বিজয় দিবস-১৬ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বিশেষ করে, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে এবং আগরতলা ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরের শরণার্থী শিক্ষকদের নিয়ে সংগঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসব্যাপী সংগঠনটি সহায়কশক্তি হিসেবে নানা ক্ষেত্রে কাজ করে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে এবং আগরতলা ও ত্রিপুরায় অনেক মানুষ পূর্ববাংলা থেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল এক কোটির মতো। ভারত সরকার এদের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেয়; খাদ্য, চিকিত্সা ও শিশু-নারীদের বিশেষ পরিচর্চার ব্যবস্থা করে। উদ্বাস্তু ভরণ-পোষণের জন্য ভারত সরকার জনগণের ওপর বিশেষ কর ধার্য করে। মানবিকতার স্বার্থে ভারতীয় জনগণ তা ধৈর্যের সঙ্গে বহন করে। এই কোটি শরণার্থীর মধ্যে শিক্ষকদের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য, প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত। প্রবাসী শিক্ষক নেতারা অনুভব করলেন যে শিক্ষকদের দেখভাল করার জন্য প্রবাসী শিক্ষকদের একটি সমিতি গঠন করা প্রয়োজন।
তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে এবং আমাদের যুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ববাসীর সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে উদ্বাস্তু শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরা ২১ মে ১৯৭১ ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’র ব্যানারে নিজেদের সংগঠিত করে তুললেন।
সেদিন বেলা ১১টার দিকে প্রবাসী শিক্ষকেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন দ্বারভাঙা ভবনের সামনে সমবেত হয়ে এ সমিতি গঠন করেন। সমিতির নির্বাচিত কার্যকরী সংসদ ছিল এ রকম: সভাপতি ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, কার্যকরী সভাপতি কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ ড. খান সারওয়ার মুরশিদ, সাধারণ সম্পাদক ড. অজয় রায়, সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান ও গোলাম মুরশিদ।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি গঠনের পেছনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির—বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী ও অন্য দুই শিক্ষকের অনিরুদ্ধ রায় ও অনিল সরকারের—উত্সাহও ছিল প্রবল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিকে ৩০০ টাকা অনুদান দিয়ে প্রাথমিকভাবে তহবিল খুলতে সাহায্য করে। সমিতি পরে ভারত ও বাংলাদেশের আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের অর্থানুকূল্য পেয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাসী শিক্ষকেরা মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসেবে কয়েকটি সংগঠন স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তার মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ সরকারের অধীনে একটি পরিকল্পনা সেল। এটি প্রতিষ্ঠায় অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, এস আর বোস, মোশাররফ হোসেন ও সনত্কুমার সাহা; পরিসংখ্যানবিদ ওয়াহিদুল হক, ড. খান সারওয়ার মুরশিদ, ড. আনিসুজ্জামান, ড. অজয় রায়, মতিলাল পাল সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।
সে সময় সম্ভবত পরিকল্পনা সেলের প্রধান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ড. মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মুজিবনগরে এলে পরিকল্পনা সেলের সভাপতি নিযুক্ত হন। পরে ড. চৌধুরীর অনুরোধে আমি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পরিকল্পনা সেলে সাম্মানিক পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দিই। আমার ওপর দায়িত্ব ছিল মূলত চেয়ারম্যানের সচিব হিসেবে কাজ করা এবং শিক্ষা বিশেষ করে বিজ্ঞানশিক্ষার দিকগুলো দেখাশোনা করা। পরিকল্পনা সেল কিছুদিন পরেই পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা কমিশনে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি নানা কর্মসূচি ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল। যেমন: ক. সাধ্যমতো শরণার্থী শিক্ষকদের পুনর্বাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা দান; খ. মুক্তিযুদ্ধের জন্য বস্তুগত সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শীতবস্ত্রসহ পোশাক, জুতা ইত্যাদি সংগ্রহ ও বিতরণ; এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ও শরণার্থী নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সোয়েটার ও মোজা বুননের যে প্রকল্প নিয়েছিল, কারিগরদের মজুরিসহ সেটির অর্থায়ন সমিতি করেছে; গ. ভারতসহ দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারণা ও জনমত গড়ে তোলা; ঘ. প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে সহায়তা করা; ঙ. মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত পুস্তিকা প্রকাশ করা।
বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও অনিবার্যতা ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন, সাহায্য ও স্বীকৃতি জানানোর আহ্বান জাতিসংঘ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের ও বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির কাছে পাঠায় এবং বিভিন্ন স্থানে ও দেশে অব্যাহত প্রচারণা চালাতে থাকে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ লিবারেশন কউন্সিলের প্রচারাভিযান ও বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদনের ফলে বাংলাদেশ-মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তাঁদের ধারণা স্পষ্ট হয়। তাঁরা আমাদের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমি দু-একটি উদাহরণ দিই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থিক রসায়ন বিভাগের প্রধান ও আমার শিক্ষক স্যার এফ এস ডেইন্টন ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কেমিস্ট্রির বিভাগের অধ্যাপক ও আমার সুপারভাইজার পি বি এইস্কফ বাংলাদেশের শরণার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অর্থ পাঠিয়েছিলেন।
এই সুবাদেই ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এজরা বেনাথনের সঙ্গে কলকাতায় আমার পরিচয় হয়। আমাদের আবেদনের সূত্র ধরে ব্রিটিশ বিদগ্ধজনদের নিয়ে তাঁর নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ হয়ে ওঠে ব্রিটিশ সারস্বত সমাজের প্রতিনিধিত্বমূলক সমিতি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির আবেদনপত্রের সারকথা ছিল, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে ১০০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ পাঁচ হাজার কলেজ ও স্কুলশিক্ষক ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং সমিতিতে নিবন্ধন করেন। আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষকেরা সব সময় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। সে কারণে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষক ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল। আবেদনে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি পুনর্বাসন কর্মসূচি এই শরণার্থী শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
আমাদের একটি বড় কাজ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রহসনমূলক বিচার বন্ধ ও মুক্তির দাবিতে শিক্ষক সমিতি ও লিবারেশন কাউন্সিলের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন। হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে সে বিক্ষোভে অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কলকাতা শহরের নানা সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি দেয়।
সমিতির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল সেপ্টেম্বর মাসে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কলকাতার শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে এলে তাদের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেওয়া। স্মারকলিপির মুসাবিদা করেছিলাম জহির রায়হান, আলমগীর কবির ও আমি মিলিতভাবে। ড. মল্লিককে আমরা সেটি দেখিয়ে নিয়েছিলাম।
কেনেডিকে দেওয়া স্মারকলিপিতে আমাদের মূল বক্তব্য ছিল: ‘আমরা আপনার কাছে আহ্বান করছি: ১. বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বর্তমান বৈরী মনোভাবের পরিবর্তন সাধনে, ২. নবগঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি আদায়ে, ৩. বাংলাদেশের জনগণের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা ও মুক্তির লক্ষ্যে আপনার সকল ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করবেন।’
প্রায় একই সময়ে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জন কেনেথ গলব্রেথ ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এলে আমরা শিক্ষক সমিতি ও লিবারেশন কাউন্সিলের কয়েকজন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করি। বাংলাদেশ মিশনে কাউন্সিল হলে মিশনের প্রধান হোসেন আলীর সৌজন্যে সাক্ষাতের ব্যবস্থা হলেও তিনি নিজে উপস্থিত থাকতে পারেননি। শরণার্থী ও শিক্ষক, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পুনর্বাসনের সমস্যা নিয়ে বিশদ আলাপ হয়। কিন্তু গলব্রেথ আলোচনাটিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পুনর্বাসনের মধ্যেই সীমিত রাখতে চাইছিলেন। তিনি কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবের ইঙ্গিত দেন: ১. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যায়ল বা সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা গবেষণাগারে বাংলাদেশ থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবশোষণ করা বা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ, ২. ভারতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইন ইন্ডিয়া নামে একটি ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষকদের সেখানে অবশোষণ করা, ৩. ইউরোপ বা যুক্তরাজ্যে যতটা সম্ভব বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি এজরা বেনাথনের প্রস্তাবের মতোই ছিল। আমার মনে হচ্ছিল, একদল যুবক যেখানে মুুক্তিযুদ্ধ করছে, আরেক দলের তখন পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তাটা অনৈতিক। আনিসুজ্জামানও আমাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। আমি খান সারওয়ার মুরশিদের দিকে চাইলাম। সবার হয়ে তিনি আস্তে আস্তে বললেন, ‘আমরা এখন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। আর এতে আমাদের প্রধান শক্তি যুবকেরা। যারা যুদ্ধরত, তাদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি না। কেউ যুদ্ধ করবে আর কেউ নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করবে, বর্তমান অবস্থায় তা সংগত হবে না।’
ড. মোশাররফ হোসেন দৃঢ়ভাবে এ বক্তব্য সমর্থন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব ভেস্তে গেল। গলব্রেথ স্পষ্টতই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা রাজনীতির কথা বলছ।’
এর উত্তরে আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম, ‘আমরা সবাই রাজনৈতিক সংকট ও ভোগান্তির শিকার। স্বেচ্ছায় কেউ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিইনি। রাজনীতির বাইরে আমাদের যাওয়ার উপায় নেই। দেশকে আমাদের মুক্ত করতে হবেই।’
পরে তিনি বাংলাদেশ সমস্যার যে রাজনৈতিক সমাধানের ব্যবস্থা দিলেন, তাতে আবহাওয়া আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠল। বাংলাদেশের জনগণের ওপর গণহত্যা ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের কথা অস্বীকার না করেও তিনি বললেন, ‘এক পাকিস্তানের অধীনে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশই বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে উত্তম সমাধান।’
সবাই তাঁর এই সুপারিশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন।
পরদিন কলকাতার দৈনিকে গলব্রেথের ‘এক পাকিস্তানভিত্তিক বাংলাদেশ সমস্যা’র সমাধানের তত্ত্ব ফলাও করে বের হলো।
সমিতি গঠিত হওয়ার পরপর আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে তাঁদের নৈতিক সমর্থনলাভের প্রত্যাশায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির উদ্যোগে ড. এ আর মল্লিক ও ড. আনিসুজ্জামানকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির পক্ষে এ দলে ছিলেন ড. অনিরুদ্ধ রায়, অনিল সরকার, সৌরীন্দ্র ভট্টাচার্য ও ড. বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রীকে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়সহ উত্তর ভারতের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেও মিলিত হন।
শিক্ষক সমিতির দ্বিতীয় দলটি গিয়েছিল মধ্যভারতে। এ দলে ছিলেন ড. মযহারুল ইসলাম, আমি ও শামসুল ইসলাম সাঈদ। এ ভ্রমণে আর্থিক সহায়তা দেয় পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৃণাল ভট্টাচার্যও এই দলে ছিলেন। তৃতীয় দলটি যায় দক্ষিণ ভারতে। এ দলে ছিলেন সৈয়দ আলী আহসান ও ড. মযহারুল ইসলাম।
সৈয়দ আলী আহসানের তত্ত্বাবধানে সমিতি একটি মহাফেজখানা প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে সংগৃহীত তথ্যাদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও যত্নের অভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির উদ্যোগে ও সমিতির সহায়তায় বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি তথ্যব্যাংক স্থাপন করা হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন টেলিভিশনের কর্মাধ্যক্ষ জামিল চৌধুরী। তিনি বিদেশে চলে গেলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ড. অসিতরঞ্জন মজুমদারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তথ্যব্যাংকের অর্থায়ন করেছিলেন রাম রায় নামে এক ব্যবসায়ী।
শিক্ষক সমিতি কিছু উদ্দেশ্য সামনে রেখে ক্যাম্প স্কুল কার্যক্রম গ্রহণ করে। শরণার্থী শিবিরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ছিল তার অন্যতম। ছাত্রছাত্রীরা আগে যে যে শ্রেণীতে পড়ত তা বের করে স্কুল স্থাপন করার একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়। এটিকে বাস্তবরূপ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় কামরুজ্জামানকে। তিনি বেশ ভালোভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন। স্কুল খোলা হয়েছিল মোট ৫৬টি।
আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষাদানের কাজে যে কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের নাম মনে করতে পারছি। তাঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, হেনা দাস, মালা চৌধুরী প্রমুখ। পরে ত্রিপুরাসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলে আরও ৩৭টি স্কুল স্থাপন করা হয়।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এ আর মল্লিকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কিছু অর্থনৈতিক, সামাজিক, ফোকলোর, বিজ্ঞানের ওপর বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। বিজ্ঞানের প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধান করতাম আমি, বিশেষ করে পরিভাষা-সংক্রান্ত প্রকল্পটি। দ্বিজেন শর্মাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সমাজতত্ত্ববিষয়ক গবেষণাকর্মটি দেখভাল করতেন অনুপম সেন।
Also Read
-
সালাউদ্দিন এবার সিনিয়র সহকারী কোচ হয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলে
-
ডিজিএফআইয়ের চেয়েও ভয়ংকর ছিল র্যাবের গোপন বন্দিশালা
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
প্রথম আলোর চারজনসহ ১৯ সাংবাদিক পেলেন ইআরএফ পুরস্কার
-
ঢাকায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টি, কারণ জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর