বিজ্ঞাপন
default-image

জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট ১৯ মে নিউইয়র্কে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে দলে দলে শরণার্থী ভারতে উপস্থিত হওয়ায় জাতিসংঘ খুবই চিন্তিত। এখনো নারী-শিশুসহ দলে দলে শরণার্থী ভারতে আসছে। তাদের আশু সাহায্য প্রয়োজন। উ থান্ট শরণার্থীদের শিগগিরই নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা জানিয়ে বলেন, তার আগপর্যন্ত আপৎকালীন ভিত্তিতে ব্যাপক বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘের সমস্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের সরকার ও বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তারা এই মর্মন্তুদ পরিস্থিতিতে মানবকল্যাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানাচ্ছে।

ব্রিটিশ কমন্স সভায় বিরোধী দলের সদস্য ব্রুস ডগলাসম্যান নিজ দল লেবার পার্টির এক বৈঠকে বলেন, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ করা অসম্ভব। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই যুদ্ধ চালানোর জন্য পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে লাভ হবে না। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে পাকিস্তানকে যত দ্রুত এই সত্য উপলব্ধি করাতে পারবে, ততই লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।

জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক আশাহি শিম্বুন এই দিন পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কিছুদিন আগে হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের জের এখনো মেটেনি। এখন চলছে সেনাবাহিনীর অত্যাচার। সামনে বর্ষা; দুর্ভিক্ষ, মহামারি অনিবার্য। এ অবস্থাতেও বাংলাদেশে সাহায্য পাঠাতে জাতিসংঘ ও রেডক্রসের প্রস্তাব কেন পাকিস্তান অগ্রাহ্য করল, সবার কাছে এ প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে।

মিসরে সফররত ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ কায়রোয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আরবদের শুভার্থী হিসেবে ভারত আশা করে এই রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে।

ভারতে বাংলাদেশের পক্ষে কার্যক্রম

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সংবিধান ও সংসদবিষয়ক পঠন সংস্থা দেশটির বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ সাবেক বহির্বিষয়ক মন্ত্রী এম সি চাগলা, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি কে কৃষ্ণমেনন, দুজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল শীতলাবাদ ও সি কে দফতরি এবং এল এম সিংভির লেখা নিয়ে বাংলাদেশের ওপর একটি বই প্রকাশ করে। লেখকেরা বলেন, বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

কলকাতা গ্রামোফোন কোম্পানি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘বাংলা আমার বাংলা’ নামে দুটি গানের রেকর্ড প্রকাশ করে। একটিতে সলিল চৌধুরী রচিত তিনটি গান গেয়েছেন মান্না দে, সবিতা চৌধুরী ও সহশিল্পীরা। অন্য রেকর্ডটি রবীন্দ্রসংগীতের। দুটি গান ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গেয়েছেন মান্না দে। শিল্পীরা এই রেকর্ডের রয়্যালটির টাকা স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বতোভাবে সাহায্য করার জন্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এদিন কলকাতায় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে উপাচার্য কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করেন। বৈঠকে সাত বিশ্ববিদ্যালয়—কলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী, কল্যাণী, বিশ্বভারতী, বর্ধমান ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের শিক্ষকদের পশ্চিমবঙ্গে পরিদর্শক শিক্ষক হিসেবে সাময়িকভাবে নিয়োগের ব্যাপারটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়।

সূত্র: পূর্বদেশ, ২০ মে ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ২০ ও ২১ মে ১৯৭১; যুগান্তর, ভারত ২০ মে ১৯৭১

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান