বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালের শুরুর দিকে আমি ইপিআরের চতুর্থ উইংয়ে (চুয়াডাঙ্গা) প্রথম বাঙালি অধিনায়ক হিসেবে যোগ দিই। সেখানে দুজন সহকারী উইং কমান্ডার ছিলেন। তাঁদের একজন ছিলেন বাঙালি; ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী (বীর বিক্রম, পরে কর্নেল) এবং দ্বিতীয় জন অবাঙালি; ক্যাপ্টেন মো. সাদেক।

উইংয়ের অধীনে ছিল পাঁচটি কোম্পানি। একটি কোম্পানি চুয়াডাঙ্গা হেডকোয়ার্টারে, অন্য চারটি ছিল সীমান্ত এলাকায়। আওতাধীন সীমান্ত এলাকা ছিল দক্ষিণে মাসলিয়া বিওপি থেকে উত্তরে মহেশকুণ্ডি বিওপি। প্রত্যেক কোম্পানির কমান্ডার ছিল একেকজন সুবেদার। সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫০ জন। এর মধ্যে অবাঙালি সেনা ছিল প্রায় ১৫০ জন।

২৪ মার্চ সকাল ১০টায় আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি করে স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে কুষ্টিয়া রওনা হই। সার্কিট হাউসে উঠি। যে কাজে গিয়েছিলাম তা নানা কারণে ২৫ মার্চেও শেষ হয়নি। ফলে ওই রাতেও আমি থাকি। ২৬ মার্চ ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পাই অল্প দূরে রাস্তার ওপর মিলিটারি জিপে করে পাকিস্তানি সেনারা টহল দিচ্ছে। ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে, এ কথা তারা ঘোষণা করছে। ব্যাপারটা কেন যেন আমার ঘোলাটে মনে হয়। ডিসিকে টেলিফোন করে জানতে চেয়েছিলাম ব্যাপার কী? কিন্তু টেলিফোন উঠিয়ে কোনো সাড়া নেই। বুঝতে পারি লাইন কাটা।

সার্কিট হাউসের ঠিক পেছনেই জেলা স্কুল। সেখানেও অনেক সেনা দেখতে পাই। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বিভ্রান্তিকর অবস্থাতেই কেটে যায় প্রায় তিন ঘণ্টা। আমার ব্যক্তিগত রেডিও অন করা ছিল। ঢাকা বেতারে অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। শুনছিলাম। কিন্তু তা থেকে তখন কিছুই অনুমান করতে পারিনি। সাড়ে আটটা কি নয়টার দিকে হঠাত্ ঘোষণা শুরু হয় নতুন মার্শাল ল আইনের কথা। এরপর আর এক মুহূর্তও কুষ্টিয়ায় থাকা সমীচীন মনে করিনি। দ্রুত তৈরি হয়ে চুয়াডাঙ্গা রওনা হই। ভাগ্য ভালো, ইপিআরের পোশাক পরা অবস্থায় আমাকে দেখেও পাকিস্তানি সেনারা কিছুই বলেনি। কেন বলেনি সেটা পরে যতবার ভেবেছি ততবারই ওদের বোকামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। তবে আমি মনে করি, এটা বোধ হয় আল্লাহরই মহিমা। বেলা ১১টায় ঝিনাইদহ পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য। এরপর সেখানে কিছু ঘটনা ঘটে। সেটা এই স্বল্প পরিসরে আর লিখলাম না।

আনুমানিক বেলা একটায় আমি চুয়াডাঙ্গায় উইং সদর দপ্তরের সামনের রাস্তায় পৌঁছি। গাড়ি দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই উইংয়ের বাঙালি হাবিলদার মেজর মজিবর রহমান এসে আমাকে ঢাকার ঘটনার আনুপূর্বিক বিবরণ দেয়। তাঁর কাছ থেকে সব ঘটনা জেনে আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছি। তাদের সর্বতোভাবে তৈরি থাকতে নির্দেশ দিয়ে আমি আমার বাসভবনে যাই। এরপর আমি ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি ডা. আসহাবুল হক জোয়ারদার, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আমার বাসায় জরুরিভাবে আসার জন্য খবর পাঠাই।

ডা. আসহাবুল হক বোধ হয় আমার অপেক্ষায় তৈরিই ছিলেন। খবর পেয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি উপস্থিত হন। অন্যান্য সবাই আসার পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আমরা ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গার সব ঘটনা নিয়ে আলোচনা করি। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে স্থির হয় যে এ অন্যায় আমরা সইব না। আমরা শপথ নিলাম যে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও যুদ্ধ করব এবং যেমন করেই হোক নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও মাতৃভূমিকে এই পশুশক্তির হাত থেকে রক্ষা করব। সবাই আমাকে সামরিক প্রধান বলে মেনে নেন।

২৭ মার্চ ডা. আসহাবুল হক সাহেব ও আমি মিলে ছক আঁকি, কুষ্টিয়া আমাদের পুনরুদ্ধার করতেই হবে। এর মধ্যে আমি সীমান্তে অবস্থানরত সব ইপিআর সেনাকে চুয়াডাঙ্গায় সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিই। ফিলিপনগর কোম্পানিকে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে একটা নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হওয়ার পর পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলি। এই কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন সুবেদার মুজাফফর আহমেদ। দুই কমরেড মিলে ওই এলাকার নামকরণ করলাম ‘দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন।’ কমান্ডার হলাম আমি।

কুষ্টিয়া যুদ্ধ নিয়ে লেখার আগে শত্রুর সেনাসংখ্যা ও তাদের শক্তির ওপর কিছুটা আলোকপাত করা দরকার। যশোর ব্রিগেড থেকে ২৭ বালুচ রেজিমেন্ট এবং সাপোর্ট ব্যাটালিয়নের প্রায় ২০০ সেনা ২৫ মার্চ রাত দেড়টায় কুষ্টিয়া শহরে অবস্থান নেয়। তাদের সঙ্গে ছিল জিপে সংস্থাপিত ১০৬ মিমি আরআরসহ (রিকয়েললেস রাইফেল) পর্যাপ্ত চীনা এইচএমজি, এলএমজি, এসএমজি ও অটোমেটিক রাইফেল। আর ছিল বিপুল গোলাবারুদসহ গাড়ি ও বেতারযন্ত্র। তুলনামূলকভাবে রেকি ও সাপোর্ট কোম্পানির ফায়ার পাওয়ার একটা সাধারণ ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নের প্রায় সমপরিমাণ। এটা আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম। অধিনায়ক ছিল মেজর শোয়েব। তার সঙ্গে ছিল ক্যাপ্টেন শাকিল ও সামাদ এবং লেফটেন্যান্ট আতাউল্লাহ শাহ।

যুদ্ধের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে অন্ততপক্ষে সমান ধ্বংসাত্মক অস্ত্র এবং তিন গুণ সেনার কম হলে কাউকে আক্রমণ করা যায় না। চুয়াডাঙ্গা উইংয়ের অধীনে তখন প্রায় ৭০০ জন বাঙালি ইপিআর সেনা ছিল। তাদের অস্ত্র বলতে ছিল ৩০৩ রাইফেল, ৩০৩ এলএমজি, এমজি ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের মরিচা পড়া চারটা ৩.৫ রকেট লঞ্চার। গোলাবারুদ ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। সেনাদের বেশির ভাগই ছিল আধুনিক যুদ্ধে অনভিজ্ঞ। সেনাকর্মকর্তা বলতে আমি ছাড়া একমাত্র ক্যাপ্টেন এ আর আযম চৌধুরী। তবে আমাদের ভরসা ছিল জনসাধারণ।

কুষ্টিয়া যুদ্ধের জন্য স্থানীয় আনসার ও মুজাহিদকে এক দিনের প্রশিক্ষণের পর আমাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ৩০৩ রাইফেল দিয়ে তাদের সজ্জিত করি। ডা. আসহাবুল হক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বিপুল স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থা করেন। যোদ্ধাদের জন্য খাদ্য সরবরাহের নিয়মিত ব্যবস্থা ছিল না। স্থানীয় নেতারা এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগান। কিছু স্বেচ্ছাসেবককে এ জন্য আগেই কুষ্টিয়া শহরের কাছে পাঠানো হয়। আরও সিদ্ধান্ত হয় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনমতো যথাস্থানে ব্যবহার করার। তাদের হাতিয়ার বলতে ছিল বাঁশের লাঠি।

আমাদের ফিল্ড ওয়্যারলেস বা টেলিফোন কমিউনিকেশনের ব্যবস্থা ছিল না। তাই স্থানীয় টেলিফোন বিভাগের সাহায্যে পোড়াদহের খোলা প্রান্তরে ফিল্ড এক্সচেঞ্জ স্থাপন করা হয়। ডা. আসহাবুল হক ফিল্ড চিকিত্সাকেন্দ্র, ডাক্তার ও ওষুধের ব্যবস্থা করেন।

default-image

২৮ মার্চ দুপুরের মধ্যে ইপিআর মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় সমবেত হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা আমি ঝিনাইদহে পাঠিয়ে দিই। তারা যশোর-ঝিনাইদহ রাস্তা অবরোধ করে। যাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যশোর থেকে সেনা বা অস্ত্র কুষ্টিয়ায় পাঠাতে না পারে। আর এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা ওই দিন বিকেল বেলা ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীর নেতৃত্বে পোড়াদহ পাঠিয়ে দিই। তখন চুয়াডাঙ্গা থেকে পোড়াদহে যাওয়ার রাস্তা কাঁচা ছিল। আযম চৌধুরীর প্রতি নির্দেশ ছিল গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর পরই তিনি যেন সুবেদার মুজাফফরের কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে সংবাদ দেন। পরিকল্পনা ছিল সুবেদার মুজাফফরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়ার পুলিশ লাইনের দিক দিয়ে আক্রমণ করবে। আযম চৌধুরীর অধীন মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অর্থাত্ সার্কিট হাউসের দিক দিয়ে আক্রমণ করবে এবং মনিরুজ্জামানের (বীর বিক্রম, পরে অন্য এক যুদ্ধে শহীদ) অধীন মুক্তিযোদ্ধারা (এক প্লাটুন ইপিআর সেনা ও স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়ে গঠিত) পূর্ব দিক থেকে মোহিনী মিল ও ওয়্যারলেস স্টেশনের ওপর আক্রমণ চালাবে। আক্রমণ হবে একই সময়ে তিন দিক থেকে।

আক্রমণের সময় ও তারিখ ছিল ২৯ মার্চ ভোর চারটায়। পরিকল্পনায় এটাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল যে আক্রমণ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে হাজার হাজার বেসামরিক লোক ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনি দিতে দিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদ্ভাগে অনুসরণ করবে। এসব বেসামরিক ব্যবস্থার ভার ছিল ডা. আসহাবুল হকের ওপর। তিনি তাঁর দলীয় কর্মী, স্থানীয় ছাত্র-যুবক ও স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে খুব সুষ্ঠুভাবেই এ কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।

আক্রমণের সব আয়োজন সম্পূর্ণ, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, চলাচলের ব্যবস্থার অসুবিধা ও একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ায় সুবেদার মুজাফফরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট স্থানে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমি আক্রমণের দিন ও সময় ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে দিই। অর্থাত্ আক্রমণের নতুন দিন ও সময় স্থির করি ৩০ মার্চ ভোর চারটায়।

২৮ মার্চ রাত থেকে ২৯ মার্চ রাত পর্যন্ত অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া শহরের অদূরে মাঠে-ময়দানে ও জঙ্গলে অবস্থান করেন। সুবেদার মুজাফফরের অধীন মুক্তিযোদ্ধারা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হন ২৯ মার্চ ভোরবেলা। নিয়মিত যোগাযোগ করে তাঁদের আক্রমণের পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং যথারীতি অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, ওষুধপত্র ও বেসামরিক লোক সরবরাহ করা হয়।

৩০ মার্চ ভোর চারটায় তিন দিক থেকে আমরা অতর্কিতভাবে কুষ্টিয়া আক্রমণ করি। আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অনুসরণকারী জনগণের গগনবিদারী ‘জয়বাংলা’ জয়ধ্বনিতে বোধ হয় শত্রুপক্ষের মনোবল ভেঙে যায়। প্রায় ঘণ্টা খানেক তুমুল যুদ্ধের পর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ লাইন ও অয়্যারলেস কেন্দ্রের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং শত্রু হনন শুরু করে। উপায়ন্তর না দেখে সামান্যসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিয়ে দ্রুতগতিতে জেলা স্কুলের দিকে পালিয়ে যায়। পালানোর প্রাক্কালেও অনেকে নিহত হয়। পুরো দিনের যুদ্ধে একমাত্র তাদের সদর দপ্তর জেলা স্কুল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্যতীত পুরো শহরই আমাদের হস্তগত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ মার্চ সারা রাত পাকিস্তানি সেনাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখে মুহুর্মুহু জয়ধ্বনিসহকারে গোলাবর্ষণ করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনারা অয়্যারলেসে যশোরের কাছে আরও সেনা পাঠানোর আবেদন জানিয়েও ব্যর্থ হয়। আমাদের অয়্যারলেস সেটের মারফত শত্রুপক্ষের অয়্যারলেস মনিটরিং করে যশোরের দেওয়া প্রত্যুত্তর আমাদের হস্তগত হয়। যশোরের প্রত্যুত্তর ছিল—‘Reinforcement not possible. Try to live on your own’

পরদিন ৩১ মার্চ ভোরবেলা আমাদের আক্রমণ পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। তুমুল গোলাগুলির সাহায্যে শত্রুপক্ষ আমাদের মাথা নিচু করে রাখতে বাধ্য করে। সারা দিনের যুদ্ধের পর আনুমানিক জীবিত শত্রুর সংখ্যা ছিল ৪০-৪৫ জন। তার মধ্যে অফিসাররা সবাই জীবিত ছিল। গত্যন্তর না দেখে রাতের অন্ধকারে তারা দুটি জিপ ও একটি ডজ গাড়িতে আমাদের ব্যূহ ভেঙে তীব্রগতিতে ঝিনাইদহের দিকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। একদল মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গে সঙ্গেই তাদের অনুসরণ করে। পাকিস্তানিদের ভাগ্য মন্দ। শৈলকুপার পুলের গোড়ায় আমরা গর্ত খনন করে তারপোলিন দিয়ে সেই গর্ত ঢেকে রেখেছিলাম। সেটা তারা জানত না। তাদের প্রথম দুটি জিপ গর্তে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেজর শোয়েবসহ কয়েকজনের সঙ্গে সঙ্গে ভবলীলা সাঙ্গ হয়। বাকিরা আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সজাগ মুক্তিযোদ্ধা, স্বেচ্ছাসেবক ও জনগণের হাত থেকে একজন শত্রুসেনাও বাঁচতে পারেনি। একটি ছেলে একটা একনলা শটগান দিয়ে একজন এলএমজিধারী শত্রুসেনাকে হত্যা করে তার হাতের একটি আঙুল ও এলএমজি আমার সদর দপ্তরে জমা করে। এই ছেলেটির বয়স ছিল ১৮-২০ বছর। নাম তার সুলতান আলী জোয়ারদার। সেই রাতেই লে. আতাউল্লাহ শাহ ধরা পড়ে। চিকিত্সার জন্য তাকে ঝিনাইদহে পাঠানো হয়। ১ এপ্রিল কুষ্টিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়। এরপর অল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়ায় রেখে বাকিদের আমি ঝিনাইদহে পাঠিয়ে দিই। কিছুসংখ্যক মাগুরা, কিছুসংখ্যক ঝিনাইদহের দক্ষিণে বিশাখালী ও কিছুসংখ্যক কোটচাঁদপুরে অবস্থান করে। উদ্দেশ্য ছিল—যশোর থেকে উত্তর দিকে শত্রুদের অগ্রসর হওয়ার সব পথ অবরোধ করে রাখা।

লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী: সেক্টর কমান্ডার (আগস্ট পর্যন্ত), সেক্টর-৮

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৩ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত