বিজ্ঞাপন
default-image

৩১ মার্চ ১৯৭১ ভারতের লোকসভায় এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী

পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে লোকসভা গভীর উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা প্রকাশ করছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাত্ করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঠানো সমরসেনারা সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পাকিস্তানের জনগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। তার পরও পাকিস্তান সরকার জনগণের চাওয়াকে অগ্রাহ্য করেছে।

পাকিস্তান সরকার শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসিই করেনি, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় সংসদকে তার আইনগত ও সার্বভৌম ভূমিকা পালন করতে বাধা দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে নগ্নভাবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা হবে; বেয়নেট, মেশিনগান, ট্যাংক, আর্টিলারি ও বিমান আক্রমণের মাধ্যমে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।

ভারতের জনগণ ও সরকার সব সময় পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, স্বাভাবিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাতে চেয়েছে। ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যিকভাবে ভারত ও উপমহাদেশের জনগণ শত শত বছর ধরে সহাবস্থান করে আসছে। সে কারণে লোকসভা আমাদের সীমান্তের ওপারে এই মানবিক বিপর্যয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। আমাদের দেশের সব প্রান্তের মানুষ দ্ব্যর্থহীনভাবে এই নিরস্ত্র ও নির্দোষ মানুষের ওপর পরিচালিত এরূপ অভূতপূর্ব বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের গণতন্ত্রের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা গভীর সংহতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

শান্তির প্রতি ভারতের পক্ষপাত চিরকালের। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতেও আমরা বদ্ধ পরিকর। এই পরিপ্রেক্ষিতে লোকসভা অবিলম্বে রক্ষাকবচহীন মানুষের ওপর বলপ্রয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে। পৃথিবীর সব জনগণ ও সরকারের প্রতি লোকসভা আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন ত্বরিত্ ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পাকিস্তান সরকারকে অবিলম্বে এই গণহত্যাতুল্য প্রক্রিয়াবদ্ধ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে বাধ্য করে।

লোকসভা বিশ্বাস করে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই ঐতিহাসিক জাগরণ অবশ্যই সফল হবে। আমরা এসব মানুষকে আশ্বস্ত করছি, তারা তাদের সংগ্রাম ও ত্যাগে ভারতের সব জনগণের সহূদয় সমর্থন লাভ করবে।

বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বাদশ খণ্ড

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৪ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত