৭ মার্চ ১৯৭১ সৃষ্টি করেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, যখন গোটা বাঙালি জাতি এককাট্টা হয়ে তাকিয়ে ছিল একজন মানুষের দিকে, যিনি টান টান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে জাতিকে দেখাবেন মুক্তির পথ। জাতীয় অধিকারের জন্য সূচিত অহিংস শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম সেই অনন্য ভাষণ ও প্রণোদনায় পরিণত হলো জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে। সময়ের দাবি মেটাতে বাঙালি জাতি এখন প্রস্তুত, প্রয়োজনে অহিংস সংগ্রাম রূপান্তরিত হবে সশস্ত্র প্রতিরোধে। এই বোধ ও প্রস্তুতি রাতারাতি কোনো জাদুবলে ঘটেনি, এর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ জীবনসাধনা—একাগ্র, সাহসী, দূরদর্শী এবং কখনো কখনো বেপরোয়াও বটে। জন-ইচ্ছার প্রতিফলনকারী গণরায় তিনি পেয়েছিলেন নির্বাচনের মাধ্যমে, তাই বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের রয়েছে শাসনতান্ত্রিক বৈধতা, অন্যদিকে সামরিক আঘাত মোকাবিলায় সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার বৈধতা রয়েছে নিপীড়িত জাতির। এই উপলব্ধির নিরিখে বিচার করলে বোঝা যাবে কেন বঙ্গবন্ধু আসন্ন সশস্ত্র আক্রমণের সব বার্তা পাওয়ার পরও নিয়েছিলেন অনন্য ও অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত, বরণ করলেন বন্দিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তানি কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট গৃহীত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমাকে পেলে ওরা আমার হতভাগ্য মানুষদের হত্যা করবে না। আমি জানতাম, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। আমি তাদের বলেছিলাম, প্রতি ইঞ্চিতে তোমরা লড়াই করবে। আমি তাদের বলেছিলাম, হয়তো এটাই আমার শেষ নির্দেশ। কিন্তু মুক্তি অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই তাদের করতে হবে।’
গ্রেপ্তার করে সামরিক জিপে তুলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। সেই রাতে তাঁকে আটক রাখা হয় তৎকালীন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, বর্তমান শহীদ আনোয়ার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে। পরদিন তাঁকে নেওয়া হয় ফ্ল্যাগস্টাফ হাউসে, সেখান থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিমানে করাচি নেওয়া হয়। করাচি বিমানবন্দরে পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশ কর্মকর্তার সামনের আসনে বসা বঙ্গবন্ধুর ছবি পরদিন সব দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়। এর আগে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সামরিক অভিযানের সাফাই গেয়ে জানালেন, ‘তিনি (শেখ মুজিব) এ-দেশের ঐক্য ও সংহতির ওপর আঘাত হেনেছেন—এই অপরাধের শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে। ১২ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে ক্ষমতালোলুপ দেশপ্রেমবর্জিত কতক মানুষ, সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। আমি সেনাবাহিনীকে আদেশ দিয়েছি তাদের কর্তব্য পালন এবং পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য।...আর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
পাকিস্তানে নেওয়ার পর কোথায় বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়েছে, তাঁকে নিয়ে কী করা হবে, এসব বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করে। বঙ্গবন্ধুকে বাংলার মাটি থেকে হাজার মাইল দূরের কারাকুঠরিতে বন্দী করে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনকে নাবিকবিহীন হালভাঙা নৌকায় পরিণত করতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা। কিন্তু লাখ মানুষের অন্তরে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি প্রথম মুহূর্ত থেকেই হয়ে উঠেছিল বিপুল, হয়তো প্রতীকীও। এই পরিচয় মেলে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার এ আর সিদ্দিকির স্মৃতিকথন ইস্ট পাকিস্তান দ্য এন্ডগেম গ্রন্থে। তিনি ৩০ মার্চের ঢাকার বর্ণনা দিয়েছেন যখন আর্মি জিপ নিয়ে শহর ঘুরে ফিরছিলেন নবাবপুর রোড হয়ে। তাঁর জবানিতে জানা যায়, ‘নবাবপুর রোড দিয়ে যাওয়ার সময় এক তরুণ আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল উদ্ভ্রান্ত, আমরা থামতেই সে চেঁচাতে শুরু করল। তার চেহারা-সুরত একেবারে ছন্নছাড়া। সে বলল, বাঙালিরা দৃঢ় পণ করেছে তারা শেখ মুজিবকে মুক্ত করবে, এ দেশকে স্বাধীন করবে। কিছুক্ষণ তার কথা শুনে আমরা আবার জিপে উঠলাম। এই অচেনা আগন্তুকের সঙ্গে বাদানুবাদ করে লাভ নেই, কারফিউ জারি করা এলাকায় সে এক নিঃসঙ্গ পথচারী মাত্র।’
ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকির মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের জের হয়তো রয়ে গিয়েছিল। তা না হলে এই উদ্ভ্রান্ত-প্রতিবাদী তরুণের প্রাণসংহারে পাকিস্তানি সেনাদের বিলম্ব ঘটত না। শহরজুড়ে কত লাশ তখন এমন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এরপর তিনি লিখেছেন, ‘চলে যেতে যেতে আমি যেন শুনতে পাচ্ছিলাম এই মানুষটির কণ্ঠ—সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা ও ক্রোধে উন্মত্ত—ডাক দিচ্ছে “পাঞ্জাবি” অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার। ধীরে ধীরে সেই আওয়াজ ক্ষীণ হতে লাগল, ক্রমে মিলিয়ে গেল শূন্যে। এই মোকাবিলা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার ভেতরে এক শীতল শিহরণ জাগাল।’
করাচি থেকে কালবিলম্ব না করে কঠোর গোপনীয়তায় বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় লাহোরের ৮০ মাইল দূরের লায়ালপুর শহরের কারাগারে। একাধিক কেন্দ্রীয় কারাগার থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে দূরবর্তী জেলা শহরের কারাগারে আটক করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে মানসিকভাবে পিষ্ট করা। সেদিক দিয়ে লায়ালপুর, বর্তমান ফয়সলাবাদ, যোগ্য স্থানই বটে; কেননা লায়ালপুর পাকিস্তানের উষ্ণতম স্থান, গ্রীষ্মে এখানে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ছাপিয়ে যায়, বন্দীদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। তদুপরি বঙ্গবন্ধুকে আটক রাখা হয়েছিল নিঃসঙ্গ সেলে, গরমে তেতে ওঠা সেই কারাকক্ষে কোনো পাখাও ছিল না।
পাকিস্তানি কারাগারে বঙ্গবন্ধুর আটক থাকার প্রথম স্বীকৃতি মেলে ১৯ জুলাই ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এ প্রকাশিত ছোট্ট খবরে। এরপর ৮ আগস্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সানডে টাইমস–এর সংবাদদাতা র্যালফ শ-কে জানান যে পশ্চিম পাকিস্তানের সর্বোচ্চ শ্রেণির কারাগারে আটক শেখ মুজিব জীবিত ও সুস্থ আছেন। ধৃষ্টতাপূর্ণভাবে জেনারেল ইয়াহিয়া আরও বলেন যে আজকের পর শেখ মুজিবের জীবনে কী হবে, সে বিষয়ে তিনি ওয়াদা করে কিছু বলতে পারেন না। ‘মুজিবকে কালকেই আমি গুলি করছি না’, এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদভাষ্যে ইয়াহিয়া খান আরও বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানি খাবারের কারণে শেখ মুজিবের স্বাস্থ্য সাময়িকভাবে খারাপ হয়েছিল, তবে এখন তাঁকে বাঙালি খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁর ওজন আবার বেড়েছে। তিনি হররোজ গালগপ্পো করেন, কথার তুবড়ি ছোটান।’ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ‘বিছানা, পাখা ও গরম পানির ব্যবস্থাসমেত ছোট ঘর তাঁর রয়েছে। দেখাশোনার জন্য একজন ডাক্তারও রয়েছে।’
এর কয়েক দিন আগে ১ আগস্ট পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ ইরানের কায়হান ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন নিয়ে বড় আকারে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ইরানি সংবাদদাতা আমির তাহিরি রাওয়ালপিন্ডির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর ঢাকা সফরের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। রিপোর্টে বিচার যে অত্যাসন্ন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশদ্রোহের অভিযোগে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ শাস্তি ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড।’
আমির তাহিরির রিপোর্টে আরও বলা হয়, ‘গুজব রয়েছে যে তিনি “উন্মাদ” হয়ে গেছেন এবং দিনে কয়েক ঘণ্টা ধরে অবোধ্য “ভাষণ” দিয়ে চলেন। তবে আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য রয়েছে যে এটা সত্য নয়। আওয়ামী লীগ নেতা সুস্থ আছেন এবং তাঁর ওপর অত্যাচার করা হয়নি।’
ইয়াহিয়া খানের বক্তব্য এবং আমির তাহিরির রিপোর্ট, উভয়ের মধ্যে সাযুজ্য রয়েছে। তাঁরা উভয়ে প্রত্যাশা করছিলেন শেখ মুজিব যেন পাগল হয়ে যান। কারাগারের বিরূপ পরিবেশ, দুঃসহ গরম ও সর্বোপরি নির্জন কারাবাস কারও মনোবল গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু বঙ্গবন্ধু সবকিছুই মোকাবিলা করলেন মনের অপরিসীম জোর এবং আপন ভাগ্য বিষয়ে নিস্পৃহতা নিয়ে। নির্জন কারাবাসের অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুর আগেও হয়েছিল। তবে তখন পূর্ব পাকিস্তানের কারাগারে নির্জন কারাবন্দীর পত্রিকা পাওয়া কিংবা মাসে এক-দুবার আত্মীয়-পরিজনের সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ ছিল। সেই সময়ের কষ্টকর অভিজ্ঞতার সামান্য ছায়াপাত মেলে বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা ডায়েরিতে, কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন, ‘লেখাপড়া করতে ইচ্ছা হয় না। সময়ও কাটে না, জেলে রাতটাই বেশি কষ্টের। আবার যারা আমার মতো একাকী নির্জন স্থানে থাকতে বাধ্য হয়—যাকে ইংরেজিতে বলে সলিটারি কনফাইনমেন্ট—তাদের অবস্থা কল্পনা করা যায় না।’
১৯ জুলাই যে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর আসন্ন বিচারের বার্তা প্রকাশ করল, তার নেপথ্যে ছিল একটি বড় আন্তর্জাতিক ঘটনা। ৬-৮ জুলাই মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার নয়াদিল্লি সফর করেন। এরপর পাকিস্তানে এসে অসুস্থতার ভণিতা করে পাকিস্তানি জেনারেলের দূতিয়ালিতে অত্যন্ত গোপনে হেনরি কিসিঞ্জার চীনে যান এবং মাও সে তুংয়ের সঙ্গে দেখা ও সলা-পরামর্শ করেন। চীন-মার্কিন ঐতিহাসিক আঁতাত নির্মাণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছিল মার্কিন প্রশাসন। পাকিস্তান-মার্কিন কূটনীতির বিপুল এই সাফল্য ইয়াহিয়া খানকে শেখ মুজিবের বিচারের প্রহসন ঘটাতে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। ১৭ জুলাই মার্কিন প্রশাসন হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন চীন সফরের বিবরণ প্রকাশ করে। এর দুই দিন পরই ইয়াহিয়া খান বার্তা দেন বঙ্গবন্ধুর বিচার অনুষ্ঠানের।
গোড়াতে সরকারের দিক থেকে প্রবীণ আইনজীবী এ কে ব্রোহিকে অভিযুক্তের পক্ষে মামলা পরিচালনায় নিয়োগ দেওয়া হয়। আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে ১২ দফা অভিযোগনামা পড়ে শোনানো হয়। এর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ, সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি বিভিন্ন অভিযোগ। ছয়টি অপরাধের জন্য শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। আদালতে ইয়াহিয়া খানের ২৬ মার্চ প্রদত্ত ভাষণের টেপ বাজিয়ে শোনানো হয়। সেই বক্তব্য শোনার পর বঙ্গবন্ধু আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশ নেওয়া এবং তাঁর পক্ষে কৌঁসুলি নিয়োগে অস্বীকৃতি জানান। ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে গোড়ায় এক উকিল দিয়েছিল। কিন্তু আমি যখন দেখলাম, অবস্থাটা এমন যে, যুক্তির কোনো দাম নেই, দেখলাম এ-হচ্ছে বিচারের এক প্রহসন মাত্র। তখন আমি কোর্টে নিজে দাঁড়িয়ে বললাম: জনাব বিচারপতি, দয়া করে আমাকে সমর্থনকারী উকিল সাহেবদের যেতে বলুন। আপনারা বিলক্ষণ জানেন, এ-হচ্ছে এক গোপন বিচার। আমি বেসামরিক লোক। আমি সামরিক লোক নই। আর এরা করছে আমার কোর্ট মার্শাল। ইয়াহিয়া খান কেবল যে প্রেসিডেন্ট তাই নয়, তিনি প্রধান সামরিক শাসকও। এ-বিচারের রায় অনুমোদনের কর্তা তিনি। এই আদালত গঠন করেছেন তিনি।’
গোটা বিচারকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কার্যত আদালতের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে ছিলেন। আদালতকক্ষে যা কিছু ঘটেছে, তা তিনি নিস্পৃহতা দিয়ে বরণ করেছিলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থন তো দূরের কথা, কোনো কার্যক্রমেই অংশ নেননি। এ ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদী প্রত্যাখ্যানের লড়াইয়ের আরেক প্রকাশ।
৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের কতক সামরিক বিমানঘাঁটি আক্রমণ করলে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। পরদিন ৪ ডিসেম্বর সামরিক আদালত বিচারের রায় ঘোষণা করে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। আদালতের কার্যক্রম শেষে তাঁকে নেওয়া হয় মিয়ানওয়ালি জেলে। সেখানে দণ্ডাদেশ কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়া হতে থাকে। যে সেলে তিনি ছিলেন, তার পাশে কবরও খোঁড়া হয়, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছিল। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং ৭ জনুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ ও বিজয়ী বীরের স্বদেশ ফেরা—সেসব তো আরেক ইতিহাস।
পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরুর আগে কায়হান ইন্টারন্যাশনাল লিখেছিল: ‘পাকিস্তানের রক্তাক্ত দুঃস্বপ্ন বিষয়ে তাঁর নিজস্ব ভাষ্য মুজিব এখনো দেননি। ইসলামাবাদে যখন তাঁর মামলা শুরু হবে, তখন কেবল কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন তিনি হবেন না, ইতিহাস দ্বারাও তাঁর বিচার হবে।’ মামলায় ঘোষিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ, আর ইতিহাসের রায়ে বিপুল মহিমা নিয়ে মৃত্যুদণ্ড নাকচ, তিনি অর্জন করলেন মুক্তি। তবে এই বিচারের ঘটনার অনেক পৃষ্ঠাই রয়ে গেছে অনুরুদ্ধারকৃত, অপঠিত, যেখানে লিপিবদ্ধ আছে বঙ্গবন্ধুর আরেক অনন্য সংগ্রামের ইতিকথা। সেসব তথ্যানুসন্ধান ইতিহাসের পাঠ গ্রহণের জন্য বিশেষ জরুরি।
মফিদুল হক: ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর