বিজ্ঞাপন
default-image

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায় তখন। ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর। মুক্তিবাহিনীর ছোট একটি দল চৌগাছার হিজলীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি টহলদলকে অ্যামবুশ করে। আক্রমণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলে ছিলেন আসাদ আলী মোল্লা।

চৌগাছা যশোর জেলার অন্তর্গত এবং হিজলী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত-ঘেঁষা এলাকা। এখানে আছে একটি সীমান্ত চৌকি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হিজলীতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়মিত আনাগোনা ছিল। সেদিন আসাদ আলীসহ মুক্তিযোদ্ধারা সকালে সীমান্ত অতিক্রম করে সেখানে গোপনে অবস্থান নেন। সকাল নয়টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলদল অ্যামবুশস্থলে হাজির হলে আসাদ আলীসহ মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র গর্জে ওঠে। তীব্র গোলাগুলির মুখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওই টহলদলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনারা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে।

আক্রান্ত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য পাশের ঘাঁটি থেকে দ্রুত সাহায্য চলে আসে। এরপর পাকিস্তানি সেনারাই মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে পাল্টা আক্রমণ চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র দলটি বেশ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এ সময় আসাদ আলী অত্যন্ত ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। চরম বিপদেও তিনি ভেঙে পড়েননি।

আসাদ আলী তখন সাহসের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেন। এর মধ্যে মুক্তিবাহিনীর বয়রা সাবসেক্টরে পৌঁছে যায় তাঁদের সংকটের খবর। সেখান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন দল এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি সাপোর্টও তাঁরা পান। তখন পাকিস্তানি সেনারা পুনরায় চাপের মধ্যে পড়ে। দিশাহারা অবস্থায় তারা সহযোদ্ধাদের মৃতদেহ ও নিজেদের অনেক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে কোনো রকমে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে সেদিন আসাদ আলীদের দলের একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছয়-সাতজন নিহত ও আহত হয় অনেকে।

আসাদ আলী ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে যশোর সেক্টরের ৪ নম্বর উইংয়ের অধীনে যাদবপুরে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর পদবি ছিল হাবিলদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৭ মার্চ যাদবপুর ক্যাম্পে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন সাদেক (৪ নম্বর উইংয়ের সহকারী কমান্ডার) এসে তাঁদের অস্ত্র জমা দিতে বলে। তখন তাঁরা বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেন। সেদিন ক্যাপ্টেন সাদেক ও তার দলবল তাঁদের হাতে মারা পড়ে। এরপর বিভিন্ন স্থানে তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। প্রতিরোধযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

আসাদ আলী প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। একটি ছোট দলের নেতৃত্বে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধেই তিনি পুরোভাগে থাকতেন।

সূত্র: একাত্তরের বীরযোদ্ধা: খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০১৩

সম্পাদক: মতিউর রহমান, সংগ্রহ ও গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান