বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু একদিকে এর বহু তথ্য এখনো মানুষের অজানা, অন্যদিকে আছে নানা রকম অপপ্রচার। সেই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা ও সেগুলোর প্রকাশ ও প্রচার জরুরি। গতকাল মঙ্গলবার চেইন বুকশপ পূর্ব-পশ্চিমে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।

নতুন আসা বইটির নাম গণমাধ্যম ১৯৭১: বিশ্ব সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ। এর লেখক হারুন হাবীব। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, সেগুলো স্থান পেয়েছে। হারুন হাবীব সে সময় প্রবাসী সরকারের মুখপত্র জয়বাংলা পত্রিকার রণাঙ্গন সংবাদদাতা ছিলেন। গতকাল অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সে সময় সাংবাদিকতার হালচাল সম্পর্কে বইটি থেকে ধারণা পাওয়া যাবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনকণ্ঠ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বলেন, ‘৪০ বছর পর এখনো স্বাধীনতার ঘোষণা, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এমন তথ্য ছাপা হয়েছে। তারা মনগড়া তথ্য ছাপেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক সিডনি শনবার্গ বাংলাদেশের সব কটি জেলা ঘুরেছেন। সিডনি লিখেছেন, “এমন কোনো জায়গা বাংলাদেশে নেই যেখানে ২ থেকে ১০টি গণকবর ছিল না।” বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব লেখা ব্যাপকভাবে প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে।’

প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই প্রকাশের গুরুত্ব অনেক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় গণমাধ্যম মনস্তাত্ত্বিক লড়াই করেছে। সে সময় টাঙ্গাইল জয়ের খবর ১৬ বার স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচার হয়েছে। মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা দেওয়ার জন্য এই খবরগুলো তখন প্রচার হয়েছে। বেতারকেন্দ্রে উর্দু বিভাগ চালু হয়েছিল। কারণ পশ্চিমবঙ্গের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ তখন মুক্তিযুদ্ধকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন বলে মনে করছিলেন। তাঁদেরকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বোঝাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিকৃতির সীমারেখা থাকা দরকার। ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তথ্যবহুল গবেষণামূলক লেখা দরকার।’

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রথমা প্রকাশনের একাত্তরের চিঠির ২৬তম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, বিক্রি হয়েছে এক লাখের ওপর। এ থেকে বোঝা যায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের আগ্রহ এতটুকুও কমেনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবকিছুই ছাপা উচিত। কারণ এখনো বহু বিষয় আছে যা অজানা।’

প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন প্রজন্মের উৎসাহ আছে। বরং এ ক্ষেত্রে আছে জোগানের ঘাটতি। তথ্যপ্রমাণসমৃদ্ধ বই থেকে প্রেরণা নিয়ে নতুনেরা উজ্জীবিত হতে পারে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপিত মো. শফিকুর রহমান, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির বার্তাপ্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন পাক্ষিক অন্যদিন-এর নির্বাহী সম্পাদক ও অন্যপ্রকাশের অন্যতম পরিচালক আবদুল্লাহ নাসের।

সূত্র: ৮ নভেম্বর ২০১৭, ২৪ কার্তিক ১৪২৪, বুধবার, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।