টাইমস অব ইন্ডিয়া (১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনের বিষদ খবর প্রকাশ করে। দুজন নারীসহ ২৩টি দেশের ৫০ জন বিদেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশগ্রহণের সম্মতি জানান। সম্মেলনের সভাপতি সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণ। অংশগ্রহণকারীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সমাজকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক মানের পণ্ডিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের মতামত রাষ্ট্রীয় মতামতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না-ও হতে পারে। অংশগ্রহণকারীদের যে তলিকা মুদ্রিত হয়েছে, তাতে রয়েছেন আমেরিকান ব্ল্যাক মুভমেন্ট নেতা বায়ার্ড রাস্টিন, সোশ্যালিস্ট পার্টির (নিউইয়র্ক) চেয়ারম্যান মাইকেল হ্যারিংটন, যুগোস্লাভ লিগ ফর পিস প্রতিনিধি পাভেল জেভরেমোভিক, ফ্রেঞ্চ লিগ ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান, সুদানের সাংবাদিক এল ওয়ালিদ ইব্রাহিম, লিবিয়ার ফরিদ সিয়ালা, ইন্দোনেশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মেদ রোয়েম, আফগান মিল্লাত -এর সম্পাদক কিউ হার্দাদ।
বেসরকারিভাবে জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিংহল, গায়না, নাইজেরিয়া, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, চেকোস্লোভাকিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা, বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্য অংশ নিচ্ছে।
খসড়া আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল—
ক. বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সেনাদল হটানোর জন্য আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গঠন।
খ. বাংলাদেশ সরকারকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান।
গ. বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান।
ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সাপ্রু হাউসে বাংলাদেশে ঘাতক সেনাবাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হলো। জয় প্রকাশ নারায়ণ বললেন, ভারতের বাইরে একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া অন্য কোনো দেশই বাংলাদেশে সামরিক শাসকেরা যে অপরাধ করেছে, তা অনুধাবনে সক্ষম হয়নি এবং পাকিস্তানের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেনি। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিমাংশের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ মুজিব কখনো বিচ্ছিন্নতার কথা ভাবেননি।
পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি ক্ষমতাগ্রাসী দল পূর্ব পাকিস্তানকে একটি উপনিবেশে পরিণত করেছে। তাদের নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও নিপীড়নের পর বাঙালিরা যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করে থাকে—তাদের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমি নিজে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের জায়গায় থাকলে এখন তারা যা করছে, আমিও তাই করতাম। স্পেনিশ গণযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর নেতা এবং বিশিষ্ট লেখক আদ্রে মালরো যে বাঙালি গেরিলা যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তিনি তাকে স্বাগত জানান। পশ্চিম পাকিস্তানের হিটলারিয়ান জান্তার কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষও পদানত বলে তিনি মনে করেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া (১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১), দ্য স্টেটসম্যান (১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড (২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) অনুসরণে ১৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব বাংলাদেশ’বিষয়ক নিবন্ধটি রচিত হয়েছে।
সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত