বিজ্ঞাপন
default-image

এবার দেশে এসে কোনো সাক্ষাত্কার দেব না—এটাই ঠিক করে রেখেছিলাম। এ লেখাটাও আসলে লেখা নয়। কথোপকথনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। প্রথম আলো থেকে আমাকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলব।

আমি দেশে থাকি না, তাই এই প্রশ্নের উত্তর আমার চেয়ে তারাই ভালো দিতে পারবে, যারা এখনো প্রতিদিন দেশে বসে নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। স্থানীয় মানুষ যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তোলে এবং সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো কাজ। যে অপরাধ ঘটেছে ১৯৭১ সালে, কেন তার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে না? যুদ্ধাপরাধ কখনো তামাদি হয় না।

আমি দেখেছি, ডিসেম্বর কিংবা মার্চ এলেই আমাদের গুটিকয় পরিবার নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়েছে, এ রকম পরিবারের সংখ্যা কম নয়। অবহেলিত সেসব পরিবারের কথা, অবহেলিত শহীদ সন্তানদের কথা, অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার কথা সেভাবে মিডিয়ায় উঠে আসে না। আমার মনে হয়, সেই অবহেলিত মানুষদের কথাই বেশি করে বলা দরকার, তাঁদের সামনে নিয়ে আসা দরকার।

একাত্তরে আমার পরিবারে যে ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে, সেই একই ট্র্যাজেডি ঘটেছে মুক্তিকামী লাখ লাখ পরিবারে। সব কাহিনী এক করে দেখলেই বোঝা যাবে, কত ভয়াবহ ছিল সে সময়টি, কত গর্বের ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার, হত্যার শিকার যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের প্রতিনিধিদের মাঝ থেকে উঠে আসা দাবিই আমাদের বলে দেবে, বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করবে কি করবে না। বিচ্ছিন্নভাবে গুটিকয় পরিবারের কথা মিডিয়ায় তুলে ধরে আসলে মূল কাজটা করা যায় না। অথচ এটাই বারবার ঘটে আসছে, যা আমি পছন্দ করি না।

১৯৯৪ সালে মৃত্যুর আগে আম্মার (জাহানারা ইমাম) দেওয়া শেষ নির্দেশটি এ ক্ষেত্রে স্মরণ করতে চাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ভার আম্মা দেশবাসীর কাছেই দিয়ে যান। আম্মার শেষ নির্দেশ ছিল এটাই। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি আম্মার শেষ নির্দেশের কথাই তাঁকে মনে করিয়ে দিই। আর, আশা করতে থাকি, দেশবাসী আম্মার শেষ নির্দেশের মূল্য দেবে।

অনুলিখন: জাহীদ রেজা নূর

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৮ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত