বিজ্ঞাপন
default-image

এম এ সাঈদ প্রথমে ছিলেন দৈনিক আজাদ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসেবক-এর নিজস্ব সংবাদদাতা। পরবর্তীকালে দৈনিক পাকিস্তান, ডেইলি অবজারভার, পয়গাম প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

শুধু সাংবাদিকতা নয়, সংবাদপত্রের পাঠক সৃষ্টির প্রতিও তাঁর মনোযোগ ছিল। তিনি নিজে সাইকেলে করে তৃণমূল পর্যায়ে পত্রিকা পৌঁছে দিতেন। রাজশাহীতে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না, ছিলেন নাট্যসংগঠক ও শিল্পীও। কৌতুকাভিনয় করতেন। একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের সময় রাজশাহীর সাংবাদিক, শিল্পী ও সাহিত্যিক সংগ্রাম পরিষদের তিনি ছিলেন আহ্বায়ক।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গোপনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে নানা কাজ করতে থাকেন। তাঁর সে কর্মকাণ্ড গোপন থাকেনি।

স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীরা তাঁকে চিহ্নিত করে ফেলে। ২৮ জুন পাকিস্তানি সেনারা এম এ সাঈদকে তাঁর ষষ্ঠীতলার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের তথ্যসংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমানের (বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই) কাছ থেকে।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শহীদ এম এ সাঈদের স্ত্রী শামসুন নাহারের স্মৃতিচারণা থেকে জেনেছি, ২৮ জুন দুপুরে তিনি তাঁর ষষ্ঠীতলার বাড়িতে খাবার খাচ্ছিলেন।

এমন সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন তাঁর ছেলে বুলবুলকেও সেনারা নিয়ে যায়।

তাঁর স্ত্রী স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তিনি জানান, ব্যাপারটা দেখবেন। আয়েন উদ্দিনের কথায় তিনি আস্থা পাননি। তাই পাকিস্তানিদের দোসর সাংবাদিক আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁকে সঙ্গে করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে যান তাঁর স্বামীর খোঁজে।

সেখানে খোঁজ মেলেনি। পরদিন আয়েন উদ্দিন তাঁর স্ত্রীকে জানান, সন্ধ্যার মধ্যে সাংবাদিক সাঈদকে সেনারা ছেড়ে দেবে।

সন্ধ্যার পর তাঁর ছেলে ফিরে আসে। কিন্তু এম এ সাঈদ আর ফিরে আসেননি। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া একজনের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, ৫ জুলাই পাকিস্তানি সেনারা কয়েকজন বন্দীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন রেললাইনের ধারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার পর গর্তে মাটিচাপা দেয়।

সেই বন্দীদের মধ্যে নাকি এম এ সাঈদও ছিলেন। তবে সেই বধ্যভূমি তাঁরা খুঁজে পাননি।’

এম এ সাঈদের জন্ম নরসিংদী জেলায়। বাবা মাহতাব মিয়া, মা কুলসুম বিবি। পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দোয়াইগাঁ গ্রামে।

১৯৪৯ সালে কৃষি বিভাগে চাকরি নিয়ে তিনি রাজশাহী যান। পরে এখানেই স্থায়ী হন। পরিবারের সদস্যদের কাছে তাঁর শিক্ষাগত কোনো তথ্য নেই। তাঁর দুই স্ত্রী সালেহা বেগম ও শামসুন নাহার। সাত ছেলে ও সাত মেয়ে।

স্বাধীনতার পর তাঁর নামে রাজশাহী পৌরসভা ষষ্ঠীতলার একটি রাস্তার নামকরণ করেছে।

এ ছাড়া স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা একসময় রাজশাহীতে তাঁর নামে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ করেছিলেন। মঞ্চটি এখন নেই।

স্কেচ: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (চতুর্থ পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৫) থেকে।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান

[email protected]

সূত্র: ১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত