আমেরিকা, আমি ভেবেছিলাম
সোভিয়েত ইউনিয়নহীন এই পৃথিবীতে
তুমি ক্রমশ আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে-
দৈত্যদন্তগুলো ফেলে দিয়ে তুমি ক্রমশ
মানুষ হয়ে উঠবে।
ভেবেছিলাম, এগারই সেপ্টেম্বরের পর, আমেরিকা
তুমি ঘৃণার উত্স সন্ধানে ব্রতী হবে।
অহঙ্কারমুক্ত চিত্তে তুমি তাকাবে পৃথিবীর দিকে।
আত্মঘাতী মানবমনের গভীরে প্রবেশ ক’রে
তুমি বুঝতে চেষ্টা করবে তার ব্যথা, তার দুঃখ।
কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে
তুমি ইতিহাসকেই শিক্ষা দিতে চাইছো।
তাই আমেরিকা, তোমার সন্দেহতাড়িত শক্তি
এবং অঢেল সমেদর দম্ভ
তোমার দৃষ্টিকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করেছে
যেন এক মদমত্ত মাতাল।
আমেরিকা, তুমি বুঝতেও পারছো না-
নির্বান্ধবতার অন্ধ আবর্তের দিকে কীভাবে
ক্রমশ ধাবিত হচ্ছো তুমি।
মেঘনাদবধের বদলে কীভাবে তুমি ক্রমাগত
জন্ম দিয়ে চলেছো মেঘনাদ, লাদেন, সাদ্দাম।
আমেরিকা, আমি চাই
তুমি রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়, তাঁর গান শোন।
সদাপ্রভু দয়ালু যীশুর নামে
তুমি পাঠ করো বাইবেল।
আমেরিকা, মনে রেখো ডব্লিউএমডি ধ্বংসের নামে
অপরকে নিরস্ত্র করার জন্য-তুমি যেভাবে
উলঙ্গ করে তুলছো তোমার
গণবিধ্বংসী দৈত্যমূর্তিকে
তাতে কারও লাভ হবে না-না তোমার, না আমার
ভয় দেখিয়ে মানুষ কেন কুকুরকেও বশ করা যায় না।
ভয় হচ্ছে ভূতের এজেন্ডা।
ইমপিরিলিজমের লিগেসি।
আমেরিকা, শোন আমার কথা।
ট্রিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করে
তুমি যে লোহার বাসর তৈরি করতে চলেছো-
তাতে আর যাই হোক,
মিলনের আনন্দ থাকবে না।
তুমি একা হয়ে যাবে, বড় বেশি একা।
গিন্সবার্গ বেঁচে থাকলে এ কথাই তোমাকে বলতেন।
সূত্র: ২৬ মার্চ ২০০৩ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত