বিজ্ঞাপন
default-image

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সম্পর্কে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে হাতে হাত
মিলিয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়। নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বি পি কৈরালা এবং সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ এ প্রস্তাব করেন।

default-image

এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিকেরা পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সমর্থন করেন। সম্মেলনে নেওয়া এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে শেখ মুজিবের গোপন বিচারের নিন্দা এবং এ কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রগোষ্ঠীর কাছে আবেদন জানানো হয়।

২৪টি দেশের প্রতিনিধি উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। পাকিস্তানের ঘটনাবলির পটভূমি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নেতারা দায়ী নন, দায়ী পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকেরা।

দ্য ইন্ডিয়া নিউজ–এ এক খবরে বলে, এ সপ্তাহের প্রথম দিকে ভারতীয় পার্লামেন্টারি দপ্তরের মন্ত্রী রাজ বাহাদুর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ সফর করেন। চিলি সফরকালে প্রেসিডেন্ট আয়েন্দে তাঁকে বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য ভারত-পাকিস্তান বিরোধ দায়ী নয়। সামরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামই বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সামরিক আদালতে শেখ মুজিবের গোপন বিচার সম্পর্কে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সরকারের অস্বীকৃতি

অস্ত্রশস্ত্র পাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলে দূত পাঠিয়েছে বলে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্বীকার করে।

ফ্রান্সের বিশিষ্ট লেখক, ভাবুক এবং সাবেক মন্ত্রী অঁদ্রে মালরো এ দিন রাতে ফরাসি বেতারে এক সাক্ষাৎকারে জানান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে বহু তরুণ তাঁকে চিঠি লিখেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৫০ জন যোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি কার্যকর ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন।

ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে দলের নেতা জেরেমি থর্প বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য ব্রিটেনের প্রতি জোরালো আবেদন জানান। আত্মঘাতী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামো বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। আন্দোলনকারীদের সব ধরনের সাহায্য দিতে তাঁর দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট খেলার ময়দানে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে এ দিন এক পপ সংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা জানান, টিকিট বিক্রির টাকা শরণার্থীদের জন্য পাঠানো হবে।

পাকিস্তান ও অবরুদ্ধ বাংলাদেশে

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি নুরুল আমিন এ দিন করাচিতে আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হয়নি।

রেডিও পাকিস্তানের খবরে এ দিন বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বর্তমান সংবিধান সংশোধন করে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করেছেন। ইতিমধ্যে পিপিপি আর পিডিপির সভাপতি নুরুল আমিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন।

সূত্র: স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি, আবদুল মতিন, র‍্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশনস, লন্ডন, যুক্তরাজ্য; মর্নিং স্টার, লন্ডন, ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১; আনন্দবাজার পত্রিকাযুগান্তর, কলকাতা, ভারত, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।

গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান