বিজ্ঞাপন
default-image

কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চৌদ্দগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চৌদ্দগ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে। এ সড়কের কিছু অংশ সীমান্তের খুব কাছ ঘেঁষা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ সড়কে নিয়মিত টহল দিত। চৌদ্দগ্রাম-মিয়াবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিল তাদের ক্যাম্প। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে টহলদলের ওপর বা ওই সব ক্যাম্পে আক্রমণ চালাতেন।

এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি আবদুল মান্নানসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সীমান্ত অতিক্রম করে চৌদ্দগ্রামে অবস্থান নেয়। তাদের লক্ষ্য, পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করা। চৌদ্দগ্রামে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান, পাকিস্তানি সেনাদের একটি টহলদল কুমিল্লা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে ফেনীর দিকে গেছে।

মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদল যখন ফিরে আসবে, তখন তাঁরা তাদের আক্রমণ করবেন। এরপর আবদুল মান্নানসহ মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অবস্থান নেন ওই সড়কের সদর উপজেলার অন্তর্গত হাজতখোলায় (১৯৭১ সালে চৌদ্দগ্রামের অন্তর্গত)।

মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগের কাছে হালকা অস্ত্র—স্টেনগান, রাইফেল ও কিছু হ্যান্ড গ্রেনেড। ভারী অস্ত্র বলতে একটি এলএমজি ও দু-তিনটি এসএমজি। তাই সম্বল করে তাঁরা সেখানে অপেক্ষায় থাকেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদলের জন্য। তারপর সময় গড়াতে থাকে। একসময় সেখানে উপস্থিত হয় পাকিস্তানি সেনাদের টহলদল। আবদুল মান্নান ও তাঁর সহযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত। তবে নিমেষেই তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি। অস্ত্রশস্ত্রও ছিল অত্যাধুনিক। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্মুখযুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকে না। আবদুল মান্নান ও তাঁর সহযোদ্ধারা এতে বিচলিত হননি। সাহসের সঙ্গে আক্রমণ মোকাবিলা করেন। তাঁদের নির্ভুল গুলিবর্ষণে হতাহত হয় অনেক পাকিস্তানি সেনা।

এই সম্মুখযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হন। পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে নিহত ও আহত সেনাদের নিয়ে কুমিল্লায় পালিয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধের একপর্যায়ে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আবদুল মান্নান। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করার আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ।

আবদুল মান্নান চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ শেষে ভারতে যান। ফিরে এসে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান