বিজয় দিবস-১৬ ডিসেম্বর

হচ্ছে জাদুঘর, স্মৃতিস্তম্ভও চাই

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান

যুদ্ধের মধ্যে একবার বাড়ি এসেছিলেন হামিদুর রহমান। ফিরে যাওয়ার সময় মাকে কথা দিয়েছিলেন, ‘দেশকে শত্রমুক্ত করে বাড়ি ফিরে আসব।’ তিনি আর ফেরেননি, কিন্তু জীবন দিয়ে দেশকে মুক্ত করে গেছেন।

মৃত্যুর ৩৬ বছর পর এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর গ্রামে লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ-খালিশপুর গ্রামের মরহুম আক্কাচ আলীর বড় ছেলে হামিদুর রহমান। অভাবের সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন তাঁর বাবা। হামিদুরের তাই লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। অল্প বয়সে চাকরির খোঁজে বাড়ি ছাড়েন। ১৯৭০ সালে প্রথমে আনসার বাহিনীতে এবং ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীতে যোগ দেন। একই বছরের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার এলাকায় যুদ্ধরত অবস্থায় বীরের মতো শহীদ হন। সহযোদ্ধারা ভারতের আমবাসা গ্রামে তাঁকে দাফন করেন। গত ১০ ডিসেম্বর সেখান থেকে তাঁর দেহাবশেষ এনে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবারের জীবিত সদস্যরা

স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর হামিদুর রহমানের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে ছোট ভাই ফজলুর রহমান জানান, ভাইয়ের নামে তাঁদের গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আর ঝিনাইদহ শহরে আছে একটি স্টেডিয়াম।

তিনি জানান, এলাকাবাসী ১৯৯৯ সালে ভাইয়ের নামে খালিশপুর বাজারে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। আট বছর ধরে কলেজটি বন্ধের চক্রান্ত করা হয়েছে। অবশেষে গত ২৭ নভেম্বর কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়েছে।

ফজলুর রহমান জানান, হামিদুর রহমান নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের চক্রান্তে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

গত বছর তাঁরা জানতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের গ্রামে একটি লাইব্রেরি ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের ১২ জুন কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই লাইব্রেরি ও জাদুঘরের কাজ প্রায় শেষের পথে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ রফিউদ্দিন।

আরেক ভাই শুকুর আলীর স্ত্রী সুপ্রিয়া পারভিন জানান, হামিদুর রহমানের বাড়ি দেখতে এসে অনেকেই পথ ভুল করে। মহাসড়ক থেকে গ্রামের রাস্তায় নামার জায়গায় একটি গেট থাকলে এই সমস্যা হতো না। রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এটি সংষ্কার করা দরকার। তাঁর নামে ধলই ফাঁড়িতে একটি স্মৃতিসৌধ আছে। কিন্তু এটি মৌলভীবাজার জেলার নিভৃত অঞ্চলে লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে গেছে। পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য কলেজ প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।