বিজ্ঞাপন
default-image

বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক ভারত-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে ৩ অক্টোবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে একটি বিবৃতি দেয়। মুজিবনগরে দেওয়া এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকার অভিমত প্রকাশ করে যে ক্রেমলিন বাংলাদেশ সমস্যাটি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার মর্যাদা দেওয়ার এবং তাদের অনপনেয় ও আইনানুগ স্বার্থরক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষে৵ উপনীত হওয়ার সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন রয়েছে। ২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভারত-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতি পর্যালোচনা করা হয়।

নেপালের পাকিস্তানি দূতাবাসের বাঙালি কূটনীতিক ও দূতাবাসের দ্বিতীয় প্রধান মুস্তাফিজুর রহমান এ দিন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর আনুগত্য ঘোষণা করেন। কাঠমান্ডুতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর এ সিদ্ধান্ত জানান। বাংলাদেশে পাকিস্তানের সামরিক তৎপরতা শুরু হওয়ার পর তিনিই দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন।

১ নম্বর সেক্টরের একদল মুক্তিযোদ্ধা ভোরে ফেনীর ছাগলনাইয়ার আমজাদহাটে পাকিস্তান বাহিনীর ঘাঁটির পাশে অ্যামবুশ পাতেন। তাঁরা ২ অক্টোবর গভীর রাতে ঘাঁটির রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ৩ অক্টোবর ভোর পাঁচটার দিকে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাংকার থেকে বের হওয়া মাত্র মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করলে দুজন মারাত্মক আহত হয়।

এই সেক্টরের আরেক দল মুক্তিযোদ্ধা পরশুরাম, অনন্তপুর, বিলোনিয়া ও ফুলগাজী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। একটি দল মুহুরী নদী পার হয়ে পরশুরামে অবস্থান নিলে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। অনন্তপুরে পাকিস্তানি বাহিনী তিন দিক আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েন। কয়েকজন পাকিস্তানিও হতাহত হয়। প্রায় একই সময়ে বিলোনিয়া সীমান্তে এবং ফুলগাজীতে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। বিলোনিয়া সীমান্তে পাকিস্তানিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়।

আরও সমর্থন

সোভিয়েত আফ্রো-এশীয় সংহতি কমিটি আরও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে এ দিন একযোগে বাংলাদেশে উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। প্রাভদায় প্রকাশিত এ বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর বিচারকে প্রহসন বলে আখ্যা দেওয়া হয়। সংহতি কমিটি ঘোষণা করে, তারা চায় শান্তিকামী লোকদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ হোক। বন্ধ হোক পূর্ব বাংলার প্রগতিবাদী রাজনৈতিক নেতাদের বিচার। শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করা হোক।

জাপানের মাইনিচি ডেইলি নিউজ জানায়, বাংলাদেশের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে জাপান যোগ দেবে। জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী সংস্থা এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য দুজন প্রতিনিধি পাঠাবে।

শরণার্থীরা বাংলাদেশে ফিরছে না

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের (কংগ্রেস) বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য কংগ্রেসম্যান পিটার ফ্রেলিং গুসেন কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত মাচে৴ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি জঙ্গি শাসকদের আক্রমণের পর যাঁরা প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের স্থাপিত কেন্দ্রে একজন শরণার্থীও তাঁর নজরে পড়েনি। শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের ঘটনায় ভারতের পূর্ব জার্মানির মিশন দেশটির জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে ৭ অক্টোবর দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও মাদ্রাজে অনুষ্ঠেয় এ বছরের অনুষ্ঠানটি পূর্ব জার্মান সরকার এ দিন বাতিল করে। দিল্লিতে পূর্ব জার্মানির কনসাল জেনারেল এইচ ফিশার সাংবাদিকদের কাছে এ ঘোষণা দেন। ওই উৎসবের জন্য বরাদ্দ অর্থ শরণার্থী ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হবে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল সকালে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় বেলগাছিয়া গ্রামে হামলা করলে ১০ জন গ্রামবাসী নিহত হন। পাকিস্তানি সেনারা কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে প্রায় ৫০০ গ্রামবাসী প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের শিকারপুরে চলে যান। খবর পেয়ে শিকারপুরে অবস্থানরত একদল মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে আক্রমণ করেন। কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেলে গ্রামবাসী আবার বেলগাছিয়া চলে যান।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক; আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত ৪ ও ৫ অক্টোবর ১৯৭১

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান