বিজ্ঞাপন
default-image

আমি প্লেনে ঢোকামাত্রই ইঞ্জিন স্টার্ট দিল। আমরা দমদম বিমানবন্দর থেকে আগরতলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হই। সেখানে আমরা বিমান পরিবর্তন করে সাত-আটটি হেলিকপ্টারযোগে রওনা দিই ঢাকার দিকে। আনুমানিক প্রায় সোয়া তিনটার সময় ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি। অবতরণ করার পর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর জেনারেল নিয়াজি এবং কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারী অভ্যর্থনা জানান জেনারেল অরোরা ও আমাকে। বিমানবন্দরে মাঝারি ধরনের ভিড় ছিল তখন। বিমানবন্দর থেকে আমরা জিপে করে রমনা রেসকোর্সে উপস্থিত হই। রাস্তার দুই ধারে ও রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ডের ওপর বহু মানুষ হাত তুলে এবং নানা প্রকার স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান আমাদের।

রেসকোর্সে এসে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের ভেতরেই একটি মাঝারি ধরনের সমাবেশ বিশাল জনসমাবেশে পরিণত হয়। সেই ময়দানে আনুমানিক বিকেল চারটায় জেনারেল নিয়াজি তাঁর দখলদার বাহিনীসহ আত্মসমর্পণ করেন। আনুষ্ঠানিকতায় একটু ত্রুটি থেকে গিয়েছিল, যেটি জেনারেল নিয়াজি ও জেনারেল অরোরাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সেটি হচ্ছে, জেনারেল নিয়াজির ব্যক্তিগত অস্ত্র খুলে মিত্রবাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া। এটিও সম্পন্ন করা হয়। এরপর জেনারেল নিয়াজি ও পাকিস্তানি উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর আমরা আবার বিমানবন্দরে ফিরে যাই। প্রায় সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরপরই ঢাকা বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে আগরতলায় পৌঁছাই। আমরা যে বিমানটিতে কলকাতা থেকে এসেছিলাম, সেই বিমানে করে কলকাতায় ফিরে যাই।

default-image

আমি যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমার একটিমাত্র অনুভূতিই ছিল। সেটি কোনো ব্যক্তিগত গৌরবের বা অর্জনের নয়, আল্লাহ তায়ালার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতার, যে আমি স্পর্শ করতে পেরেছি আমার স্বাধীন দেশের মাটি। আমরা যখন রমনা ময়দানের দিকে যেতে থাকি, তখন আমরা রাস্তার দুই পাশের বহু মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই মুক্তির আনন্দে আকুলভাবে কাঁদতে দেখেছি। তাদের মুখে যে অভিব্যক্তি ছিল, সেটি মুক্তির। একটি আতঙ্কিত অবস্থা থেকে একটি নিশ্চিত অবস্থায় উত্তরণের। রমনা রেসকোর্স ময়দানে অসংখ্য লোকের সঙ্গে আমাকে কোলাকুলি করতে হয়েছে। এর মধ্যেও ছিল মানুষের অনাবিল আনন্দ এবং স্বস্তির অভিব্যক্তি। বেশ কজন আমাকে সেদিন বলেছেন, ‘আজ রাত থেকে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমোব।’

ভোরের কাগজ, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৩

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১১ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত