বিজ্ঞাপন
default-image

জেনারেল নিয়াজির অফিসে প্রবেশ করে যে দৃশ্য দেখলাম, তা আমাকে ভীতবিহ্বল করে তুলল। জেনারেল নিয়াজি তাঁর চেয়ারে বসে আছেন, তাঁর সামনে জেনারেল নাগরা রয়েছেন এবং একজন জেনারেলের পোশাকে রয়েছেন মুক্তিবাহিনীর টাইগার সিদ্দিকীও। নিয়াজি খুব আমুদে মেজাজে ছিলেন এবং তিনি উদু‌র্ কবিতার শ্লোক আবৃত্তি করছিলেন। ...নাগরা যেহেতু নিয়াজির চেয়ে বেশি শিক্ষিত ছিলেন, নিয়াজি তাই পাঞ্জাবিতে রসিকতা করতে শুরু করলেন। নিয়াজি তাঁর আগের চরিত্রে ফিরে গিয়েছিলেন। ১০ দিন ধরে তিনি ভগ্নহৃদয়, গোমড়া ও শান্ত ছিলেন। কিন্তু এখন মনে হলো, সব চাপ নেমে গেছে। আমার মতে, তিনি অত্যন্ত লজ্জাকর রীতিতে আচরণ করছিলেন। শত্রুর সঙ্গে যখন আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করতে হবে, তখন তাঁর গম্ভীর ও সম্মানিত ব্যক্তির মতো থাকা প্রয়োজন ছিল। পরিবর্তে তিনি অমার্জিত ও উল্লাসময় আচরণ করছিলেন—ভারতীয়দের বলছিলেন অশ্লীল রসিকতার গল্প, যেন তারা তাঁর হারানো অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল।

ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী ও একজন শিখ কর্নেল ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোনো বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। আমি বসার পর আমার হাতে একটি কাগজ দিয়ে বকর বললেন, ‘এগুলো আত্মসমর্পণের শর্ত।’ আমি সেটা পড়লাম এবং দেখলাম, যে বাহিনীর কাছে পাকিস্তান আর্মিকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীকেও অন্তভু‌র্ক্ত করা হয়েছে। আমি বকরকে বললাম, ‘এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আত্মসমর্পণ করছি না, আমরা আলোচনা করছি। ঘটনা যা-ই হোক না কেন, দয়া করে মুক্তিবাহিনী শব্দ দুটি মুছে ফেলুন।’ এ সময় পাইপ মুখে নিয়ে জেনারেল জ্যাকব প্রবেশ করলেন এবং বললেন, ‘এটা এভাবেই দিল্লি থেকে এসেছে। আপনি এটা মেনে নিন অথবা ছেড়ে দিন।’ আমি বললাম, ‘এটা কমান্ডারের ব্যাপার, তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’ নিয়াজি আত্মসমর্পণের শর্তাবলি অনুমোদন করে মাথা নাড়ালেন।

অ্যাডমিরাল শরীফ ও আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং বাইরে চলে এলাম। আমরা লক্ষ করলাম, ভারতীয়রা কিছু চেয়ার ও একটি টেবিলের খোঁজ করছে। আমরা বুঝলাম, তারা কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চাচ্ছে। আমরা দুজনই নিয়াজির কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম যে ভারতীয়রা একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্ম, অনুবাদ: মুনতাসীর মামুন, ইউপিএল

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১১ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত