগ্রসর হইতে ছিল। সামান্য কিছু অগ্রসর হওয়ার পরই তাহারা আমাদের A/p Mine এর উপর পড়ে যায় এবং ঘটনা স্থলেই তাহারা মৃত্যবরণ করেন। অতটুকু দেখার পরই মোস্তফা সে স্থান ত্যাগ করে চলে আসে। বাকী আর একটা A/p Mine সম্বন্ধে বিশেষ কোন সংবাদ পাওয়া যায় নাই। তবে যতটুকু পাওয়া গেছে তাহা পত্র বাহকের নিকট শুনে নিবেন। উপরোল্লিখিত ঘটনায় নিম্নরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। (১) গতকাল সারাদিন পাকবাহিনীর এক বিরাট দল সমস্ত রাস্তায় Mine Detector এর সাহায্যে তল্লাশী চালায়। (২) পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে মুক্তিবাহিনীর তল্লাশী করে। (৩) সারাদিনের জন্য civ. comm. বন্ধ থাকে। (৪) জনসাধারণ রাস্তায় চলাফেরা আর নিরাপদ মনে করে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ঢাকা চট্টগ্রামের উক্ত উল্লেখযোগ্য রোডের উপর স্বাভাবিক যানবাহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া পড়ে এবং (৫) মুক্তিবাহিনীর একটা বিরাট শক্তি এই এলাকায় পাকাপাকি মজবুত হইয়া আছে বলিয়া তাহাদের ধারণা।

এই মাত্র আমাদের বিশিষ্ট কর্মীর নিকট জানতে পারলাম যে, ভাষণ সাহেবের পার্টি যথাসময়ে ‘বাউসিয়া পুলে’র উপর বারুদ লাগানোর পর বিশেষ এক পদ্ধতিতে ঐটাতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু 1G Nition [?] ঠিক মতো কাজ না করার দরুণ বারুদে আগুন লাগে না। একটু পরেই স্থানীয় রেজাকারবাহিনী এবং চেয়ারম্যান এর সাহায্যে তাহারা পাক বাহিনীর আক্রমণের কবলে পড়ে। ভাষণ সাহেবের দলের তিন জন গুরুতররূপে আহত হয়। উক্ত তিন জনের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় বিশিষ্ট কর্মী। তাহার নাম আবদুল রেজ্জাক কোরাইশী। আপাতত: ভাষণ সাহেব আমার নিকট হইতে বেশ কিছুটা দুরে আছেন। প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এ পর্যন্ত সম্ভব হয় নাই। কাজেই ওনার পরবর্তী Plan সম্বন্ধে এই পত্রে কোন ধারণা দিতে পারলাম না।

গত ১০/০৭/৭১ ইং তারিখে আমার বিশেষ দুতের মারফতে আপনার নিকট একটি উল্লেখযোগ্য পত্র পাঠাইয়াছিলাম। দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত কোন জবাব পাই নাই। জানি না আমার প্রতি আপনার এই উদাসীনতা ইচ্ছাকৃত না অন্যকিছু। যাহোক, নিরুপায় হয়ে আজ আবার আমার দলের আলী আশরাফকে পাঠাইলাম। তাহার মারফত প্রয়োজনীয় নির্দ্দেশ পাঠাইবেন। তত্সঙ্গে আমাদের মে মাসের ১৫ দিনের এবং জুন মাসের বেতন। রাইফেলের তেল ও চিন্দো [?] নৌকাছাড়া এখানে চলাচল মোটেই সম্ভব নয়। অতএব সম্ভব অনুযায়ী নৌকাভাড়া, আরো দুইটি A/T Mine কিছু কাপড় ও ঔষধ, Pull Through (৩/৪টি) [পাঠাবেন]। টাকা পয়সার জন্য আমরা সীমাহীন দুঃখ কষ্ট ভোগ করিতেছি। উল্লেখযোগ্য যে বিগত প্রায় দেড় মাসে আপনার তরফ হইতে মাত্র ৫০ টাকা এবং সুবেদার রহমান সাহেবের তরফ হইতে মাত্র ৩১ টাকা মোট ৮১ টাকা পাইয়াছি। কাজেই অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জন্য টাকার ব্যবস্থা করিবেন। আল্লাহর রহমতে এবং আপনাদের আশির্বাদে দলের সবাইকে নিয়া আমি ভাল আছি।

ইতি

আপনার গিয়াস

চিঠি: ২

জামালপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ২ নম্বর দল ৮ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে আশেক মাহমুদ, সংঘা-১০কে লেখা চিঠি:

প্রিয় ভাইয়েরা,

আমাদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। তোমাদের আশ্রয়স্থলে পৌঁছানোর সংবাদ পাইয়াছি। তোমরা কেমন আছ। নির্দেশের ১, ২, ৩, ৪ নং ধারার কাজ (অর্থাত্ প্রথম ১০ দিন) কেমন করিয়াছ। কোন প্রকার সুবিধা অথবা অসুবিধা হইলে জানাইবা। তোমাদেরকে সর্ব প্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা করিব। আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তি দান করুন।

ইতি

তোমার ভাই

চিঠি: ৩

বড় ভাই,

আমার ভক্তিপুর্ণ ছালাম গ্রহণ করিবেন। পর সমাচার এই যে, আজ দীর্ঘদিন হয় আপনার কুশলাদি হইতে বঞ্চিত। আশা করি ভাল আছেন। আমরা খোদা চাহে ভাল আছি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পরপর দুইখানি পত্র আপনার কাছে পাঠাইয়াছি। সে পত্র পাইয়াছেন কি না জানি না। এখানে বেশ বৃষ্টি হইয়াছে যাহা ফসলের জন্য খুব ভাল। পরিমাণ মতো বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের অবস্থা ভাল। সব সময় বাড়ি থাকতে হয়। পানিও খুব গরম সেই জন্য প্রত্যেকখানে সাঁতার কাটা যায় না। এখানে নৌকাও পাওয়া যায় না। বোনদের সকলকেই যার যার শ্বশুরালয়ে পাঠাইয়াছি। প্রত্যেকেই স্বামীর সংসারের প্রতি মনোযোগী। কিন্তু একটি মাত্র বোনের কোন সংবাদ পায় নাই। যে বোনটি আপনার কাছে খুব পরিচিত ছিল। সে সংসারের কাজ করিতে চায় না। তবে আপনার দেওয়া ১, ২, ৩, ৪ নং কাজ কিছু কিছু হইয়াছে। বোনদের সংখ্যা কম, সে জন্য কাজ করা সময়ের প্রয়োজন। তবে নুতন বোনদের জন্য খুব চিন্তায় ছিলাম। চাঁন ভাইয়ের নিকট সকল সংবাদ পাইয়া সুখী হইয়াছি। নুতন বোনেরা খুব উদগ্রীব। সব সময় বোনদের কাছে গিয়া পয়সা চায়। কিন্তু সম্ভব না। তবে আশা করি তাড়াতাড়ি নুতন বোনদের একটা ব্যবস্থা করিবেন। নচেত্ খুব অসুবিধা হইবে। ফসলের অবস্থা ভাল। সে জন্য চাচারা ফসল দেখাশুনা করে। চাচারা মাঝে মাঝে এখানে সেখানে ঘোরাফেরা করে। যাহার জন্য বোনদের কাজের খুব অসুবিধা। কোন কোন নদীতে বেশ কুমীর দেখা যায়, যাহার জন্য খুব অসুবিধা হয়। এখন কুমীর আর ছোট নদীতে থাকে না। বড় বড় নদীতে চলিয়া যায়। রাস্তার অবস্থা খারাপ—সেজন্য বন্ধুর গাড়ী আসতে পারে না। সেজন্য রাস্তা ঠিক করার জন্য ইট আর সিমেন্ট (Mine) এর প্রয়োজন। তবেই বন্ধুর গাড়ী সুবিধা মতো আসতে পারবে। শরীর সুস্থ বলে চলাফেরা করিতে পারি। পত্র দেওয়া খুব অসুবিধা তাই পাঠাইয়া দিবেন। সকল প্রকার ব্যবস্থা করিয়াছি। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করিয়াছি। আর টাউন বাজারে কাজ করার জন্য Time Bomb-এর প্রয়োজন। দয়া করিয়া পাঠাইয়া দিবেন। আর রাস্তাঘাট ঠিক করার জন্য বাঁশের প্রয়োজন। ভাল করে মোরল বাঁশ পাঠাইয়া দিবেন। ইহার সঙ্গে যে জিনিসের প্রয়োজন তাহাও দিবেন। আর আমার জন্য কমপক্ষে ২০০ (দুইশত) মুরগীর দরকার। কারণ একটা মজলিস করতে হয়। নুতন বোনদের জামাই সাহেবরাও এখানে আসবে। সেই সঙ্গে পত্রে আপনাদের সকলের দাওয়াত রইল। আশাকরি উপহার হিসাবে পরিমাণ মতো ডিম নিয়ে হাজির হবেন। আর আমার এখানে সেখানে কাজ করতে হয়, একা একা চলতে হয়। তাই একটা বাচ্চা মুরগী পাঠাইয়া দিবেন।

ভাই, বড় আনন্দের কথা, বোনেরা শ্বশুরালয়ে গিয়ে আজ তারা প্রত্যেকেই শাশুড়ী বা গৃহকর্তা সেজেছে! তাই গৃহকর্তীর কাজ যাহাতে ঠিকভাবে চালাইতে পারে তার জন্য প্রত্যেকের বড় মুরগীর প্রয়োজন। কারণ এখন বাড়ীঘরে লোকের সংখ্যা বেশী। ছোট মুরগীতে আর হয় না, বড় মুরগীর খুব প্রয়োজন। দাদা যখন হয়েছেন তখন বোনদের আবদার আপনার পুর্ণ করতেই হবে। আসবার কালে যে টাকা দিয়াছিলেন তাহা প্রত্যেক বোনেরই শেষ। যদি দয়া করে কিছু পাঠান তাহা হইলে সুখী হইব। কারণ প্রত্যেকটা জিনিসের মুল্য খুব বেশী। দোয়া করিবেন খোদা যেন আমাদের কাজ করিবার শক্তি দান করে। পত্রে আপনার কল্যাণ কামনা করি।

ইতি-জয় বাংলা

আপনার ছোট ভাই

তাং: ৩১/১০/৭১ইং

N. B.

আমাদের ২ নং টিম খুব অসুবিধায় আছে।

যার জন্য Report দেওয়া সম্ভব হলো না। একদিকে চাঁনভাই-এর তাড়াতাড়ি অন্যদিকে নানা প্রকার ছেলেদের ঝামেলা। আমাদের নুতন ছেলে আনা নেওয়া কি চাঁন ভাইয়ের কাজ? তবে যাইহোক, আমার টিমের সমান করে সকল কিছু পাঠাইবেন। আর চান ভাইকে ভালভাবে বুঝাইয়া দিবেন। তবে বোনেরা সকলেই ভাল আছে। ওদের জন্যও সমান করে পাঠাইবেন। এত তাড়াতাড়ি Report আনা সম্ভব না। দোয়া চাই।

চিঠি: ৪

বড় ভাই,

আমার ভক্তিপুর্ণ ছালাম গ্রহণ করিবেন। পর সমাচার আমরা খোদা চাহে মঙ্গল মতো আছি। পথের মধ্যে আমাদের কোন অসুবিধা হয় নাই। করুণাময়ের কৃপায় সকলেই সুহালে পৌছিয়াছি। বোনেরা আমাদের সঙ্গে আছে। ছোট বোনদেরকে তাহাদের শ্বশুরালয়ে পাঠাইয়াছি। এবং আমরা আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়াছি। পথের মধ্যে অনেক জলা থাকার জন্য ডিমগুলি ভিজিয়া গিয়াছে। আর আমাদেরকে বলিয়াছিলেন যে, তোমরা পৌছিলে পরে সকল প্রকার ভিটামিনের সঙ্গে পরিচিত হইবে। কিন্তু বাজারে পাওয়া যায় না। খোদা চাহে আমরা সোনার বাংলার গাছ গাছরা দিয়ে তৈয়ার করে আপনাদের কাছে সেই ভিটামিন পাঠাইব।

আমরা চলার পথে একটি দুত তৈয়ার করিয়াছি। তার মারফত সকল কিছু আনা নেওয়া করিব। লোকটি খুব গরীব কিন্তু ভদ্র। আমাদের সঙ্গে যে লোকটি দিয়াছিলেন সে খুব Clever Person। আমাদের জন্য সে অনেক পরিশ্রম করিয়াছে। আশা করি লোকটির প্রতি দৃষ্টি রাখিবেন। আমরা যে লোকটিকে দুত হিসাবে বলিয়াছি তাহার নাম...।

আপনার ছোট ভাই

চিঠি: ৫

বড় ভাই,

আমার ছালাম গ্রহণ করিবেন। পর সমাচার এই, আজ দীর্ঘদিন হয় আপনাদের কুশলাদি হইতে বঞ্চিত। আশাকরি খোদার কৃপায় ভাল আছেন। আপনার প্রেরিত ছোট ভাই-এর কাছে দেওয়া সকল মিষ্টি পেয়েছি। আশাকরি মাঝে মাঝে এইভাবে পাঠাইবেন। আর আপনার দেওয়া কোরাণ শরীফ প্রত্যেক বোন পবিত্র রমজান মাসে শেষ করিয়াছে। নুতন বোনদের জন্য নাম তালিকা এখন দিতে পারলাম না। কারণ প্রত্যেক বোনের বাড়ী যাইতে হবে। সেজন্য পরে পাঠাব। বোনদের নদী পার হইতে হয়। সে নদীতে অনেক ভয়। তবে এখন কিছু ব্যবস্থা হইতেছে। নদীর পানি কিছু কিছু ঠাণ্ডা হইতেছে। গত পত্রে কিছু ফল আর কিছু মিষ্টির জন্য লেখিয়াছিলাম। উহার খবর কি? নুতন বোনেরা এখন খুব উত্গ্রীব। তাহা ছাড়া আত্মীয়স্বজন-এর বিশ্বাস থাকবে না আমাদের উপর। যদি বিশ্বাস না থাকে তাহা হইলে আমাদের চলা এবং খাওয়া দাওয়ার খুব অসুবিদা [অসুবিধা]। আমাদের দিকে লক্ষ করিয়া একটা ব্যবস্থা করিবেন। বাড়ীতে এখন আর কবুতর নাই। তবে বোনদের আবদার মিটাতে হবে। শোনলাম সেখানে প্রচুর কবুতর ও ঘুঘু পাওয়া যায়। দয়া করিয়া বোনদের শ্বশুরালয়ে পাঠাইয়া দিবেন। আর যদি মনে করেন ব্যবসা করিব। তবে এখান থেকে গরু ক্রয় করিয়া আপনার কাছে পাঠাইতে পারি। গরুর বাজার এখানে ভাল। নুতন মওলানা সাহেব এখানে এসে অনেক কিছু বলিয়াছে। Mr. Moon জনগণের কাছ থেকে অনেক জিনিষ নিয়াছে। এমন কি দুইটি অন্যায় কাজ করাইতে বাদ্য [বাধ্য] করেছে। যদি কাজ না করে চলে যেতে চাই [তাহলে] আমাদের জন্য কিছু টাকা পাঠাইবেন। প্রত্যেকটা জিনিষের মুল্য খুব বেশী। প্রত্যেকের টাকা শেষ। প্রত্যেকের শরীর সুস্থ। দয়া করি নুতন বোনদের জন্য একটা ব্যবস্থা করিবেন। আমার একটি বোনের সম্বন্ধে কোন কিছু জানি না। তার সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ নাই। সে বোনটি আপনার খুব পরিচিত ছিল। থানা চিটামিন [?] এখন খোঁজ করিয়া বাহির করিতে হইবে। তারপর সকল কিছু পাঠাইব। আজ প্রায় ৫ দিন যাবত্ শরীর খারাপ। জ্বরে ভুগিতেছি। দোয়া করিবেন খোদা যেন সুহালে রাখে। আপনার দেওয়া কাজ ভালভাবে করিতে পারি। শেষে আপনাদের কল্যাণ কামনা করি।

ইতি

আপনার ছোট ভাই

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৭ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত