বিজ্ঞাপন
default-image

নিরাপত্তা পরিষদে একটা ভেটোর ফলে আমরা বিরক্ত বোধ করছি। আসুন, আমরা সেই ভেটোর একটা সৌধ বানাই—বিরাট এক সৌধ। আসুন, আমরা নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের অক্ষমতা ও অকার্যকরতার সৌধ বানাই। যেমন কর্ম তেমন ফলই তো ফলবে। বাইবেলের ওই কথাটা স্মরণ করুন। আজ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এমন হলো। আমরা আজ গিনিপিগ। কিন্তু আগামী দিনে গিনিপিগ হবে অন্য কেউ। তখন দেখবেন কী হয়। ঘটনার শৃঙ্খলা কীভাবে নিজেকে উন্মোচন করবে—সেটাও আপনারা দেখবেন। আপনারা আমাদের মুখ ভোঁতা করতে চান। আমরা তা হতে দেব না।

পূর্ব পাকিস্তানে ইতিমধ্যে ঘড়ির কাঁটা অন্যদিকে ঘুরতে শুরু করেছে। দখলদার বাহিনী হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি প্রতিক্ষণে মুসলমানপ্রধান বাংলাকে ভয়ংকরভাবে মনে করিয়ে দিতে থাকবে যে, তারা হিন্দু দখলদারির অধীন। আর আপনারা এর পরিণাম নিজ চোখেই দেখবেন। দেখবেন কোথায় গিয়ে এর শেষ হয়।

বেশ তো, তারা থাকুক না—অসুবিধা কী? তারা থাকুক, আস্ফালন করুক। যদি তারা পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে নিতে চায়, তবে তারা দখলদার বাহিনী হিসেবেই থাকুক। তারা তো দখলদার বাহিনী; কীভাবে তাদের মুক্তিদাতা বলা যায়? তারা ওখানে থাকবে। তারা সেখানে থাকুক; তারা দেখবে কেমন করে ঘড়ির কাঁটা অন্যদিকে ঘুরে যায়।

অবশেষে বলব, আমি কাপুরুষ নই। জীবনে কখনো কাপুরুষতা করিনি। আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, আমাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। সব সময় কঠিন সময় মোকাবিলা করে এসেছি। আমি আজ কাপুরুষতা করছি না, তবে নিরাপত্তা পরিষদ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখানে প্রয়োজনের চেয়ে এক মুহূর্ত বেশি অবস্থান করা আমার দেশ ও ব্যক্তি হিসেবে আমার জন্য অপমানজনক। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর আগ পর্যন্ত যা কিছু বেআইনি ছিল, তার সবটাই আমি বয়কট করছি না। আমি তাতে শরিক হতে চাই না। আমরা লড়াই করব। আমরা ফিরে যাব, লড়াই করব। আমার দেশ আমাকে ডাকছে। আমি এই নিরাপত্তা পরিষদে বসে কেন সময় নষ্ট করব? আমার দেশের এক অংশের কলঙ্কজনক আত্মসমর্পণে আমি শরিক হব না। আপনারা আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ নিয়ে থাকুন। আমি চললাম।

সূত্র: একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর দেওয়া ভাষণের অংশবিশেষ

সূত্র: ২৬ মার্চ ২০১১ প্রথম আলোর "স্বাধীনতা দিবস" বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত