বিজয় দিবস-১৬ ডিসেম্বর
মামার মুখে শোনা একটি অভূতপূর্ব ঘটনা
মামা মো. নূরুল আলমের মুখে শোনা ও ডায়েরিতে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি দিনের ঘটনা অত্যন্ত মূল্যবান। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ থেকে মামা এই টুকরো টুকরো ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু যে ঘটনাটা না বললেই নয় সেটা এখন বলছি।
মামা মো. নূরুল আলমের মুখে শোনা ও ডায়েরিতে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি দিনের ঘটনা অত্যন্ত মূল্যবান। ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ থেকে মামা এই টুকরো টুকরো ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু যে ঘটনাটা না বললেই নয় সেটা এখন বলছি। বরিশাল তখন পাকিস্তানিদের প্রচণ্ড আক্রমণের কবলে। আক্রমণ হচ্ছে পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে। এ সময় কলেজ রোড পাড়াটি প্রায় নির্জন হয়ে পড়েছিল। আমার মামার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পারিবারিক চাপে স্বরূপকাঠির দিকে পাড়ি জমান পাড়ার ১০-১২ জনের সঙ্গে। আগেই পরিবারের অন্য সবাই স্বরূপকাঠি চলে যায়। কিছুটা পথ চলার পর তাঁরা দেখলেন, ঘরের পোষা আদুরে কুকুরটাও সঙ্গে সঙ্গে আসতে ভুলে যায়নি। তারপর অন্ধকারে চাষ করা মাঠ, বাঁশঝাড়, ড্রেন পেরিয়ে তাঁরা পৌঁছালেন কড়াপুর। কড়াপুরে নৌকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু নৌকা পেলেন না। হাঁটতে হাঁটতে ১২টা ৩০ মিনিটে উপস্থিত হলেন সুকান্তা স্কুলে। ভোর চারটা ১৫ মিনিটে আবার স্বরূপকাঠির উদ্দেশে যাত্রা। কিন্তু তখনো আদুরে রমি (কুকুরটার নাম) পিছু ছাড়েনি। সেও যুদ্ধে যেতে চায়। কিন্তু নৌকায় যেখানে মানুষের স্থান হয় না সেখানে একটা কুকুর নিলে তো মানুষের কাছে অসন্তুষ্টির কারণ হয়।
তাই মামা বাধ্য হয়ে রমিকে চলে যেতে বললেন। কিন্তু রমি নাছোড়বান্দা। তারপর অনেক আদর করার পরও রমি যাবে না। তখন রাগে মামা রমিকে একটু মেরে বসলেন। তারপর নৌকায় চড়ে স্বরূপকাঠির দিকে পাড়ি দিলেন। কিন্তু একটু পরই দেখলেন রমি নদী সাঁতরে আসছে। এভাবে রমি তিনটে নদী সাঁতরে এসেছিল। এবং যুদ্ধের সময় মুক্তিফৌজদের পাহারায় ছিল। তারপর কোথায় হারিয়ে গেল রমি। কিন্তু যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বরিশালে কলেজ রোডের বাড়িতে এসে সবাই অবাক ও বিস্মিত। সেই রমি পাহারা দিচ্ছে প্রভুর ঘরবাড়ি। সেই একাত্তরে যখন একটা বোবা কুকুর নিজ ভূমির প্রতি, নিজ প্রভুর প্রতি মায়া ছাড়তে পারেনি, সেখানে বাংলার কলঙ্ক রাজাকার, আল-বদর আল-সামসরা পা চেটেছিল পাকিস্তানি হায়েনাদের। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখতে আমার মামা প্রত্যক্ষভাবে বোধহয় পারেননি। কিন্তু তিনি বিএম কলেজের মাঠে নিয়মিত ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি মুক্তিফৌজে আনা-নেওয়া করেছেন ও বিবিসি এবং বেতারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বহু বছর।
আজ এতগুলো বছর পর আমার মুখে এ ঘটনাগুলো শুনে ও অন্যদের জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। আজ প্রায় চার যুগ পর সেই অম্লান স্মৃতির পরশ পেয়ে আমি শিহরিত। যে দিনগুলোর স্মৃতি আমার মায়েরও স্মরণ নেই। তাই এ অমূল্য স্মৃতিগুলো আমার সামনে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য সেজো মামার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আজ কর্তব্য এসব ইতিহাসের অভিযানে অভিযাত্রী হওয়া। তাহলে একটু হলেও হয়তো বা ৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগ সার্থক হবে।
আফরিদা জিননুরাইন উর্বী
বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
শ্রেণী: দশম
Also Read
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
প্রাথমিক ভোট গণনার ফল যে কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে