বিজ্ঞাপন
default-image

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অধ্যাপক এ বি এম আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া। তাঁর আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে মারণাস্ত্র সজ্জিত বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘুমন্ত বাঙালির ওপর।

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকাতেই সপরিবার থাকতেন জেনারেল অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আশরাফুল ইসলাম ভূইয়া। স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ছোট সংসার। পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ময়মনসিংহ ছেড়ে গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার দক্ষিণবাগে চলে আসেন; কিন্তু বিপদ পুরোপুরি এড়ানো গেল না। তাঁর বড় ভাই এ কে এম সাইফুল ইসলাম ভূইয়াকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা করে। এ ঘটনায় তাঁর নিয়তিও বদলে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ছেলে মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলামের বয়স ছিল চার বছর এবং মেয়ে রুমার বয়স নয় মাস। বাবাকে নিয়ে একটি মর্মস্পর্শী লেখা আছে শাহেদুলের ‘আমার বাবা’ শিরোনামে (রশীদ হায়দার সম্পাদিত বাংলা একাডেমির স্মৃতি: ১৯৭১ পুনর্বিন্যাসকৃত প্রথম সংস্করণ)। তিনি লিখেছেন, ‘বাবা, এ তো এক রহস্যময় শব্দ।

আমার জীবনের অভিধান থেকে এ শব্দটি হারিয়ে গেছে অ-নে-ক আগে, আর ছোট বোন রুমার অভিধানে এ শব্দটি প্রবেশই করেনি কখনো—মাত্র নয় মাস বয়সে হারিয়েছে সে তার বাবাকে।’

জানা যায়, আশরাফুল ইসলাম কাউকে কিছু না জানিয়ে একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তারপর আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাঁকে নিয়ে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ডাক বিভাগ।

আশরাফুল ইসলাম ভূইয়ার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৃত্তি নিয়ে টেক্সাস এ অ্যান্ড এস কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৬৪ সালে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন।

সংশোধনী

এই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রথমে যে ছবিটি দেওয়া হয়েছিল, তা অধ্যাপক এ বি এম আশরাফুল ইসলাম ভূইয়ার নয় বলে তাঁর ছেলে ও মেয়ে জানিয়েছেন। এই ছবি নেওয়া হয়েছিল চন্দ্রদ্বীপ প্রকাশনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ডাকটিকেট বই থেকে।

তাঁর ছেলের কাছ থেকে পেয়ে আগের ছবিটি বাদ দিয়ে নতুন ছবি দেওয়া হলো। ছেলে প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, স্মৃতি: ১৯৭১ বইতে তাঁর লেখায় বাবার জন্মতারিখ ভুল ছিল। তাঁর বাবার জন্ম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ওই লেখায় প্রসঙ্গক্রমে তিনি শুধু নিজের ও ছোট এক বোনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা তিন বোন ও এক ভাই। বড় বোন দিলরুবা আশরাফ গৃহিণী। তিনি দ্বিতীয় সন্তান, বর্তমানে সৌদি আরবে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। পরের বোন রিফাত আরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং ছোট বোন আয়শা আশরাফ অধ্যাপনা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে।