বিজ্ঞাপন
default-image

প্রফুল্ল কুমার নাগ ছিলেন একাধারে শিক্ষক, সমাজ ও সংস্কৃতিসেবী, রাজনীতিসচেতন মানুষ। তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিন ছেলেসহ বৃদ্ধ মানুষটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা।

শহীদ প্রফুল্ল কুমার নাগের জন্ম ১৮৯১ সালে তৎকালীন মানিকগঞ্জ মহকুমার হরিরামপুর উপজেলার উজানপাড়া গ্রামে। বাবা প্রসন্ন কুমার নাগ ছিলেন জোতদার, মা কুলোদা সুন্দরী নাগ গৃহিণী। তাঁর স্ত্রী হীরণবালা নাগ। তাঁদের সাত ছেলে ও চার মেয়ে।

ঝিটকা আনন্দমোহন নিম্নমাধ্যমিক স্কুলে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন প্রফুল্ল নাগ। মুক্তিযুদ্ধের সময় পদ্মা নদীর তীরে তাঁর বাড়িটি ছিল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আশ্রয়স্থল। রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের কাছে এ খবর পৌঁছে দেয়।

একাত্তরের ১৯ আগস্ট ভোরবেলায় হরিরামপুরের হরিণা পাকিস্তানি হানাদার সেনা ক্যাম্প থেকে একদল সেনা ও রাজাকার তিনটি নৌকায় করে এসে প্রফুল্ল নাগের বাড়িতে হামলা চালায়। তাঁর ছেলে ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রবন্ধ কুমার নাগ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজাকাররা প্রফুল্ল নাগকে ধরে ফেলে নৌকায় তুলে আনে। এরপর ঘাতক সেনা ও রাজাকাররা প্রফুল্ল কুমার নাগ তাঁর বড় ছেলে পার্বতী কুমার নাগ, মেজ ছেলে প্রতাপ কুমার নাগ, ছোট ছেলে পবিত্র কুমার নাগসহ পাঁচজনকে নৌকায় তুলে হরিণা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

ঘাতকের দল হরিণা ক্যাম্পে এনে একটি কক্ষে পবিত্র নাগকে আটকে রাখে। প্রফুল্ল ও তাঁর অপর তিন ছেলেকে অন্য কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে প্রফুল্ল নাগ, পাবর্তী নাগ, প্রবন্ধ নাগ ও প্রতাপ নাগকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়। স্বজনেরা তাঁদের কারও লাশ পাননি। ঘাতকেরা পরে পবিত্র নাগকে ছেড়ে দেয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে প্রফুল্ল কুমার নাগের ছবি ও তথ্য পাঠান মানিকগঞ্জের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইয়ে প্রফুল্ল কুমার নাগের জীবনী রয়েছে।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও পবিত্র নাগের সহবন্দী মানিকগঞ্জের ঘিওরের নালী ইউনিয়নের কলতা এলাকার ধীরেন্দ্রনাথ সাহা। তিনি বলেন, তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন। হানাদার সেনারা অনেকের সঙ্গে তাঁকেও হরিণা ক্যাম্পে আটকে রাখে। তবে বয়স অল্প ছিল বলে ছেড়ে দেয়।

প্রফুল্ল নাগের নাতি (শিক্ষক প্রবন্ধ নাগের ছেলে) পরিমল কুমার নাগ সিঙ্গাইর নবগ্রাম বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দাদিকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও নগদ দুই হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছিলেন। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও তাঁর দাদা ও বাবা কেউই শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি পাননি।

গ্রন্থনা: আবদুল মোমিন, মানিকগঞ্জ