বিজ্ঞাপন
default-image

আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে এই দিন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের আজ ১৫তম দিবস। বেলা ১১টার কিছু আগে বঙ্গবন্ধু গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনের (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা) বৈঠকে যোগ দেন। তাঁর পরনে ছিল সফেদ পায়জামা-পাঞ্জাবি আর হাতাকাটা গলাবন্ধ কোট। শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান ফটকে পৌঁছালে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান। রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুরু হয় একান্ত আলোচনা। চলে আড়াই ঘণ্টা।

আলোচনা শেষে ইয়াহিয়া বারান্দার সিঁড়ি পর্যন্ত এসে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান ফটকে পৌঁছালে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, আরও হবে। কাল সকালে আরেকটি বৈঠক। আপাতত আর বেশি কিছু বলার নেই।’

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি ধানমন্ডির বাসভবনে ফিরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিকেল পর্যন্ত বৈঠক চলে। রাত আটটায় সহকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু আবার আলোচনায় বসেন। বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

দুই দফা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে বিকেলে বঙ্গবন্ধু কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন।

অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৬ মার্চও অফিস-আদালত ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়া সর্বত্র কালো পতাকা ওড়ে। সারা দেশে চলে সভা ও শোভাযাত্রা।

মিছিল আর সমাবেশ: মুহুর্মুহু মিছিলে ঢাকা উত্তপ্ত হতে থাকে। ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের সমাবেশ হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা ও মিছিল করেন চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা। মিছিলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী মুর্তজা বশীর নেতৃত্ব দেন। একই জায়গায় বিকেলে শিল্পী ও সাহিত্যিকেরা কবিতাপাঠ ও গণসংগীত পরিবেশন করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা দেশের গান পরিবেশন করেন ধানমন্ডিতে। বিকেলে ডাক বিভাগের কর্মীরা বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও রাজপথে শোভাযাত্রা করেন।

টঙ্গীতেও দীর্ঘ ও সুশৃঙ্খল জঙ্গি মিছিল বের করেন শ্রমিকেরা। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডকইয়ার্ড শ্রমিকদের নৌ মিছিল বের হয়।

ময়মনসিংহে এক জনসভায় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু এবং পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ দিল্লিতে বলেন, বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাসী মানুষ ও সরকারের উচিত শেখ মুজিব এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়া। তিনি বলেন, উপমহাদেশে গান্ধীর পর শেখ মুজিবুর রহমানই এতটা বিশাল আয়তনে অহিংস শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা দেখাতে পারলেন।

পূর্বাঞ্চলে সেনা পরিবহন বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বিদেশি উড়োজাহাজের চলাচল নিষিদ্ধ করে।

সূত্র: ইত্তেফাক, ১৭ মার্চ ১৯৭১।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান।