বিজ্ঞাপন
default-image

পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য পাখতুন নেতা সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। সীমান্ত গান্ধীর বিবৃতির অনুলিপি ২২ মে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সাংবাদিকদের কাছে বিলি করা হয়।

আফগানিস্তানের কাবুল থেকে দেওয়া বিবৃতিতে সীমান্ত গান্ধী বলেন, পাকিস্তান সরকারকে তিনি জানিয়েছিলেন, তারা দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে চাইলে শেখ মুজিব ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়া করার জন্য মধ্যস্থতা করতে তিনি রাজি আছেন। কিন্তু পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি তিনি।

সীমান্ত গান্ধী বলেন, পাকিস্তান ধ্বংস হলে তা হবে ভুট্টো ও কাইয়ুম খানের ভুল নীতির জন্য। পূর্ব পাকিস্তানের অপরাধ হলো, তারা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। ৬ দফা যদি পাকিস্তানের সংহতির পক্ষে বিপজ্জনকই হয়, তাহলে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ কেন গোড়াতেই এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেনি? তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা প্রকৃত মুসলমান। তাদের চেষ্টাতেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা। বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যাগরিষ্ঠরা কেন দেশ ভাঙতে চাইবে?

সীমান্ত গান্ধী বলেন, পাকিস্তান সব সময়ই ধর্মের নামে হঠকারিতা করেছে। অযথা বলপ্রয়োগে পরিস্থিতির সুরাহা হবে না। পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে ভ্রান্ত ও মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে পাঞ্জাবের পুঁজিপতি ও সমর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের জন্য জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে এই দিন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ নামে নতুন একটি সংগঠন গঠন করেন। এর সভাপতি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ আর মল্লিক। কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা হলেন সৈয়দ আলী আহসান, খান সারওয়ার মুরশিদ, কামরুল হাসান, রণেশ দাশগুপ্ত, জহির রায়হান, ব্রজেন দাস, মুস্তাফা মনোয়ার, ফয়েজ আহমদ, ওয়াহিদুল হক, মওদুদ আহমদ, অনুপম সেন প্রমুখ।

ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এদিন দিল্লিতে বলেন, পাকিস্তানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই। তবে পূর্ব বাংলার চলমান ঘটনায় ভারতের বিশেষ উদ্বেগের কারণ ঘটছে। ভারত পূর্ব বাংলায় এমন অবস্থা চায়, যাতে শরণার্থীরা সেখানে ফিরে নিরাপদ বোধ করে এবং নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম আসামের করিমগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় দুটি এবং হলদিবাড়ীতে একটি শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতীয় এলাকায় গোলাগুলি করতে থাকলে ভারতের পক্ষে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা সম্ভব হবে না। এ সময় আসামের মুখ্যমন্ত্রী মহেন্দ্রমোহন চৌধুরী তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

দিল্লিতে জনসংঘ তাদের সংসদীয় দলের সভায় বাংলাদেশ নিয়ে লোকসভায় জানায়, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় সরকারকে তারা নিন্দা জানাবে। জনসংঘ দলের সভাপতি অটল বিহারি বাজপেয়িকে এ ব্যাপারে অন্য বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার ভার দেওয়া হয়।

অবরুদ্ধ বাংলাদেশে

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মিয়া তোফায়েল নতুন করে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন দাবি করে একটি বিবৃতি দেন।

শরীয়তপুরে একটি পাকিস্তানি সেনাদল বেশ কিছু গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে নির্বিচার বহু মানুষকে হত্যা করে।

পিরোজপুরে মঠবাড়িয়ার হিন্দু-অধ্যুষিত ভিমনালি গ্রামে এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর স্থানীয় সহযোগীরা আক্রমণ করে ১৫ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং ব্যাপক লুটতরাজ চালায়।

সূত্র: পূর্বদেশদৈনিক পাকিস্তান, ২৩ মে ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকাযুগান্তর ভারত, ২৩ মে ১৯৭১

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান