বিজ্ঞাপন
default-image

স্কুলশিক্ষক খন্দকার রেজাউন নবীকে নাটোর শহরের বাড়ি থেকে অবাঙালিদের সহযোগিতায় তুলে নেয় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা। মা আর ভাই গিয়েছিলেন তাঁকে ফিরিয়ে আনতে। তাঁদের সবাইকেই নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বর্বর পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালিরা। ঘটনাটি ঘটে একাত্তরের ১৫ এপ্রিল।

হানাদার সেনারা নাটোর শহরে প্রবেশ করে ১২ এপ্রিল। তখন সেখানে ছিল বিপুলসংখ্যক অবাঙালির বাস। এদের সহযোগিতায় হানাদাররা অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও গণহত্যা চালাতে থাকে। ১৫ এপ্রিল তারা শহরের চকবৈদ্যনাথ মহল্লার বাড়ি থেকে বনবেলঘড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খন্দকার রেজাউন নবীকে ফুলবাগান সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়।

তাঁর মুক্তির জন্য মা তরিফুন নেছা ও বড় ভাই খন্দকার রমজান আলী সাত ভরি স্বর্ণালংকার ও তিন হাজার টাকা নিয়ে ক্যাম্পে যান। ঘাতকেরা নবীকে ছাড়েনি। অগত্যা তারা শহরের তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবীকে ছাড়িয়ে আনার অনুরোধ করেন। কেউ সাড়া পাননি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে শহরের লালবাজার কালীবাড়ির সামনে হানাদারদের দোসর অবাঙালিরা তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি।

একই রাতে হানাদার সেনারা খন্দকার রেজাউন নবীকেও হত্যা করে। তবে শহীদের সরকারি তালিকায় তাঁদের নাম ওঠেনি। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে খন্দকার রেজাউন নবীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে তাঁর পরিচিতিসহ এই হত্যাকাণ্ডের বিবরণ রয়েছে।

শহীদ খন্দকার রেজাউন নবীর জন্ম ১৯৪৪ সালে নাটোরের চকবৈদ্যনাথ মহল্লায়। বাবা খন্দকার নজির উদ্দিন ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তিনি নাটোর নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহসভাপিত (ভিপি) ছিলেন। ম্যালেরিয়া উৎখাত অভিযান প্রকল্পে (এমইপি) কাজ করেছেন।

শহীদ রেজাউন নবী ছিলেন বিদ্যানুরাগী। তিনি নাটোর শহরের বনবেলঘরিয়া মহল্লায় নিজেদের জায়গায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু তিনি এর অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তাঁর নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বনবেলঘড়িয়া শহীদ রেজাউন নবী উচ্চবিদ্যালয়’। আর নাটোর পৌরসভা শহরের একটি সড়কের নামকরণ করেছে ‘শহীদ খন্দকার রেজাউন নবী সড়ক’। এ ছাড়া এলাকাবাসী তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১৩ সালে চকবৈদ্যনাথ গ্রামে ‘শহীদ খন্দকার রেজাউন নবী স্মৃতি সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বিয়ে করেননি। তাঁর বড় ভাইয়ের জামাই নাটোর নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে খন্দকার রেজাউন নবীর নাম এবং গণশহীদের তালিকায় তাঁর মা তরিফুন নেছা ও বড় ভাই খন্দকার রমজান আলীর নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

গ্রন্থনা: মুক্তার হোসেন, নাটোর