বিজ্ঞাপন
default-image

বাল্টিমোর: পাকিস্তানের কার্গো জাহাজে অস্ত্র বোঝাই ঠেকাতে নৌকায় (ক্যানু ও কায়াক) জাহাজ আটকাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ছয়জন ফিলাডেলফিয়ান। এক রাত জেলে রেখে সতর্ক করে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের দলনেতা চার্লস খান বলেছেন, তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা কার্গো জাহাজ পদ্মা ফিলাডেলফিয়ায় পৌঁছালে মালামাল ওঠাতে আবার বাধা দেবেন।

১৪ জুলাই, ১৯৭১ চার্লস খানের সঙ্গে আর যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা হচ্ছেন সেজউইক স্ট্রিটের রিচার্ড টেইলর, পাইন স্ট্রিটের স্যালি উইলবি ও স্টেফানি হলিম্যান, উইলোজ এভিনিউর চার্লস গুডউইন এবং মেডিয়ার ওয়েইন লাউসার।

ওয়াশিংটন স্টারের সংবাদ

বাল্টিমোর (অসোসিয়েটেড প্রেস) পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ পদ্মাকে ডকে পণ্য ওঠাতে বাধা দিতে আজও বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, এই পাকিস্তানি জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বদেশে অস্ত্র ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ গত রাতে ছয়জন বিক্ষোভকারীকে জাহাজ ডকে আসতে বাধা দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছে ছিল তিনটি ক্যানু ও একটি কায়াক।

একজন কর্মকর্তা জানান, জাহাজের অবাধ চলাচলে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের নিজেদের নিরাপত্তা বিবেচনা করেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিতর্ক চলছে পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মায় বোঝাইয়ের জন্য যেসব মালামাল মজুদ রয়েছে, তা তোলা হবে কি না।

ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক লং শোরম্যান অ্যাসোসিয়েশন তাদের বাল্টিমোর শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন জাহাজে মাল তোলা না হয়। কারণ প্রতিবাদকারীরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এই জাহাজে করে পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে পাকিস্তানি জাহাজের যুক্তরাষ্ট্রীয় এজেন্ট জানিয়েছে, এই মালবাহী জাহাজে কোনো সামরিক সরঞ্জাম নেই। ১৩ জন বিক্ষোভকারীর একজন কেবল পাকিস্তানি। শহরের অফিসপাড়ায় জমায়েত হয়েছে—জাহাজযোগে পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর প্রতিবাদ জানাতে। ১৫ জুলাই, ১৯৭১ বাল্টিমোর শহরে ক্যালভার্ট অ্যান্ড রেডউড স্ট্রিটে কেয়সার ভবনের সামনে এই বিক্ষোভ—ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সির বিরুদ্ধে হলেও মূলত বিক্ষোভ গোটা আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে। এই এজেন্সি আসলে হ্যান্ডলিং এজেন্ট। ১৭ জুলাই বিকেলে পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ পদ্মা কভিংটন বন্দর টার্মিনালে আসছে, তারই ব্যবস্থাপনার ভার এই এজেন্সির।

অস্ত্রবোঝাই পাকিস্তানি জাহাজে মাল তুলতে ডক ইউনিয়নের অস্বীকৃতি

পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ পদ্মা আজ বাল্টিমোর থেকে মোবাইল যাত্রা করার কথা—অস্ত্র নিয়ে জাহাজটি স্বদেশে যাত্রা করেছে। আজ এখানকার ‘লং শোরম্যান’রা এই জাহাজে মাল বোঝাই করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পাকিস্তানের গণযুদ্ধে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্যই তাদের এ সিদ্ধান্ত। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে, দুই লাখ পাকিস্তানি নিহত হয়েছে এবং ষাট লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে জাহাজের মালিক ন্যাশনাল শিপিং কোম্পানি অব করাচির এজেন্ট ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি ফেডারেল মেরিটাইম কমিশনকে টেলিগ্রাম করে জানিয়েছে, লং শোরম্যানদের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। টেলিগ্রামে কমিশন চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, জাহাজে ৯ লাখ ২৪ হাার ৩২৯ ডলার মূল্যের জাহাজের যন্ত্রাংশ; এক লাখ ৮৪ হাজার ১৮৭ ডলার মূল্যের সামরিক যান যন্ত্রাংশ; ২৫ হাজার ৪১৭ ডলার মূল্যের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ; ৪৫ হাজার ১১৭ ডলার মূল্যের যানবাহন যন্ত্রাংশ এবং দুই হাজার ৮৩০ ডলার মূল্যের গোলন্দাজ যন্ত্রাংশ রয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে এতে দুই হাজার ২০০ রাউন্ড ২২ ক্যালিবার গোলাবারুদ বোঝাই করা হয়েছে। এই মালবাহী জাহাজটি মন্ট্রিয়েল থেকে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ স্যাবর জেটের ৪৬ বাক্স খুচরা যন্ত্রাংশ ওঠাবে। তবে কানাডা সরকার এই মাল উত্তোলনে বাধা দিয়েছে।

ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল নামের ফিলাডেলফিয়া-ভিত্তিক একটি সংস্থার ৩০ জন সদস্য তাঁদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

জাহাজ আটকানোর অপরাধে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়েছেন। দ্য ইভনিং বুলেটিন ফিলাডেলফিয়া জানিয়েছে, ক্যানু ও ক্যায়াকযোগে পানিতে নেমে জাহাজ আটকানোর চেষ্টা করার অপরাধে গ্রেপ্তারকৃত ছয়জন কারামুক্তি লাভ করেছেন।

দলনেতা চার্লস খান বলেছেন, অস্ত্রবাহী জাহাজটিকে তাঁরা পুনরায় ফিলাডেলফিয়ায় আটকাতে চেষ্টা করবেন।

নিউইয়র্ক বন্দর থেকে ছেড়ে আসা এই জাহাজের গন্তব্য পাকিস্তানের করাচি বন্দর—কয়েক সপ্তাহ ধরে এই জাহাজ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। অভিযোগ উঠেছে, এই জাহাজে পাকিস্তানে অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছে, সিনেটে এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। একজন সিনেটর এই মালবাহী জাহাজের মালামাল প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

১৬ জুলাই, ১৯৭১ বাল্টিমোর সান জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইতিপূর্বে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তবে পুরোনো ক্রয়ের অংশবিশেষ পাঠানো না হয়ে থাকলে তা জাহাজে উত্তোলন করা যাবে। সিনেটে খোলামেলাভাবেই বলা হয়েছে, পাকিস্তান মার্কিনি অস্ত্রের প্রয়োগ করছে নিজ দেশের মানুষের ওপর, পূর্ব পাকিস্তানে। পাকিস্তান সরকার বাহ্যত বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটি বিদ্রোহ ধামাচাপা দিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা লড়াই চলছেই।

শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ১৯৭১: ফিলাডেলফিয়ার দ্য ইভনিং বুলেটিন পত্রিকার সংবাদ

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত