বিজ্ঞাপন
default-image

সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কদাচিৎ অন্য রাষ্ট্র জড়িয়ে থাকে—পূর্ব পাকিস্তান সংকটের বেলায়ও। ৪০ লাখ শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে। অনেক শরণার্থী-শিবিরে কলেরা মহামারি দেখা দিয়েছে—এ পর্যন্ত মৃত্যু আট হাজার। কলকাতায়ও এই মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত ‘সিল’ করে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেছে। এতে শরণার্থীর স্রোত বন্ধ হওয়ার বা কলেরার বিস্তার রোধের কোনো গ্যারান্টি নেই।

নয়াদিল্লি এ পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম। আর এ নিয়ে তারা কোনো রাখ-ঢাক করেনি। মিসেস ইন্দিরা গন্ধী তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ছয়টি দেশে সফরে পাঠিয়েছেন, যাতে বৃহৎ শক্তিগুলোকে বোঝাতে পারেন যে পূর্ব পাকিস্তান সংকট সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, এমনকি উপমহাদেশের শান্তির জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। পশ্চিমের সংবাদপত্র এবং ইউরোপ ও আমেরিকার রাজনৈতিক নেতাদের ধন্যবাদ যে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় কিছু সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। অক্সফাম কলেরা নিরোধ টিকা পাঠিয়েছে; সাহাঘ্য-সহযোগিতা মিশন নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়াল এয়ারফোর্স অপেক্ষা করছে। ওয়াশিংটনও ভারতে পরিবহন উড়োজাহাজ পাঠাচ্ছে, যাতে প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকা থেকে সুবিধাজনক জায়গায় শরণার্থী পরিবহন করা যায়। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞের ট্র্যাজেডি ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত সাহাঘ্য কি ভারত ও পাকিস্তান পাবে? উত্তর পাওয়া যাবে বর্ষা মৌসুমের আগামী সপ্তাহগুলোতে।

পাকিস্তান ব্যাপক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে, তবে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল সতর্কভাবে সাড়া দিচ্ছে। গত ঘূর্ণিঝড়ের পর যে সাহাঘ্য পাঠানো হয়েছে, তার সঠিক ব্যবহারে পাকিস্তানের অসামর্থ্য এবং আন্তর্জাতিক সাহাঘ্য সংস্থাসমূহকে অবাধে কাজ করতে দিতে সরকারের অনিচ্ছা—পাকিস্তানের ব্যাপারে সন্দেহ জাগিয়ে তুলেছে। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি এবং সামরিক প্রশাসকদের মধ্যে গভীর শত্রুতার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

এখন পাকিস্তান তার নিষ্ঠুর অভিপ্রায় কিছুটা ত্যাগ করেছে বলে মনে হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের দুজন প্রতিনিধি জাতিসংঘ ত্রাণ কর্মসূচির দাপ্তরিক ব্যবস্থা সমন্বয়ের জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন। এখন সময়ই হচ্ছে মুখ্য নিয়ামক। নৌযান ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ স্থানে পৌঁছানো যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দরে এখনো কাজের পরিবেশ ফিরে আসেনি। দ্রুত একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য ইসলামাবাদকে প্রভাবিত করতে হবে—নতুবা ভারতে শরণার্থী হিসেবে চলে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং যারা সেখানে রয়েছে, তাদের থেকে যেতেই হবে।

পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে, তাকে আর অভ্যন্তরীণ বিষয় বলার সুযোগ নেই। পূর্ব পাকিস্তান ইতিমধ্যেই একা কুলিয়ে উঠতে পারার ভণিতা ছেড়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। পুরো বিষয়টি ভারতের জন্য যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তার হুমকিও ভয়াবহ।

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত