বিজ্ঞাপন
default-image

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি করা হয়েছিল ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে। বস্তুত তখন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহর। ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় তাঁকে সেনানিবাস থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে এনে রাতে সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানযোগে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রতিরোধযুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম সেনানিবাসের বাইরে এসে দিনভর মেডিকেল কলেজ এবং আশেপাশের পাহাড়ে সমবেত হয়ে সন্ধ্যায় আক্রমণ শুরু করে। ইপিআর সেনাদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিবাহিনী সে আক্রমণ প্রতিহত করে।

পাবনায় ক্যাপ্টেন রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা একদল পাকিস্তান সেনাকে আক্রমণ করে। ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মেজর আসলাম ও ক্যাপ্টেন ইশফাকসহ ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা তাতে নিহত হয়। জীবিতরা রাজশাহীর দিকে যাওয়ার পথে জনতার হাতে প্রাণ হারায়।

লালমনিরহাটে বাঙালি-অবাঙালি ইপিআর সেনাদের মধ্যে যুদ্ধে লুৎফর রহমান শহীদ হন।

সুনামগঞ্জে ইপিআর সদস্যদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করে। যুদ্ধে ইপিআর সেনা আবদুল হালিম পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে শহীদ হন।

প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে আটক প্রায় ১০০ জন বাঙালি ইপিআর সদস্যকে তিন ভাগে রাতের বেলা রমনা কালীবাড়ির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের হত্যা করে।

যুক্তরাজ্যের কমন্সসভায় বিতর্ক

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের কমন্স সভায় এই দিন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ-বিষয়ক সচিব স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম সেখানে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলেন, কমনওয়েলথের সদস্য হিসেবে এবং স্বাভাবিক অবস্থার পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় আশা করি, হাউজের সবাই পাকিস্তানের প্রাণহানির জন্য আমার সঙ্গে দুঃখ প্রকাশে একাত্মতা জানাবেন।

ময়মনসিংহে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলের শপথ

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি ব্যাটালিয়ন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট মেজর কে এম সফিউল্লার নেতৃত্বে ২৮ মার্চ জয়দেবপুরে বিদ্রোহ করে ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেয়। ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা টাউন হলে এক সমাবেশে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন।

সকালে ময়মনসিংহের রাবেয়া মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে ইপিআর বাহিনী এবং হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

দিনাজপুরে ইপিআরের বিদ্রোহ

রাতে দিনাজপুর ইপিআর সেক্টরের বাঙালি ইপিআররা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। বিদ্রোহে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ এম আবদুর রহিম মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের কথ্য ইতিহাস প্রকল্পে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কুঠিবাড়িতে দিনাজপুরে ইপিআর সেক্টরের অবাঙালি কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোরেশি। ২৯ মার্চ আবদুর রহিম কয়েকজন বাঙালি ইপিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল। যোগাযোগের পরে বিদ্রোহ করে। তারা গোলাগুলি শুরু করলে পাকিস্তানি ও অবাঙালিরা পাল্টা হামলা চালায়। তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানিরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বাঙালি ইপিআর সদস্যরা এর পর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসে। বিদ্রোহে তাঁদের নেতৃত্ব দেন ইপিআর বাহিনীর প্রবীণ বাঙালি সুবেদার মেজর এ রব।

রাতের অন্ধকারে সেখানকার সার্কিট হাউস থেকে পাকিস্তানি সেনারাও পালিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, ত্রয়োদশ খণ্ড; বাংলাদেশ জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস, সম্পাদক: আবদুল কাদের কাদেরী, সংঘ প্রকাশন; মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ, কে এম সফিউল্লাহ, আগামী প্রকাশনী; মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর: অংশগ্রহণকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, মাওলা ব্রাদার্স