জীবন থেকে নেয়া ছবির শুটিংয়ের সময়কার একটি ঘটনার কথা বলছিলেন রাজ্জাক, ‘এফডিসিতে শুটিং চলছিল। হঠাৎ করে সেনানিবাস থেকে এসে জহির রায়হান ও আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। তাদের কাছে অভিযোগ ছিল, এটি পাকিস্তানবিরোধী সিনেমা হচ্ছে। জহির রায়হান সেদিন সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে ফিরে এলেন। কাজ আবার শুরু হলো। কিন্তু সেন্সরে আটকে দেওয়া হলো ছবিটি। পরে অবশ্য ছাড়পত্র পায়।’
১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবিটি মুক্তি পায়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছবিটির জীবিত তিন শিল্পী ও এক চিত্রগ্রাহককে নিয়ে পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে ছবিটির তিন অভিনয়শিল্পী রাজ্জাক, সুচন্দা, আমজাদ হোসেন ও চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ছবিটি নিয়ে আলোচনা সভাও হয়।
সভায় রাজ্জাক বলেন, ‘জহির রায়হানই নায়করাজ রাজ্জাককে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলতেন না, নিয়ম মেনে কাজও করতেন না। তিনি কাজের ক্ষেত্রে সৎ ও সাহসী ছিলেন।’ জহির রায়হানের স্ত্রী ও জীবন থেকে নেয়া ছবির নায়িকা সুচন্দা বলেন, ‘জহির রায়হানের সাহিত্য, চলচ্চিত্র—সব জায়গাতেই মুক্তিকামী মানুষের কথা উঠে এসেছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ জীবন থেকে নেয়া।’
ছবির আরেক শিল্পী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা জানে না, জহির রায়হান কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেননি, কিন্তু তাঁর কলম আর ক্যামেরা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছে।’
দুঃখ করে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, ‘এই দীর্ঘ সময়ে কেউই জহির রায়হান কিংবা জীবন থেকে নেয়া ছবিটি নিয়ে আলোচনায় এগিয়ে আসেনি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ছোট পরিসরে হলেও কাজটি করল। ছবিটির অনেক স্মৃতিই হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। তাই বলে কেউ যেন এ সময়ে এসে ছবিটি নিয়ে কোথাও ভুল ব্যাখ্যা না করেন।’
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া ছবিটি সে সময় আলোড়ন তুলেছিল। ছবিটি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামকে উৎসাহিত করেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছে।’ পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ছবির চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র নির্মাতা সালাউদ্দিন জাকী, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি করে শোনান শিমুল মুস্তাফা, মেহের আফরোজ শাওন ও অমিত হাসান। পরে জীবন থেকে নেয়া ছবিটি দেখানো হয়।
সূত্র: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০ ফাল্গুন ১৪২৩, বুধবার, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।