বিজ্ঞাপন
default-image

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আমি আপনার চিঠিটি পড়েছি, আর রাষ্ট্রদূত চ্যাং তুংয়ের সঙ্গে আপনার বৈঠক সম্পর্কে তুংয়ের পাঠানো প্রতিবেদনটিও পড়েছি। চীনা সরকারের ওপর আপনার অকৃত্রিম আস্থার জন্য আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।

চীন ও পাকিস্তান পরস্পর বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী। চীনা সরকার ও তার জনগণ বর্তমানে পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখছে। আমরা লক্ষ করেছি, আপনি ও পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা ও এর ভাঙন রোধে অনেক কিছু করেছেন।

আমরা বিশ্বাস করি, আপনার বিজ্ঞ পদক্ষেপ ও পাকিস্তানের অন্যান্য মহলের নেতৃবৃন্দের যথোচিত ভূমিকার মাধ্যমে পাকিস্তানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।

আমরা মনে করি, পাকিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের একতার মাধ্যমে পাকিস্তান একটি সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে।

বৃহত্তর জনগণের সঙ্গে সেই সব অতি নগণ্য ব্যক্তি, যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের মধ্যে অবশ্যই ভেদরেখা টানতে হবে, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে আমরা মনে করি।

পাকিস্তানের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে মাননীয়ের ব্যবহারের জন্য আমরা আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করছি।

একই সঙ্গে আমরা লক্ষ করেছি যে ভারত সরকার আপনার দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে পুঁজি করে সম্প্রতি সেখানকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একই পথ অনুসরণ করছে।

চীনা সংবাদমাধ্যমে এই অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপকে উন্মোচন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি নিকোলাই পদগোর্নির চিঠির যে জবাব দিয়েছিলেন, তাও চীনা মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

চীনা সরকার মনে করে, পাকিস্তানে বর্তমানে যা হচ্ছে, তা একান্তই পাকিস্তানের নিজস্ব ব্যাপার। এর সামাধানও করতে পারে শুধু পাকিস্তানেরই জনগণ। বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগই এখানে নেই।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা পাকিস্তানে আগ্রাসন করার হিম্মত দেখালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতা সুরক্ষায় চীনা সরকার অতীতের মতো পাকিস্তান সরকার ও তার জনগণের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জোগাবে।

১২ এপ্রিল ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, ত্রয়োদশ খণ্ড

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১৪ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত