বিজ্ঞাপন
default-image

দিনের পর রাত আসবে এটা যেমন সত্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি হস্তক্ষেপ না করে, তা হলে অক্টোবরে পূর্ব পাকিস্তানে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসবে, এটাও তেমনি সত্য।

বার্নার্ড বলেছিলেন, গত মাসে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল পূর্ব পাকিস্তান ঘুরে এসেছে। তারা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার কোনো লক্ষণই দেখেনি। জনগণ এখনো সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে, বসবাস করছে অবিশ্বাসের পরিবেশে। শ্রমিক ও সরকারি চাকুরেরা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। যোগাযোগব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।

সময় যতই গড়াচ্ছে, পরিস্থিতির ততই অবনতি ঘটছে। এর মধ্যেই ভারতে জমেছে পঁচাত্তর লাখ শরণার্থী এবং এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দুর্ভিক্ষের আরও বড় দুর্যোগ সামনে—এটাও বিশ্বাস করার যুক্তি কি?

পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উর্বর জমি হওয়া সত্ত্বেও প্রদেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি লেগেই ছিল। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে পশ্চিম ইউরোপ ও উভয় আমেরিকার মানুষ যেখানে গড়ে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ ক্যালরি শক্তির খাবার গ্রহণ করে থাকে, সেখানে এই প্রদেশের গড় এক হাজার ৭০০ ক্যালরি।

১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে এক কোটি আট লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে এবং ঘাটতি পূরণের জন্য ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়েছে। এই ঘাটতি তো রয়েছেই, প্রতিকূল অবস্থার কারণে ইউএসএআইডির ডক্টর রোহডের হিসাবে, চলতি বছর স্বাভাবিকের চেয়ে ২২ লাখ ৮০ হাজার টন কম উৎপাদন হবে। ১৯৪৩-এর মন্বন্তরের পর এই প্রথম পূর্ব পাকিস্তান এত বড় ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে। যদি অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে, সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের কারণে ত্রিশ লাখ লোকের মৃত্যু হওয়ার কথা।

১৯৭০ সালেই বিদেশ থেকে সর্বাধিক ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে। যদি পুরো ঘাটতি মেটানোর মতো খাদ্যও বন্দরে এসে পৌঁছায়, তা সব বুভুক্ষু মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না। চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরের কর্মক্ষমতা অনেক নেমে গেছে। শ্রমিকদের অনেকে পালিয়ে গেছেন। একদিকে সেনাবাহিনী, অন্যদিকে বিদ্রোহী—রাস্তাঘাট সব চলাচলের অযোগ্য। কাজেই অভুক্তের কাছে খাদ্য পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ রয়েই যাবে।

অগস্টের শেষ সপ্তাহে কানাডার টরোন্টোতে অনুষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থাসমূহের সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে তিনটি প্রস্তাব রাখেন—

ক. বিরোধী বিদ্রোহীরা খাদ্য সরবরাহে বাধা দেবে না বরং সহযোগিতা করবে।

খ. খাদ্য বিতরণ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রকৃত অভাবীদের মধ্যে হতে হবে।

গ. একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলকে পূর্ব পাকিস্তানে যেতে দিতে হবে, যারা চাহিদা নিরূপণসহ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

কিন্তু সময় অল্প। বিশ্ব সম্প্রদায় না জাগলে অবিশ্বাস্য আকারের মানবিক দুর্যোগ দেখার প্রস্ত্ততি এখনই নিক।

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত