বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতা ও মাত্রা সম্পর্কে মানুষের ধারণা ক্ষীণ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণায় নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, গণকবর ও বধ্যভূমি সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া তথ্যের চেয়ে এর ব্যাপকতা আরও অনেক বেশি। ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, শুধু ২০টি জেলাতেই বধ্যভূমি পাওয়া গেছে ৪০৪টি। এসব জেলায় গণহত্যার ঘটনা ৫ হাজার ১২১টি। গণকবর পাওয়া গেছে ৫০২টি এবং ৫৮৭টি নির্যাতনকেন্দ্রের খোঁজ পাওয়া গেছে।

দুই বছর ধরে ২০টি জেলায় মাঠপর্যায়ে এই জরিপ চালানো করা হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালে নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, ভোলা, খুলনায় এবং ২০১৮ সালে গাইবান্ধা, জামালপুর, নড়াইল, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার, যশোর, লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার ও বরিশাল জেলায় জরিপটি চালানো হয়।

দ্বিতীয় ধাপের ১০ জেলায় পরিচালিত জরিপের তথ্য গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে ‘গণহত্যা, বধ্যভূমি–গণকবর ও জরিপ’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন ‘১৯৭১: গণহত্যা–নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের’ ট্রাস্টি সভাপতি মুনতাসীর মামুন। সেমিনারের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি মো. মাহবুবর রহমান।

দ্বিতীয় ধাপের ১০ জেলায় পরিচালিত জরিপের তথ্য নিয়ে ১০টি বইও প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত বছর ১০ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্রের তথ্য নিয়ে ১০টি বই প্রকাশ করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে মাঠপর্যায়ের জরিপকাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন দ্বিতীয় ধাপে প্রকাশ করা ১০টি বইয়ের লেখকেরা। মুক্তিযুদ্ধের অজানা তথ্য তুলে আনার এই উদ্যোগ নিয়ে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য আসাদ মান্নান।

শামসুজ্জামান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প নেয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণায় তাদের কোনো তহবিল থাকে না। অথচ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার কাজটি এই মন্ত্রণালয়ের করার কথা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা গণকবর, বধ্যভূমি চিহ্নিত করে তা মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এর ঠিকানা www.genocidemuseumbd.org। গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরটি খুলনায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জরিপ করেছেন জয়দুল হোসেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এমন সব এলাকায় বধ্যভূমি, গণকবরের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেটি খুব কম মানুষই জানে। এসব স্থান চিহ্নিত না হওয়ায় এবং লোকজন ইতিহাস না জানায় সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

জরিপে দেখা যায়, ২০ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা সংঘটিত হয় খুলনায়—১ হাজার ১৫৫টি। এরপর পঞ্চগড়ে ৬৪৯টি।

মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘জরিপ করতে গিয়ে দেখেছি, আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বড় কম জানি। আমাদের মাথায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে বিজয়। খালি বিজয় দেখলে মুক্তিযুদ্ধের যে নিদারুণ যন্ত্রণা, সেটা কিন্তু আমরা পাব না।’

সূত্র: ২৩ মার্চ ২০১৯, ৯ চৈত্র ১৪২৫, শনিবার, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।