বিজ্ঞাপন
default-image

একাত্তরের ৮ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০টায় দুই জিপভর্তি পাকিস্তানি সেনা একটা মাইক্রোবাসসহ ফজলুল হক চৌধুরীর ঢাকার বাসায় আসে। সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন এক কর্মকর্তা।

তখন ফজলুল হক চৌধুরী এশার নামাজ পড়ছিলেন। সেনা কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী আমিনা চৌধুরীকে বলেন, তোমার স্বামীকে জলদি আসতে বলো।

আমিনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন, তাঁর সঙ্গে কী দরকার? কর্মকর্তা বলেন, তাঁকে হেডকোয়ার্টারে যেতে হবে ইন্টারোগেশনের জন্য।

আমিনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে কখন বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। ওই সেনা কর্মকর্তা জানান, পরে জানানো হবে।

নামাজ শেষ হওয়ার পর তাঁকে সেনারা নিয়ে যায়। পরে আর ফিরিয়ে দিয়ে যায়নি তাঁকে (আমিনা চৌধুরীর রচনা, স্মৃতি ১৯৭১, চতুর্থ খণ্ড [১৯৯১], সম্পাদনা: রশীদ হায়দার)।

ফজলুল হক চৌধুরী পড়াশোনা শেষ করে ১৯৪৫ সালে সিভিল সাপ্লাই বিভাগে চাকরি নেন। ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) একই বিভাগে যোগ দেন।

পরে এ বিভাগের পরিচালক পদে উন্নীত হন। তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন ডিরেক্টর অব সল্ট পদেও কিছুদিন চাকরি করেন।

১৯৫৭ সালে ট্রেড সার্ভিস অব পাকিস্তানে তাঁকে বদলি করে অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তান হাইকমিশনে কমার্শিয়াল সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর সিঙ্গাপুরে ট্রেড কমিশনার নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের পাকিস্তান দূতাবাসে (লন্ডন) কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৯ সালে তাঁকে দেশে ডেকে পাঠিয়ে পিআইএর (পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস) পূর্বাঞ্চলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চাকরিবিধি অনুসারে তাঁর ঢাকায় থাকার কথা থাকলেও তাঁকে প্রধান কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।

এর অবস্থান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) করাচিতে। সেখানে অবস্থানকালে ফজলুল হক চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণে সোচ্চার ও প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন।

এ কারণে তিনি পাকিস্তানিদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম দিকে স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য ফজলুল হক চৌধুরী ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। স্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতা ও অসহযোগ আন্দোলনের কারণে তিনি আর করাচি ফিরে যাননি।

ফজলুল হক চৌধুরীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁকে কোথায় নেওয়া হয়েছে সে খোঁজ তাঁরা পাননি।

স্বাধীনতার পরও তাঁরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছেন। কোথাও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাঁর শহীদ হওয়ার সঠিক তারিখ জানা যায়নি।

ফজলুল হক চৌধুরীর জন্ম ২ এপ্রিল, ১৯২১ সালে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়।

তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মহরম আলী চৌধুরী। ঢাকায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন।

ফজলুল হক চৌধুরী এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

সূত্র: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (তৃতীয় পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৪)।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত