বিজ্ঞাপন
default-image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন ড. মো. সাদত আলী।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। একাত্তরের ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিলেন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য।

সেদিন কার্জন হল এলাকায় তাঁর আত্মীয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। আমিনুল ইসলাম তাঁকে টাকা তুলে তাঁর বাসায় যেতে বলেছিলেন।

তিনি তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু মো. সাদত আলী তাঁর বাসায় যাননি। তখন তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।

পরে জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে টহলরত পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। এরপর আমিনুল ইসলাম কোথাও তাঁর খোঁজ পাননি।

মো. সাদত আলীর মেয়ে মাহমুদা আকতার আলীর ‘আমার বাবা’ রচনায় এ ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া যায়।

মাহমুদা আকতার লিখেছেন, ‘তিনি ২৬ এপ্রিল ১৯৭১ সালে ঢাকায় আসেন। এ সময় আমার খালাতো ভগ্নির স্বামী ড. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে দেখা হয়।

বাবা তাঁকে জানান ব্যাংক থেকে টাকা তুলে তাঁর বাসায় যাবেন। কিন্তু আজ অবধি তা হয়নি। কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন
আমার বাবা।’ (স্মৃতি: ১৯৭১, অষ্টম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ ১৯৯৫, সম্পাদনা রশীদ হায়দার)।

নরসিংদী জেলার রসুলপুর গ্রামের সাধারণ এক পরিবারে ১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারি মো. সাদত আলীর জন্ম।

বাবা মো. হযরত আলী, মা মমতাজের নেসা। পড়াশোনা শুরু গ্রামের জুনিয়র স্কুলে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

১৯৫৬ সালে গাজীপুর জেলার গাছা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে এই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন।

মো. সাদত আলীর স্কুলজীবন কাটে লজিংয়ে থেকে। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালেই তিনি বাংলা-ইংরেজি অভিধান মুখস্থ করে ফেলেছিলেন।

রসুলপুর জুনিয়র স্কুলের এক শিক্ষক তাঁকে এ টি দেবের অভিধান থেকে এক বসায় দুই হাজার শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করেছিলেন। সব শব্দের সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন তিনি।

১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট (আইকম) পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৩ সালে বিকম ও ১৯৬৪ সালে এমকম পাস করেন।

মো. সাদত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে নরসিংদী কলেজে বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।

এখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রে যোগ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় তিনি আমেরিকার কলোরাডো স্টেট কলেজে যান উচ্চশিক্ষার্থে। ১৯৬৯ সালের প্রথমার্ধে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

একই বছরের ৩১ মে তিনি সিনিয়র লেকচারার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭০ সালের ৮ জুন শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।

জ্ঞানপিপাসু মো. সাদত আলী শুধু নিজের বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। ১৯৭১ সালে তিনি অর্থনীতিতে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ।

কথা হয় মো. সাদত আলীর ছোট মেয়ে শাহিদা আকতার আলীর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘কী হবে বাবার স্মৃতির ঝুড়ি আপনাদের সামনে খুলে?

সেই তো বাৎসরিক অনুষ্ঠান, বাবার ব্যবহৃত জিনিসের প্রদর্শনী। কোনো কোনো পত্রিকায় আমার বাবার নাম আসে কখনো সাবেত আলী, কখনো সাদেক।

স্ট্যাম্প সাইজের যে ছবি ছাপা হয়, তাতে চতুর্থ সারির চতুর্থ জনই আমার বাবা শহীদ ড. সাদত আলী। এটা দেখে দুঃখ ও অভিমান হয় এই দেশ ও জাতির ওপর।’

মো. সাদত আলী তিন কন্যাসন্তানের জনক। বড় মেয়ে মাহমুদা আকতার আলী, মেজো মেয়ে ফাহমিদা আকতার আলী ও ছোট মেয়ে শাহিদা আকতার আলী। স্ত্রী আজিজুন নাহার।

সূত্র: ড. আমিনুল ইসলাম। প্রতিকৃতি: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (চতুর্থ পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৫) থেকে।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান

[email protected]

সূত্র: ১৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত