বিজ্ঞাপন
default-image

সিনেটর কেনেডির সাত দফা

ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো প্রতিবেদনটি নয়াদিল্লির টাইমস অব ইন্ডিয়া য় নভেম্বর ১৯৭১ প্রকাশিত হয়। মূল প্রতিবেদনের শিরোনাম পূর্ব বাংলার জন্য মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির সাত দফা।

সিনেটে শরণার্থীবিষয়ক জুডিশিয়ারি সাব কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি নিক্সন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রেডক্রস আন্তর্জাতিক কমিটির প্রতিনিধিদের শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার জন্য, যেন পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।

কেনেডি বলেন, ইসলামাবাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর প্রতীকী নেতৃত্ব শেখ মুজিবের এই সংকটের যেকোনো রাজনৈতিক সমাধানে তার প্রতি ন্যায়বিচার ও তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার গুরুত্ব সর্বাধিক। পূর্ববাংলা ও ভারতের সংকট নিয়ে সিনেটর কংগ্রেসের যে সাতটি সুপারিশ করেন এটি তার একটি, যা গতকাল (১ নভেম্বর ১৯৭১) পেশ করা হয়।

অপর সুপারিশগুলো হচ্ছে—

১। দক্ষিণ এশিয়ার সংকটের মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে খতিয়ে দেখতে হবে।

২। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে।

৩। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সাহাঘ্যের পরিমাণ অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে।

৪। স্টেট ডিপার্টমেন্টের আওতায় প্রেসিডেন্টকে একটি মানবিক ও সমাজসেবা ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫। জাতিসংঘের জরুরি সেবা কার্যক্রম প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ সমর্থন জোগাতে হবে।

৬। পূর্ব বাংলার ট্র্যাজেডি অবশ্যই জাতিসংঘের সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে তা অন্তভু‌র্ক্তির বর্তমান প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহিত করতে হবে।

কেনেডি বলেন, ভারতে শরণার্থীর অব্যাহত বিশাল জোয়ার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের হুমকি সহিংসতা ও দাবিয়ে রাখার নীতি পাকিস্তান অনুসরণ করছে পূর্ব বাংলার মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে এটাকে তুচ্ছজ্ঞান করছে ইসলামাবাদ সেনা সরকারের সংবেদনশীলতার প্রতি আনুগত্যের কারণে।

default-image

এন্ডমন্ড মাস্কির চার দফা

ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এখন বিচার করার সময় নয়। এখন সময় যুদ্ধ শেষ করার, পূর্ব বাংলার মানুষের ভোগান্তি শেষ করার। যুধ্যমান এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপন করার। এই ভূমিকা দিয়ে সিনেটর মাস্কি (ডেমোক্র্যাট এই সিনেটর জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন)। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চার দফা বাস্তবায়নের ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান:

১। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং পশ্চিম সীমান্ত থেকে ভারত ও পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার।

২। পূর্ব বাংলা থেকে অবিলম্বে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানে সেনা প্রত্যাহার এবং শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জাতিসংঘ শান্তিসেনা মোতায়েন; তারা একই সঙ্গে শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করবে।

৩। পশ্চিম পাকিস্তানি কতৃ‌র্পক্ষ অবিলম্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেবে। ১৯৭০ সালের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি ও অন্যদের নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল লিডারশিপ গ্রুপ তৈরি করবে।

৪। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধি বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বাইরে সমান অবদান থেকে দুই সত্তা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।

এডমন্ড মাস্কির প্রস্তাব যখন আসে তত দিনে পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কথিত চরম নিরপেক্ষতারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন—

প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন বড় গলায় ‘চরম নিরপেক্ষতা’র কথা বলছেন আর পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলায় চালাচ্ছে অবিরাম হত্যাকাণ্ড তখন আমেরিকার বন্দরে পাকিস্তানের সওদাগরি জাহাজে বোঝাই করা হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, পাকিস্তান যখন পূর্ব বাংলায় গণহত্যা অব্যাহত রাখল আর ভারতে পাঠাল প্রায় এক কোটি শরণার্থী আমরা তখনো পাকিস্তানকে আর্থিক সাহাঘ্য করা বন্ধ করতে পারলাম না—এটা কি চরম নিরপেক্ষতা?

ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র যখন ভারতকে বলল, ‘আগ্রাসী’ সেটা কি চরম নিরপেক্ষতা?

সাহাঘ্যের প্রতিশ্রুতি পাকিস্তানের বেলায় বহাল রেখে ভারত থেকে প্রত্যাহার করা কি চরম নিরপেক্ষতা?

আমরা যখন কেবল যুদ্ধ বিরতির কথা বলব আর সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলায় কি করেছে সেটা ভুলে যাব তা কি চরম নিরপেক্ষতা?

এডমন্ড মাস্কি বলেন, আসল সমস্যা পূর্ব বাংলার ভবিষ্যৎ। সেখানকার মানুষ যদি একটি নিশ্চিত ও ন্যাঘ্য ভবিষ্যৎ দেখতে না পায় তাহলে এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়।

default-image

লর্ড ব্রকওয়ের ছয় দফা

ব্রিটিশ লর্ডস সভার সদস্য ব্রিটেনে ঔপনিবেশিক মুক্তি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে ৪ এপ্রিল ১৯৭১ উন্মুক্ত জনসভায় বলেন, তিনি তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন বাংলায় এবং নিজেকে সব সময় বাংলার বন্ধু হিসেবে শনাক্ত করে থাকেন। ইতিহাস খতিয়ে দেখলে অবশ্যই বলা যাবে স্বাধীন পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে ব্রিটিশদের এমন কোনো ইচ্ছে ছিল না যে পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে থাকবে। পূর্ব বাংলায় যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে তিনি অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানান।

লর্ড ব্রকওয়ে ছয় দফা দাবি পেশ করেন।

১। পূর্ব বাংলার দুর্গতদের জন্য এখনই কার্যকরী ত্রাণ পাঠাতে হবে।

২। সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে গুলি বন্ধের আদেশ দিয়ে পূর্ব বাংলা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

৪। অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকে স্বাধীনভাবে জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ভার নির্বাচিত গণপ্রতিনিধির হাতে তুলে দিতে হবে।

৫। পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি বিবেচনা করে অবিলম্বে জাতিসংঘের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

৬। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে কমনওয়েলথ সম্মেলনে সিঙ্গাপুর ঘোষণায় পাকিস্তানও সম্মতি দাতা দেশ। ব্রিটেন, কানাডা, ভারতের মতো জ্যেষ্ঠ কমনওয়েলথ সদস্য দেশ সক্রিয় থেকে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার ঘটনা তুলে ধরার জন্য ঘটনা অনুসন্ধানী দল—ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠাবে।

নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি উত্থাপনের ভারতীয় প্রস্তাবের প্রতি লর্ড ব্রকওয়ে জোর সমর্থন প্রদান করেন।

default-image

পিটার শো বললেন পাকিস্তানকে আর সাহাঘ্য নয়

লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা স্টেপনি থেকে নির্বাচিত শ্রমিকদলীয় এমপি প্রথম থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে বলে যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্যের ওপর ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ লন্ডনের দ্য টাইমস -এর প্রতিবেদন:

স্টেপনির শ্রমিক দলের এমপি পিটার শোর মনে করেন ব্রিটিশ সরকার কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে পাকিস্তানকে যে সাহাঘ্য দিয়ে থাকে কিংবা সরাসরি যে অর্থনৈতিক সাহাঘ্য দিয়ে থাকে তা পুনরায় চালু করা ঠিক হবে না। স্টেপনির বিশপ রেভারেন্ড ট্রেভর হাডলস্টোনকে নিয়ে এক সপ্তাহের দিল্লি ও পশ্চিম পাকিস্তান সফর শেষে পররাষ্ট্র সচিব (মন্ত্রী) স্যার এ্যালেক ডগলাস হিউমকে বলেছেন পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের স্বীকার করা প্রয়োজন যে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সব ক্ষমতা গুটিয়ে ফেলার সময় হয়ে গেছে—আর এই লক্ষ্যে আর্থিক অসহযোগিতার চাপ দিতে ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ জানান।

পিটার শোর গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) বলেন, ব্রিটিশ সরকার এ পর্যন্ত সন্তোষজনক ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু অক্টোবরে কনসোর্টিয়াম সাহাঘ্য পুনরায় শুরু করবে কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পশ্চিম পাকিস্তান সরকার এই সাহাঘ্য লাভের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে লোক দেখানো ঘষামাজা করছে। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে আমরা যেন এতে বিভ্রান্ত না হই।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আমাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা দরকার। কারণ পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের ওপর তাদের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। যদিও কংগ্রেস চাপ দিয়ে যাচ্ছে আমেরিকান নীতির কোনো নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না।

সিনেটর কেনেডির ভারত সফরের পর কংগ্রেসের চাপ বেড়েছে, আমি আশা করি সেখানকার জনমতও ব্রিটেনের মতই ঘুরে যাবে।

পিটার শোর বলেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে পাকিস্তান ভেঙে গেছে। শুরু থেকেই তাদের ব্যবধান হাজার মাইলের। এখন রাজনৈতিক লক্ষ্য ও জনসাধারণের চাওয়া বিবেচনায় আনলে ব্যবধান বেড়েছে আরও হাজার মাইলের। মোট কথা দুই অংশের বন্ধন ভেঙে গেছে এবং টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেভাবে শরণার্থী বের হয়ে যাচ্ছে—এখন মাসে ১০ লাখের কাছাকাছি, আমি মনে করি না কোনো ধরনের চাপ—এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের স্বেচ্ছাচারী বল প্রয়োগ পাকিস্তানের দুই বিচ্ছিন্ন অংশকে একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায়ে পরিণত করতে পারবে না।

সফরকালে পিটার শোর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি জানান, পশ্চিম পাকিস্তান সরকার যদি এখনই পূর্ব পাকিস্তান থেকে ক্ষমতা গুটিয়ে না নেয় তাহলে আরেকটি তিক্ত ও নিয়ন্ত্রণবহিভূ‌র্ত গণযুদ্ধের সূচনা হবে, যাতে অনেক জাতি জড়িয়ে পড়তে পারে।

default-image

রাসেল জনস্টোনের আবেদন

৩১ মার্চ ১৯৭১ রাসেল জনস্টোন ব্রিটিশ কমন্স সভার সদস্য যে বিবৃতি দিয়েছেন—

আমরা আতঙ্কের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে আসছি। যদিও স্পষ্ট প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও সংবাদগুলো অনেক সময় পরস্পরবিরোধী দুটি বিষয় কিন্তু অনস্বীকার্য—

প্রথমত, অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবি পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতা।

দ্বিতীয়ত, এই স্বাধীনতা দাবির কারণে পাকিস্তান সরকার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সেনাবাহনীকে অত্যাচার-নির্যাতনে নিয়োজিত করে—প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণী অনুযায়ী সেনাবাহিনীর নৃশংস ও নির্বিচার বর্বতায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক ব্যক্তি খুন হয়।

এ ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যা (জলোচ্ছ্বাস) বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সহানুভূতি জাগিয়েছে; বর্তমান অবস্থায় ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে না পারলে দুর্গতদের যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠবে।

যা ঘটছে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার—এ যুক্তিতে ব্রিটেন অনড় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে; আমি বিশ্বাস করি না। আমরা প্রত্যক্ষ করছি মন্দের দিক থেকে অসহনীয় বর্বরতা কত মর্মান্তিক হতে পারে আর ভালোর দিক থেকে রাজনৈতিক হিসেবে বড় ভ্রান্তি কেমন করে সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। কমনওয়েলথের জ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে সমাধান খুঁজে পেতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্রিটেনের সামনে খোলা সব পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব ব্রিটেনের ওপরই বর্তায়।

default-image

অর্থার বটমলে

ব্রিটিশদের থেকে শিক্ষা নিন: অর্থার বটমলে

ব্রিটিশ শ্রমিক দলের এমপি আর্থার বটমলের ২৮ আগস্ট ১৯৭১ তারিখের বক্তব্য: আমি চাই পাকিস্তান ও ভারত পরস্পরের নিবিড় সান্নিধ্যে আসুক। আমার আশা এ দুটি দেশ আবার এক হোক। আমি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছি আমাকে যেন এ ভুল বোঝা না হয়; আমি কেবল আমার আশার কথা বলেছি। ভারত উপমহাদেশের আর ভাগাভাগি আমি চাই না—কারণ এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশাল, পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতে ভারত উপমহাদেশ অনেক উচ্চমানের—আধুনিক বিশ্বে উন্নয়নের জন্য এটাই তো চাই। আরও ভেঙে গেলে সম্পদের সঠিক বিনিয়োগ হবে না।

সামরিক বাহিনীকে যদি সেখানে (পূর্ব পাকিস্তানে) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তান ভেঙে যাবে। আর এই ভাঙন এড়াতে চাইলে পূর্ব বাংলার প্রশাসন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বেসামরিক কতৃ‌র্পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

আমার পাকিস্তান সফরের সময় যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি, আমি বিষয়টা তাঁকে বলি। কিন্তু আমার প্রস্তাবে জেনারেল অনুকূল কোনো সাড়া দেননি। আসলে আমি তাঁকে এটাও বলি যে তাঁকে ব্রিটিশদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে—আমরা যাঁদের জেলে ঢুকিয়েছি তাঁরাই জাতির কর্ণধার হয়েছেন।

(সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত)

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১০ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত