বিজয় দিবস-১৬ ডিসেম্বর

বিচক্ষণ ও ব্যতিক্রমী নেতৃত্বের নির্বাচন

বঙ্গবন্ধু জেনেছিলেন, বুঝেছিলেন বাংলার মানুষকে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার অর্জনের ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অভূতপূর্বভাবে। ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা গ্রহণ করছেন বঙ্গবন্ধু

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির জাতীয় অধিকারের পক্ষে যে অভাবিত ও অভূতপূর্ব গণরায় ঘোষিত হয়, তা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পথ করে দিয়েছিল। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে, সেটা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ৩০০ আসনের পাকিস্তান জাতীয় সংসদে পূর্বাঞ্চলের কোনো দল সর্ব-পাকিস্তান বিচারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, এটা কারও ভাবনাতে ছিল না। সে রকম ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না, কেননা ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে, জনসংখ্যার অনুপাতে ছিল ১৬২টি আসন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮টি।

শেখ মুজিবের উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তা যাঁরা হিসাবে নিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁকে বা তাঁর দলকে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কেননা ব্রিটিশ আমল থেকেই তো ভোটের রাজনীতির বহুধাবিভক্তি পর্যবেক্ষকেরা দেখে আসছেন। ভোটে কোনো প্রার্থীই পরাজয় প্রত্যাশা করেন না, জামানত যাঁর বাজেয়াপ্ত হবে, তাঁর সমর্থকেরাও জোর গলায় স্লোগান দেয়, শিওর শিওর, ওভারশিওর। তদুপরি খেলা করে কত রকম বিভক্তি, ধর্মের বিভক্তি, আঞ্চলিক ফারাক, প্রার্থীর কথিত যোগ্যতা-অযোগ্যতা, জাতীয় রাজনীতিতে নানা ধারা-উপধারা, অর্থের প্রভাব, পেশির শক্তি, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, কুৎসা রটনা, গুজব বিস্তার ইত্যাদি কতভাবে কত দিকেই না বিভক্ত থাকে কোনো বিশেষ নির্বাচনী এলাকার ভোটদাতারা। তারপরও রাজনৈতিক নেতৃত্ব নানাভাবে দল সংহত করে তোলেন, ভোটের হিসাব কষে নিজেদের সবলতা বজায় রেখে দুর্বলতা মোচনে মিত্র সন্ধান করে ফেরেন।

শতভঙ্গ বঙ্গদেশে নির্বাচনে বিভক্ত রাজনীতির ছায়াপাত ঘটবে, এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা। যদিও পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের কোনো পূর্বনজির ছিল না, তারপরও স্থানীয় সরকার, নগরপাল ইত্যাদি পর্যায়ে নির্বাচন থেকে একটা ধারণা তো পাওয়া যায়। ওলটপালট করা প্রাদেশিক নির্বাচন হয়েছিল পূর্ব বাংলায় ১৯৫৪ সালে, তবে সেটা ছিল যুক্তফ্রন্টের বিজয়, যে ফ্রন্টে শামিল হয়েছিল কমিউনিস্ট থেকে ইসলাম-পছন্দ, নানা দল ও মতাদর্শী ব্যক্তিরা। নামে যুক্তফ্রন্ট হলেও ভেতরে ছিল বহু ধরনের বিযুক্তি। আর তাই ফ্রন্টের বিজয় বানচাল করা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জন্য খুব কঠিন হয়নি। শরিকের এক পক্ষকে অপরের বিরুদ্ধে যেমন তাঁরা লেলিয়ে দিতে পেরেছেন, তেমনি এই খেলার জন্য অনেককে পেয়েছিলেন প্রস্তুত।

উত্তর ভারতীয় অভিজাত মোহাজের মুসলমান, পাঞ্জাবি বড় ভূস্বামী ও ব্যবসায়ী এবং সামরিক নেতৃত্ব মিলে পাকিস্তানে যে শাসকচক্র গড়ে উঠেছিল, তারা বাঙালির বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিল। বাঙালির উদারমনস্কতা তারা তাদের যথাপ্রাপ্য হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিজয় যে কেবল বাংলা প্রদেশে ঘটেছিল, সেখান থেকে কোনো বার্তা তাঁরা পাননি বা নেননি। লিয়াকত আলী খান ভারতীয় গণপরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলার কোটা থেকে, তা উত্তর ভারতের যে নবাবজাদাই তিনি হন না কেন।

যাহোক, পাকিস্তান গণতন্ত্রের পথে এগোবে, যার মূল ভিত্তি ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’—এই দাবি সবচেয়ে গভীর দৃষ্টি নিয়ে মেলে ধরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এক ইউনিট ফর্মুলায় গণপরিষদে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আসন সমানুপাত তথা ১৫০: ১৫০ করে দেওয়া তিনি কখনো মেনে নেননি।

বামপন্থী ও সংক্ষুব্ধ আরও কিছু রাজনৈতিক দল এক ইউনিট ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সোচ্চার হলেও শেখ মুজিবুর রহমান এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি, কেননা তিনি জানতেন, সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তানে ফেডারেল সরকার গঠিত হলে এক ইউনিট, তথা পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানকে দুই সম-অংশীদারত্ব প্রদেশ গণ্য করে প্রচলিত শাসনবিধি বাস্তব কার্যকারিতা হারাবে। আর তাই পাকিস্তানের রাজনীতি আমূল পাল্টে দেওয়া ছয় দফায় এক ইউনিট সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি, বলা হয়েছে মূল কথা, সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ফেডারেল সরকার প্রতিষ্ঠা।

অন্যদিকে এক ইউনিটের মতো জাতীয় অধিকার-পদদলনকারী ব্যবস্থা নিয়ে সবচেয়ে সোচ্চার ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষ—পাঠান, বালুচ ও সিন্ধিরা—যারা তাদের নিজস্ব জাতিসত্তা ও শাসন-অধিকার বিসর্জন দিয়েছিল এক ইউনিটের মতো নৈর্ব্যক্তিক সত্তা গ্রহণ করে। পাকিস্তানের রাজনীতি শেখ মুজিবের মতো গভীরতা, দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে দ্বিতীয় আর কেউ বুঝতে পারেননি। তাঁর এই গভীর উপলব্ধির উৎস ছিল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্রতে দৃঢ়সংকল্প ও অবিচল অবস্থান।

১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণ-আন্দোলনের জোয়ারে ভেসে আগরতলা মামলার ষড়যন্ত্রজাল ছিন্ন করে শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে সংবর্ধিত হলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ রূপে, আর সেই সপ্তাহেই তিনি রাওয়ালপিন্ডি গেলেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আহূত সর্বদলীয় গোলটেবিল বৈঠকে। এই যোগদান নিয়ে দলের তরুণ-তুর্কিদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল, বামপন্থী বিপ্লবীরা তো একে জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের আপসকামিতার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। এতে কোনো ফললাভ হবে না, এই ছিল প্রবল মত। ফললাভ ঘটেনি বটে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈঠক ব্যর্থ হয়, তবে একটি বিষয় সর্বসম্মতভাবে প্রকাশ পায়, পাকিস্তানে ফেডারেল সরকার ব্যবস্থা কায়েম হবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলেও উপলব্ধির এই ঐক্য পায় অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

২৫ মার্চ ১৯৬৯ লৌহমানব আইয়ুব খানকে বিদায়ের দরজা দেখিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করলেও এক ব্যক্তি এক ভোট এবং ফেডারেল ব্যবস্থা থেকে পিছু হটার উপায় থাকে না। তাদের দেওয়া এই ছাড় পরিস্থিতি শান্ত করে আনল। এবার শুরু হলো দুই বিরোধী তরফের পাঁয়তারা, একদিকে নিরঙ্কুশ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কর্তৃত্ব বজায় রাখার পথানুসন্ধান। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটল ১৯৭০ সালের মার্চে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথরেখা জেনারেল ইয়াহিয়া খান পেশ করলেন সবার সামনে, ভেঙে দেওয়া হলো এক ইউনিট এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি নির্বাচন স্বীকৃত হলো। আইনগত কাঠামো আদেশ (এলএফও) জারি করে বলা হলো যে ইসলামি আদর্শ হবে রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং বিধি মোতাবেক সংবিধান প্রণীত হয়েছে কি না, তার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন সামরিক শাসক। নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হলো ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর, প্রকাশ্য রাজনীতির অনুমোদন দেওয়া হলো ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে, প্রয়োজন অনুসারে এলএফও জারির অধিকার রইল সামরিক কর্তৃপক্ষের।

বঙ্গবন্ধুর সামনে মুখ্য ছিল দুই প্রশ্ন—লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডিন্যান্সের আঁটসাঁট বন্ধনের মধ্যে তিনি নির্বাচনে যাবেন কি না, গেলে অন্য সমমনা দল মিলে জাতীয় ঐক্য গড়ে নির্বাচনী লড়াই করবেন কি? এলএফওর অধীনে নির্বাচনে যেতে দলের নেতারা ছিলেন সন্দিহান, দ্বিধান্বিত কিংবা অনিচ্ছুক, বিরোধীর সংখ্যাও কম নয়। অন্তত এর প্রতিবাদ করে আলোচনাক্রমে এলএফওর বিধান যথাসম্ভব নমনীয় করা হোক, এমন প্রাজ্ঞ মতও দুর্লভ ছিল না। অন্যদিকে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যাপকতম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলা ছিল সবচেয়ে সংগত পথ, রাজনৈতিক মহল তো এভাবেই দলের শক্তি সংহত করে তার প্রসার ঘটায়।

কোন পথে এগোবেন শেখ মুজিব? যুক্তি-বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, তার কোনোটিই তিনি গ্রহণ করলেন না, নিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ। নিঃশর্তভাবে বরণ করলেন এলএফও, এটা মানা বা প্রত্যাখ্যান—দুই-ই তিনি পরিহার করলেন। অপ্রচলিত আরেক সিদ্ধান্ত নিলেন, নির্বাচন করবে এককভাবে তাঁর দল আওয়ামী লীগ। দলের জনপ্রিয়তা বিপুল, তবে শতদলে বিভক্ত বাংলায় একটি রাজনৈতিক দল কতটা ফসল ঘরে তুলতে পারবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ–দ্বিধা থাকা স্বাভাবিক, বিপুল আশা বা কল্পনা করা গেলে তারও একটা সীমানা থাকে। এরপর কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে শেখ মুজিব কীভাবে কাজ করেছেন, তা আমরা জানি, তবে তাঁর উপলব্ধির ভিত্তি কী ছিল, সেটা বুঝেছি কি না বলা যাবে না। সেই উপলব্ধি সম্পর্কে একটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা যায়।

খুলনার সংবেদনশীল পড়ুয়া ছাত্রলীগ কর্মী সৈয়দ মনোয়ার আলী তাঁর স্মৃতিভাষ্য ১৯৭১: অবরুদ্ধ দেশে রুদ্ধশ্বাস জীবন গ্রন্থে লিখেছেন, নির্বাচনী প্রচারে বঙ্গবন্ধু এসেছেন খুলনায়, উঠেছেন ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের বাসায়। ছয়-সাতজন ছাত্রলীগ কর্মী মিলে তাঁরা দেখা করতে গেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সৈয়দ মনোয়ার আলী লিখেছেন, ‘মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে না ভেবে আমরা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নির্বাচন যে অর্থহীন ও বিপর্যয়ের কারণ হবে, সে বিষয়ে একটা আর্টিকেল লিখে নিয়ে এসেছিলাম। বললাম, ভাই, আপনি খুবই ব্যস্ত, সেজন্য আমরা আমাদের বক্তব্য লিখে এনেছি, আপনি সুযোগ মতো পড়ে দেখবেন।...তিনি কাগজটা হাতে নিয়ে দু-এক মিনিট চোখের সামনে ধরে রাখলেন, তারপর যত্নের সাথে আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন তোদের কাছে রেখে দে, নির্বাচনের পর পড়িস।’

মফিদুল হক

তারপর বঙ্গবন্ধু বিস্মিত করে তাঁদের বলেছিলেন, ‘যা, কাজ কর। আমার শতভাগ সিট চাই। তোদের কী ধারণা—পাব না, এখনো হাতির চোখ দিয়ে নিজেদের শক্তি মাপিস!’

বঙ্গবন্ধু জেনেছিলেন, বুঝেছিলেন বাংলার মানুষকে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার অর্জনের ভিত্তি নির্মাণ করেছিলেন গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অভূতপূর্বভাবে। ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই।

যেহেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে অবিশ্বাস্যভাবে পূর্ব পাকিস্তানের দুটি আসন ব্যতীত, একটি ময়মনসিংহে মুসলিম লীগের নূরুল আমীনের এবং অপরটি পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের, বলতে গেলে প্রায় শতভাগ আসনেই বিজয়ী হয়েছিল, তাই গণতান্ত্রিকভাবে পাকিস্তানের রাজনীতির সব সমীকরণ পাল্টে গেল রাতারাতি। বাঙালি অর্জন করল আপন ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার, শেখ মুজিবুর রহমান অর্জন করলেন গোটা জাতির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতা। এর অপরিসীম তাৎপর্য প্রকাশ পেল ৭ মার্চের ভাষণে, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণায় এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠনে, গণতান্ত্রিক বৈধতার ভিত্তিতে পরিচালিত জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে, মুক্তির যুদ্ধে।

মফিদুল হক: লেখক ও ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

সূত্র: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ সালের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত