বিজ্ঞাপন
default-image

লন্ডন, ১৬ জুন: গত রাতে শ্রমিক দলের ১২০ জন এমপি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য হাউস অব কমন্সে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। যাঁরা এ প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁদের অন্যতম লেবার পার্টির চেয়ারম্যান আয়ান মিকার্ডো। আর এর প্রধান উদ্যোক্তা জন স্টোনহাউস, যিনি গত এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঘুরে এসেছেন।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেসামরিক জনগণের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও ব্যাপক মাত্রায় নৃশংসতা চালিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলা শাসন করার অধিকার খুইয়েছে। অতএব, এ প্রস্তাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বানের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়—কারণ পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং তা গণহত্যা কনভেনশনের পরিপন্থী। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ব বাংলার মানুষের হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্বীকৃতি প্রদান করা হোক।

এই প্রস্তাবের পেছনে দুটি বিষয় কাজ করছে। হ্যারল্ড উইলসন যখন পাকিস্তানের ওপর বিতর্ক আহ্বান করলেন বিরোধী বেঞ্চ খালি থাকায় শ্রমিক দলের বৃত্তে অপরাধবোধ কাজ করেছে। দ্বিতীয়ত, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে শরণার্থীদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও সরকার ঝুঁকে পড়েছে পাকিস্তানি অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের দিকে— ইয়াহিয়া প্রশাসন জোড়াতালি দিয়ে একবার পূর্ব বাংলায় দাঁড়াতে পারলে হলো।

জাতীয় নির্বাহীদের দুটি সিদ্ধান্ত থেকে বাংলাদেশ প্রশ্নে শ্রমিক দলের সাহসী সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রধান সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ইস্যুটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে বলা, উ থান্টের ত্রাণ ভান্ডারে ব্রিটিশ অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর আবেদন এবং শরণার্থী সহায়তায় উদারভাবে ভারতকে সাহাঘ্য করা। শ্রমিক দল মনে করে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ায় ত্রাণ সাহাঘ্য অর্থবহ হবে না। সুতরাং পাকিস্তানের জন্য ভোগান্তি কমাতে সহায়তা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন এবং বিষয়টি পাকিস্তানের অন্যান্য দাতা কনসোর্টিয়ামকেও অনুরূপ বিবেচনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারকে ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি দুর্যোগ ত্রাণ কমিশন স্থাপনের দাবি জানানো।

যদিও বাংলাদেশ ব্রিটিশ শ্রমিক দলে সরাসরি অনেক মিত্র জোগাতে পেরেছে, ব্রিটিশ সরকার এতে কতটা প্রভাবিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। ব্রিটেনে এখন সবার আগ্রহ কমন মার্কেটের দিকে।

এই খবরের সঙ্গে পিটিআইয়ের যোগ করা শেষ সংবাদে সুইডেন, ইরাক, ইতালি, অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরি সম্মত হয়ে জানিয়েছে যে পূর্ব বাংলার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেন না।

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত