বিজ্ঞাপন
default-image

স্নায়ুযুদ্ধের কালে সোভিয়েত ইউনিয়ন দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাসখন্দে ওই দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনা সোভিয়েত নেতাদের মধ্যস্থতার ফল। তার পরের বছরগুলোতেও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় দেশকে নিজের প্রভাব বলয়ের মধ্যে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। পাকিস্তান মার্কিন শিবিরের অধিকতর ঘনিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৮ সালে মস্কো ও ইসলামাবাদের মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে সীমিত পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে রাজি হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ইস্পাত কারখানা নির্মাণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রদানের বিষয়ে একটি চুক্তিও করে। নানা দিক থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সুসম্পর্ক ছিল এবং তা আরও জোরালো করার লক্ষ্যেই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রয়াস।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে সোভিয়েত সরকার কঠোর ভাষায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। তার পর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ঢাকায় গণহত্যা শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় ২ এপ্রিল সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগোর্নি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে একটি চিঠি লেখেন: ‘ঢাকায় (রাজনৈতিক) সংলাপ ভেঙে গেছে এবং (আপনার) সামরিক প্রশাসন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এই সংবাদ সোভিয়েত ইউনিয়নে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।...আমরা অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও রক্তপাত বন্ধ করা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের পথ অনুসরণের জন্য জোরালো আবেদন জানাচ্ছি।’

লক্ষণীয়, ঢাকায় গণহত্যার ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করে এ নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। কিন্তু ভারতের পরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে। প্রেসিডেন্ট পদগোর্নির ওই চিঠির উত্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৫ এপ্রিল এক কঠোর বার্তা পাঠান। পাকিস্তানি লেখক হাসান জহিরের মতে, ইয়াহিয়ার সেই বার্তার ভাষা ছিল রুক্ষ ও কিছুটা অশালীন। তবে এটা স্পষ্ট যে ওই সময় পর্যন্ত মস্কো পাকিস্তানের অখণ্ডতায় পুরোপুরি আস্থাবান ছিল; বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নটি তাদের বিবেচনায় তখন পর্যন্ত আসেনি। কারণ, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন ও পার্টি প্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভের নেতৃত্বে মস্কো ভারত ও পাকিস্তানকে একই সঙ্গে কাছে টানার যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করে আসছিল, বাংলাদেশ প্রশ্নে সেই নীতি ঝুঁকির মুখে পড়ুক এটা সোভিয়েত নেতৃত্ব চাননি। তাই তাঁদের প্রাথমিক প্রয়াস ছিল পাকিস্তান সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানে গৃহীত সামরিক কৌশল থেকে ফিরিয়ে এনে সংকটের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে উত্সাহিত করা। ১৭ এপ্রিল সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে পাঠানো এক বার্তায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন সংকটের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ‘আইনসম্মত অভিপ্রায়’ পূরণের ওপর। কিন্তু পাকিস্তান সামরিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখলে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের মনোভাব বদলে যেতে শুরু করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা বিপুল সংখ্যায় স্বাধীনতাসংগ্রামে যোগ দিলে এবং ভারতের সহায়তায় সীমান্ত অঞ্চলে গেরিলা মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠলে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। কিন্তু এই সশস্ত্র বিরোধে মস্কো কোন পক্ষের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করবে তা তখনো পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূমিকা এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো মস্কোর বিবেচনায় ছিল। অবশ্য মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধযুক্ত ক্রমেই বেগবান হওয়া এবং ভারতের সংশ্লিষ্টতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত অবস্থানেরও গুণগত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তবে তারা এই সংকটের সঙ্গে সামরিকভাবে জড়িত হতে আগ্রহী ছিল না এবং ভারতকেও প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে ঠেকানোর লক্ষ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে নিয়ে যৌথ নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে আসছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ বাধলে তাদের সে পরিকল্পনা ভণ্ডুল হওয়া এবং পাকিস্তানের পক্ষে চীনের এগিয়ে আসার আশঙ্কা সোভিয়েত নেতাদের মনে প্রবলভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। অন্য দিকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নেও সোভিয়েতের উদ্বেগ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট নতুন দিল্লিতে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ২০ বছর মেয়াদি এক ‘শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত-সংশ্লিষ্টতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নতুন শক্তি সঞ্চার করে।

ওই চুক্তিতে বলা হয়, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনো কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা তা নিজেদের ওপর আক্রমণ বলে গণ্য করবে এবং পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে। এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। সেটা সোভিয়েত কর্তৃপক্ষকে জানাতে ইয়াহিয়া খান তাঁর পররাষ্ট্রসচিব সুলতান খানকে মস্কো পাঠান। ৬ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রোমিকো সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী চুক্তির কথা উল্লেখ করে সুলতান খানকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন নীরব থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ভারতে বাঙালি উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সে জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন; শেখ মুজিবের বিচার সমাঝোতার সহায়ক হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানকে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু পাকিস্তান পূর্ব ও পশ্চিম উভয় সীমান্তে সেনা সমাবেশ সম্পন্ন করে। ২২ অক্টোবর সোভিয়েত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাই ফিরুবিন দিল্লি সফরে আসেন। সফর শেষে সোভিয়েত-ভারত যুক্ত ঘোষণায় বলা হয়, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সঙ্গে পূর্ণরূপে একমত যে পাকিস্তান খুব শিগগির আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে পারে।’ ফিরুবিন ফিরে যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে সোভিয়েত বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল কুতাকভের নেতৃত্বে এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সোভিয়েত সামরিক মিশন দিল্লি রওনা হয়। ১ নভেম্বর থেকে আকাশপথে শুরু হয় ভারতের জন্য সোভিয়েত সামরিক সরবরাহ। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক পদক্ষেপ এড়িয়ে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণ সম্ভব, এই আশা তারা সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও ব্যক্ত করে। কিন্তু জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য দেশই ব্যাপারটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি এড়িয়ে যায়, তারা শুধু শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সাহায্যের কথা বলে। জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্টও বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের বিষয়টি এড়িয়ে যান। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব সীমান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরু করলে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ খুলে যায়। ভারতের পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় ফ্রন্টে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান তার পূর্বাংশ হারাতে চলেছে আর পশ্চিম পাকিস্তানও যে ভৌগোলিকভাবে অক্ষত থেকে যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। সে জন্য আমেরিকা সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতি শুরু করে। ৯ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সন মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। লক্ষ্য ছিল মুক্তপ্রায় বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পতন রোধের জন্য নৌ, বিমান ও স্থল তত্পরতা চালানো: বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌ-অবরোধ ব্যর্থ করা, পাকিস্তানি স্থলবাহিনীর তত্পরতায় সাহায্য করা, ভারতীয় বিমান তত্পরতা প্রতিহত করা এবং মার্কিন নৌ-সেনা অবতরণে সাহায্য করা। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র চীনকেও ভারতের সীমান্তে সেনা-সমাবেশের প্ররোচনা দিতে থাকে। কিন্তু চীন-সোভিয়েত সীমান্তে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল সেনা সমাবেশ ছিল বলে চীন মার্কিন প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়নি। আর মার্কিন সপ্তম নৌবহর আসার আগেই ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবহরের সমাবেশ সম্পূর্ণ হয়; তার আগে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের গতিবিধি জানার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন কসমস ৪৬৪ পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ উেক্ষপণ করে।

অন্য দিকে জাতিসংঘে পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বারবার ভেটো দিতে থাকে। তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি বরাবরের মতো এগিয়ে গিয়ে যুদ্ধবিরতি, উভয় দেশের সেনা প্রত্যাহার ও উদ্বাস্তু প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পোল্যান্ড পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাবসহ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। ফলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি অমীমাংসিভাবে ঝুলে থাকে।

১৩ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের সভায় জাতিসংঘে সোভিয়েত প্রতিনিধি ইয়াকভ মালিক যুক্তি দেখান, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে এই সংকটে শুধু পাকিস্তান ও ভারত নয়, বাংলাদেশও একটি পক্ষ। দেড় লাখ গেরিলা যোদ্ধা স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন, তাঁদের প্রতিনিধির বক্তব্যও শোনা উচিত। কিন্তু পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের বিরোধিতার কারণে মালিকের সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের দুই অংশেই প্রবল যুদ্ধ চলতে থাকে এবং পাকিস্তানের পরাজয় অত্যাসন্ন হয়ে ওঠে। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ব্যাপারে স্বভাবতই কালক্ষেপণের কৌশল নেয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বারবার ভেটো দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর বিজয়কে সুনিশ্চিত করে তোলে। এভাবেই ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় চূড়ান্ত হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতি যে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা দেখিয়েছে, তার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। এটা করতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দক্ষিণ এশিয়ায় তার ভারসাম্যের নীতি থেকে সরে আসতে হয়েছে এবং এ অঞ্চলে পাকিস্তানকে সে এক বড় শত্রু হিসেবে পেয়েছে, পরে যা আফগানিস্তানে সোভিয়েত অবস্থানের জন্য বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন শুধু ভূরাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত বিষয় ছিল না, একটি নৈতিক বিষয়ও ছিল। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় নির্বিচার গণহত্যা শুরু করলে মস্কো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল সেই নৈতিক বিবেচনা থেকেই; যুদ্ধের কোনো পর্যায়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী জনগণের ন্যায্য রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টিতে এক বিন্দু ছাড় দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণ সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন-সহযোগিতার কথা স্মরণ করে।

সহায়ক গ্রন্থ: মঈদুল হাসান, মূলধারা ’৭১ হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা

মশিউল আলম: কথাশিল্পী, সাংবাদিক

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৪ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত