বিজ্ঞাপন
default-image

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্​যাপনকালে আমরা একই সঙ্গে স্মরণ করি গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকী। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত, বাঙালি সমাজের কাছে কালরাত্রি হিসেবে চিহ্নিত, যে রাতে দেশের সবগুলো ক্যান্টনমেন্ট থেকে পূর্ণ যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে একযোগে বের হয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ যুদ্ধ-পরিকল্পনা অনুসারে সূচিত হয়েছিল তাদের এই অভিযান, তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ কোনো সামরিক শক্তি ছিল না, ছিল সর্বস্তরের নিরস্ত্র বাঙালি নাগরিক। পরবর্তী নয় মাস দেশজুড়ে পরিচালিত এমন নৃশংসতার বলি হয়েছিল ত্রিশ লাখ মানুষ, সেই সঙ্গে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল এক কোটি শরণার্থী এবং তিন লক্ষাধিক কন্যা ও নারীর।

গণহত্যা-উত্তর বাস্তবতায় বাংলাদেশের মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল নৃশংসতম নরমেধযজ্ঞের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচার ও দণ্ডপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকে স্মৃতি সংরক্ষণের, যেন কিছুই আমরা না ভুলি। যুক্ত থাকে আরেক প্রত্যাশা, এই গণহত্যা যেন যথাযথ স্বীকৃতি পায় বিশ্ববাসীর কাছে। ৫০ বছর পর অতিক্রান্ত পথের দিকে তাকিয়ে এর একটা খতিয়ান আমাদের নিতে হবে। সে পথ যে কতটা বন্ধুর, কতটা চড়াই-উতরাই যে আমাদের পেরোতে হয়েছে, সে আরেক ইতিহাস। পাকিস্তানি কারাগার থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে মাটিতে রক্তের ছোপ ও বাতাসে ভেসে বেড়ানো স্বজনহারার কান্না বুঝতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিলম্ব হয়নি। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবেগসিক্ত ভাষণের শেষে তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রতিনিধি পাঠাতে নিষ্ঠুর অপরাধের তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

আমরা জানি, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিতে কোনো কার্যকর পন্থা বা উপায় তখনো বিশ্বসমাজ নির্ধারণ করতে পারেনি। তদুপরি, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল পরাক্রমী বিশ্বশক্তির পরাজয় হিসেবে চিহ্নিত। তাই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিচার দূরে থাক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রবেশের অধিকারটুকুও স্বীকার করা হলো না, অনেক পরে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ পেল জাতিসংঘের স্বীকৃতি। আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা ও অস্বীকৃতির পটভূমিকায় বিশ্বমানবতার পক্ষে জেনোসাইড, তথা গোটা সভ্যতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য অনন্যোপায় অথচ দৃঢ়বল বঙ্গবন্ধু নিলেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তিনি ও তাঁর সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে দেশীয় ও আন্তর্দেশীয় অপরাধীদের বিচারের জন্য প্রথমে জারি করলেন দালাল আইন এবং ১৯৭৩ সালে নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদে গৃহীত হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইন। গণহত্যার অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা এবং সেই বিচার সুসম্পন্ন করার পথ খুলে দিতে তিনি নব্বই সহস্রাধিক যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।

একদিকে তা ছিল সংঘাত শেষে বন্দিবিনিময়ের জেনেভা কনভেনশনের বরখেলাপ, অন্যদিকে ছিল ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। বিশ্বের পরাক্রমী দেশ, আরব দুনিয়াসহ ইসলামি সহযোগিতাভুক্ত দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নব্য সদস্য চীন বাংলাদেশের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করে সব গণহত্যাকারীসহ যুদ্ধবন্দীকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে। এই পর্যায়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মান্যতা প্রদর্শন করে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী ছাড়া অন্যদের পাকিস্তানে ফেরত দিতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানি ও দেশজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশ। সুপ্রিম কোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী সিরাজুল হককে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকায় আয়োজিত হয় গণহত্যা তথা আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্য বিশ্বজনীন সভা। সেখানে যোগ দেন বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, যারা সেই অন্ধকার সময়েও জেনোসাইড ও জাস্টিস নিয়ে ছিলেন ভাবিত।

কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে এই পথে অগ্রসর হতে দেয়নি। ১৯৭৫ সালে নিষ্ঠুরভাবে সপরিবার বঙ্গবন্ধু-হত্যার মাধ্যমে কক্ষচ্যুত করা হয় বাংলাদেশকে, বন্ধ হয় বিচারপ্রক্রিয়া, নেমে আসে তমসাচ্ছন্ন সময়, যখন গণহত্যার দোসররা ক্রমে জাঁকিয়ে বসে রাষ্ট্রক্ষমতায়। তারপর থেকে আমরা পার হয়ে এসেছি দীর্ঘ পথ, গণহত্যার বিচারের দাবি বাংলাদেশ আবার প্রতিষ্ঠা করেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে, বিপুলভাবে নতুন প্রজন্মের ভোট দ্বারা সমর্থিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বিচারানুষ্ঠানের প্রক্রিয়া সূচনা করে। ২০১০ সালের আরেক ২৫ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং একে একে প্রধান দেশীয় অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, আদালত চলমান রয়েছে, যেমন আমরা দেখি ইউরোপের কতক দেশে নাৎসি অপরাধীদের বিচারের জন্য এখনো সক্রিয় আদালত।

গণহত্যার কালরাত্রি যখন আমরা স্মরণ করি, তখন আইনের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা তথা সংগ্রামকেও স্মরণ করি। জাতীয়ভাবে গণহত্যা হয়ে উঠেছিল অস্বীকৃত, আন্তর্জাতিকভাবে বিস্মৃত, সেই দুঃসময়েও স্মৃতির আলোকমশাল নানাভাবে প্রজ্বলিত করেছিলেন বহু মানুষ বহুভাবে। শিল্পে-সাহিত্যে তা পেয়েছিল নানা মাত্রা, স্মৃতিকথা রচনা করেছেন অনেকে, যা আলোড়িত করেছে সমাজকে, নির্মিত হয়েছে অনেক স্মারকস্তম্ভ, নেওয়া হয়েছে স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা ছিল এ ক্ষেত্রে পথিকৃৎ, একে একে সেখানে যুক্ত হয়েছে আরও অনেক উদ্যোগ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং পরবর্তীকালে খুলনার নির্যাতন ও গণহত্যা জাদুঘর।

এসব কাজের সম্মিলিত যোগফল হিসেবে আমরা দেখি, বাংলাদেশের গণহত্যা দেশবাসীর অন্তরে এবং বাহিরে আজ দৃঢ়ভাবে স্থিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই চেতনা কীভাবে প্রোথিত ও প্রবহমান রাখা যায়। সে জন্য আনুষ্ঠানিক আয়োজনের পাশাপাশি দরকার অনেক ধরনের সৃজনশীল কাজ, প্রয়োজন এমনই উদ্যোগকে যথাযথভাবে জাতীয় উদ্যোগে পরিণত করা, যা স্পর্শ করবে সবার অন্তর।

পাশাপাশি আমরা দেখি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গণহত্যা ক্রমশ আকর্ষণ করছে দৃষ্টি এবং ফিরে আসছে বিশ্বসমাজের স্মৃতিলোকে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রতিষ্ঠা এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিশাল মাত্রার অর্থ-বিনিয়োগ ও সুপরিকল্পিত প্রয়াস নেওয়া হয়েছে, লবি করা হয়েছে মিডিয়ায়, রাজনৈতিক ও একাডেমিক মহলে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরোধীদের পরাজয় ঘটেছে, সেই সঙ্গে সমালোচনার সূত্রে হলেও তারা একাত্তরের গণহত্যাকে লোকসমক্ষে আবার হাজির করেছে।

এখানে উল্লেখ করতে হয় গণহত্যা অধ্যয়ন ও মোকাবিলায় সক্রিয় ব্যক্তি, সংস্থা ও বিদ্বৎজনের কথা, যারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহযোগিতার হাত। তাঁদের সম্পৃক্ততার এক বড় অবলম্বন হয়েছে জনগণের প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আইএজিএস বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্সের অগ্রণী সদস্যরা বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি কেবল নয়, তা নিয়ে আলোচনা গবেষণার পথ করে দিচ্ছেন। ২০১৯ সালে কম্বোডিয়ায় অনুষ্ঠিত সংস্থার দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের একদল তরুণ প্রজন্মের সদস্যের অংশগ্রহণ সবার দৃষ্টি কেড়েছিল। উল্লেখ্য, সংস্থার পূর্বতন সভাপতি আর্জেন্টিনার ড্যানিয়েল ফেইরস্টেইন বুয়েনস এইরেসে তাঁর গবেষণাকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের বিচারের রায় স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশনা শুরু করেছেন। ডিজিটাল মাধ্যমে তাঁরা এই রায় গবেষকদের জন্য লভ্য করে তুলেছেন। একাধিক গ্রন্থও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বের কতক প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারসংক্রান্ত অধ্যয়ন স্থান করে নিয়েছে। ১২ মার্চ ২০২১ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বাংলাদেশের গণহত্যা স্মরণে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী বিশ্বজনীন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে জাপান-কোরিয়া, ইউরোপ-আফ্রিকা হয়ে উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা, কানাডায় শেষ হয়। এই আলোচনায় ২৭ দেশের ৭৮ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন।

২০১৭ সালে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা গণহত্যাও বাংলাদেশের একাত্তরের গণহত্যাকে আবার সামনে নিয়ে আসছে। অতীত গণহত্যার শিকার এক দেশ সাম্প্রতিক গণহত্যার শিকার, তার ভূখণ্ডে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক ভিকটিমের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেটা যেমন মানবতার শক্তি প্রকাশ করে, তেমনি মেলে ধরে ইতিহাসের পরম্পরা। রোহিঙ্গা গণহত্যা যখন ধ্বনিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে, আন্তর্জাতিক বিচারশালায় কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় তখন প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশের একাত্তরের গণহত্যা।

default-image

এখানে স্মরণ করা যায়, ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদ ২৫ মার্চকে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা দিবস’ হিসেবে নির্দিষ্ট করেছে। বাংলাদেশের গণহত্যা সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ধরে শুরু হয়েছিল। এমন দুর্ভাগ্য-চিহ্নিত দিবস রয়েছে গণহত্যার শিকার রুয়ান্ডার (৭ এপ্রিল), কম্বোডিয়ার (১৭ এপ্রিল), রয়েছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ইহুদি নিধন স্মরণে হলোকস্ট স্মরণ দিবস (২৭ জানুয়ারি)। দেশে এবং দেশের বাইরে দূতাবাস ও অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে এই দিবস পালন স্মৃতির নতুন বিস্তার ঘটাবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

আজ তাই বাংলাদেশের গণহত্যা আর বিস্মৃত গণহত্যা হয়ে নেই। এর এক উদাহরণ মিলবে ১০ মার্চ ২০২১ নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত নিকোলাস ক্রিস্টফের প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যে, এমনকি তাঁর নিজের ক্ষেত্রেও প্রচলিত ধারণা যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, প্রতিবেদনে সেই স্বীকারোক্তি রয়েছে। আগ্রহোদ্দীপকভাবে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘৫০ বছর আগে এই মাসে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছিল জেনোসাইড, দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মধ্যে।’ দরিদ্রতা, অন্নহীনতা ও দুর্যোগ মিলিয়ে সচরাচর যে ভাষ্য তুলে ধরা হয়, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সেখানে গণহত্যার উল্লেখ পরিবর্তিত বাস্তবতা মেলে ধরে।

বিস্মৃতি থেকে স্মৃতিতে ফিরে আসছে বাংলাদেশের গণহত্যা, স্মৃতির এই সংগ্রামে নতুন মাত্রা ও গভীরতা যোগ করা এখন আমাদের জাতীয় দায়।

গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকীর কৃষ্ণদিবসে এই দাবি আরও সোচ্চার হয়েছে যে, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি চাই। বাংলাদেশের গণহত্যা বিশ্বসমাজের নজর কাড়লেও এখনো স্বীকৃতি পায়নি, বিশ্বসমাজ তখন গণহত্যা মোকাবিলায় ছিল অর্কমণ্য। গণহত্যার বিচারের জন্য ১৯৯০–এর দশক থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে কতক ট্রাইবুন্যাল গঠিত হয়, আর ২০০২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গণহত্যার বিচারের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তবে এই আদালত যেহেতু পূর্ববর্তী গণহত্যার বিচারের দায় গ্রহণ করেনি, তাই বাংলাদেশের গণহত্যার বিচারের জন্য আইসিসির স্মরণ নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কি অধরা রয়ে যাবে? আদালতের স্বীকৃতি হবে না, তবে অন্য স্বীকৃতির পথ তৈরিতে আমাদের নানাভাবে সক্রিয় হতে হবে, বিশেষভাবে গণহত্যা মোকাবিলার বিভিন্ন আন্তজাতিক ফোরামে প্রাসঙ্গিকভাবে বাংলাদেশের গণহত্যা ও তার থেকে গ্রহণীয় শিক্ষা ও উপলব্ধির বিষয় তুলে ধরা দরকার। গণহত্যার স্বীকৃতির পথ খুঁজে পেতে আমরা আর্মেনিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আর্মেনিয়ার গণহত্যা ও বাংলাদেশের গণহত্যার রাজনৈতিক পটভূমিকায় অনেক পার্থক্য রয়েছে, তবে শতবর্ষ পার হয়ে গেলেও আর্মেনীয়রা যেভাবে বিশ্বপরিসরে তাদের গণহত্যার কাহিনি জাগরুক রেখেছে এবং বিভিন্ন দেশের সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের মাধমে এর স্বীকৃতি আদায় করেছে, তা আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। তবে এ জন্য সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের উদ্যোগ জোরদার করে আমরা স্বীকৃতির একটি পথ উন্মুক্ত করতে পারি। সেই সঙ্গে চলবে অন্য পথের সন্ধান। গণহত্যার স্মৃতির সংগ্রাম দাবি করছে এর নতুন মাত্রায় উত্তরণ।

মফিদুল হক লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি