বিজ্ঞাপন
default-image

এলাকার সড়কগুলোর শুরুতে চোখে পড়বে এর নামফলক। নামফলকগুলোতে শোভা পাচ্ছে এক–একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভালোবাসার এমন নিদর্শন দেখা যাবে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। পৌরসভাসহ পুরো উপজেলার ২৭৬টি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।

শুধু তা–ই নয়, যুদ্ধের অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে লিখিয়ে তার সংকলন প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, শ্রীপুর পৌরসভার ৭১টি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। এ ছাড়া উপজেলার অন্যান্য এলাকার আরও ২০৫টি সড়ক মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে আরও কিছু সড়কের নামকরণের প্রক্রিয়া চলছে।

দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে আছে এমন ২০টি সড়কের নামফলক। মাওনা উড়ালসেতুর নিচ থেকে শ্রীপুর সদরে যেতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিও মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশ থেকে ভেতরের দিকে যাওয়া আরও ১৫টি সড়ক সংশ্লিষ্ট এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নামে।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালের দিকে। উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন শ্রীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখতে এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এরপর পৌর এলাকাসহ উপজেলায় সড়কের নাম ক্রমান্বয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সড়কের নামকরণের কাজ করছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। আর পৌর এলাকার সড়কগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতার বলেন, ইউপিগুলোতে ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধার নামের প্রস্তাব চাওয়া হয়। সেখান থেকে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামফলক স্থাপনের আদেশ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি জানান, শ্রীপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে চিরস্মরণীয় করার জন্য জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তাঁদের নিজ হাতে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা লিখিয়ে আনা হয়। পরে ইউএনওর নিজ খরচে মুক্তিযোদ্ধাদের লেখাগুলোর একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়। ১২০ পৃষ্ঠার সংকলনটির নাম দেওয়া হয়েছে বিজয়গাথা

শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা একসময় থাকবেন না। কিন্তু এ সড়কগুলোর নামকরণের ফলে মানুষ তাঁদের প্রতিনিয়ত স্মরণ করবে।

শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, সারা দেশের সব সড়কের এমন নামকরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কর নামকরণের উদ্যোক্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যাঁদের আত্মত্যাগে এই দেশ পেয়েছি, তাঁদের সম্মানিত করতে না পারলে আমরা যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারব না। আমাদের বীরদের সম্মানিত করতেই আমি এমন উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আগামী দিনে আরও কিছু পরিকল্পনা আছে। সুযোগ পেলে বাস্তবায়ন করব।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে সড়কগুলোর নামকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সড়কগুলোর নাম রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া বীরদের লেখার সংকলন প্রকাশ যুগাপযোগী সিদ্ধান্ত।

উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, শ্রীপুর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫০০ জনের বেশি। শহীদ মুক্তযোদ্ধা ১৮ জন, বীরাঙ্গনা ১ জন। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর এই এলাকা হানাদারমুক্ত হয়।