স্বাধীনতা দিবস-২৬ মার্চ

ব্রিটিশ নথিতে মুজিব

শুধু যুক্তরাষ্ট্রই যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছিল, তা নয়। রেখেছিল ব্রিটেনও। ১৯৭১ সালের জানুয়ারির গোড়ায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে বেরিয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন। তখন তাঁকে সরকারপ্রধানের প্রটোকল দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ও তাঁর মন্ত্রিসভার মধ্যে এ নিয়ে কোনো দ্বিধা ছিল না। কিন্তু তার আখ্যানভাগ তৈরি হয়েছিল কেবলই নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, বাংলাদেশের জন্মের পটভূমিতে নয়।

এখন অবমুক্ত হওয়া ব্রিটিশ নথিপত্রে দেখছি, বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা ১৯৬৯ সালের অক্টোবরেই পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিচ্ছিন্নতার পথে যাওয়া অর্থাৎ একজন সম্ভাব্য বিপ্লবী নেতা হিসেবে ভেবেছিলেন। ১৯৬৯ সালের শেষার্ধে বঙ্গবন্ধু লন্ডন সফরে গেলে তাঁকে একজন সম্ভাবনাময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরণ করা হয়। ডন পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিল, শেখ মুজিবকে বিদেশি সরকারপ্রধানদের মতো মর্যাদা দেওয়া হলো। অথচ একই সময়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোও সফর করলেন, কিন্তু অনুরূপ মর্যাদা পেলেন না।

১৯৭১ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া থেকে পল নাজারেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি লিখেছিলেন। নাজারেক নিশ্চিত হতে চান, জি সি দেব বেঁচে আছেন কি না, সাহায্য চান তাঁর ‘আমেরিকান এক্সপেরিয়েন্স’ বইটির পাণ্ডুলিপি উদ্ধারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে তৎকালীন উপাচার্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন ১৯৭১ সালের ১৩ মে লিখেছেন, ‘নো অ্যাকশন ফর দ্য প্রেজেন্ট’।

২৯ অক্টোবর ১৯৬৯। পরদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক। বঙ্গবন্ধুর সফরটি ছিল ব্যক্তিগত। অথচ তা এতটাই গুরুত্ব পেল যে কেবিনেটের আলোচ্যসূচিতে আসে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের কর্মকর্তা ডি ও লেরি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হোমসের জন্য একটি নোট লিখলেন। তার তরজমা অবিকল তুলে ধরা হলো :

মন্ত্রিসভা ৩০ অক্টোবর, ১৯৬৯। বিষয় আইটেম নম্বর ২। বৈদেশিক বিষয়। স্পিকিং নোটস। শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা, একটি শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল। পাকিস্তানি অভিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। সম্ভবত দলের জন্য তহবিল গঠন এবং ব্রিটেনে বসবাসরত পাকিস্তানিদের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক সমর্থন জোরালো করার জন্য। এ ছাড়া হয়তো বিদেশে তাঁর রাজনৈতিক প্রচারণাও অন্যতম লক্ষ্য থাকবে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে তাঁর এই সফরের খবর পাকিস্তানের জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে।

২. আইয়ুব খানের শাসনের পুরো দশকজুড়ে তিনি অনবরত কারাগারে থেকেছেন। শাসকগোষ্ঠীর কোপানলে ছিলেন। কিন্তু শেখ বর্তমানে এক অন্যতম অসাধারণ পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ। যদি একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন ঘটে, তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে তিনি ভবিষ্যতে যে একটি মুখ্য রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করবেন, তা প্রায় নিশ্চিত।

৩. আমরা তাঁর সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। কিন্তু আমাদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগটা একটু রাখঢাক করে চলতে হবে, যাতে ইয়াহিয়ার সরকার আহত বোধ না করে। কারণ, ইয়াহিয়া সরকার এখন পর্যন্ত তাঁকে অবিশ্বাস ও সন্দেহের চোখে দেখে চলছে। পাকিস্তান হাইকমিশন এখন পর্যন্ত তাঁকে উপেক্ষা করে আসছে। এতে সন্দেহ নেই, কারণ তিনি ইয়াহিয়া শাসনের কঠোর সমালোচক।

এর বাইরেও নথিতে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড নোট পাওয়া গেছে। তাতে মুজিবের বর্ণাঢ্য রাজনীতিক জীবন চিত্রিত। শুরুতেই তথ্য, পঞ্চাশের কোঠায় বয়স, কিন্তু রাজনৈতিক জীবন ৩০ বছরের। একজন আউটস্ট্যান্ডিং বেঙ্গলি পলিটিক্যাল ফিগার। কেবিনেট পেপারে আরও মূল্যায়ন, ‘পাকিস্তানের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান অনন্য। সেটা এই বিবেচনায় যে তাঁর মতো অন্য কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানের উভয় অংশে উল্লেখযোগ্য সমর্থন ভোগ করছেন না। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) আশু প্রধান লক্ষ্য হলো একটি একক রাষ্ট্রের মধ্যে বাঙালিদের জন্য আনুপাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত করা।’

ব্রিটিশরা গন্ধটা ঠিকই শুঁকেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চূড়ান্ত লক্ষ্য যে আরও দূরে, সেটা তাঁরা জানতেন।

তাই নথিতে উল্লেখ আছে, ‘তবে তিনি কেবলই পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সমতা মেনে নেওয়ার মধ্যেই থেমে থাকবেন না। এটা সম্ভব যে তিনি বাংলাকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাবেন।’ সুতরাং মুজিব ব্রিটেনের কোনো অজানা অচেনা মন্ত্রিসভার কাছ থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে রাজকীয় বিমান ব্যবহারের সুযোগ পাননি।

বিচার ও শ্বেতপত্র

পাকিস্তানের কারাগারে থাকতে বঙ্গবন্ধুর বিচারপর্বটি মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। তবে ব্রিটিশ নথি পড়ে বোঝা যায়, ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট ইয়াহিয়া সরকার কেন বিশ্ববাসীর সামনে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। এর কারণ, বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা করতে চেয়েছিল। সেটা কার্যকর কখন করা হবে, সে জন্য তারা হয়তো অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষা করত কি করত না, সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। তবে ব্রিটিশ নথিতে দেখা যাচ্ছে, ১১ আগস্ট ১৯৭১ তাঁর গোপন বিচার শুরু করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল ১০ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করার। শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছিল তার মাত্র ছয় দিন আগে। তবে সেখানে দেওয়া তথ্যে পাকিস্তানের শাসকেরা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণ প্রকারান্তরে ভালোই ফুটিয়ে তুলেছে। ব্রিটিশ কূটনীতিকেরা শ্বেতপত্র পাঠে খুব অবাক হননি। মার্কিন কূটনীতিকেরা বলেছেন, কিছুদিন আগে তাঁদের কাছে পাকিস্তান একটি রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটাই মাজাঘষা করে শ্বেতপত্র করা হয়েছে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন এনেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকদের তা নজর এড়ায়নি। ১৯৭১ সালের ৭ জানুয়ারি অটোয়া গ্লোব অ্যান্ড মেইল–এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে ‘শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমি বিপ্লবের ডাক দেব।’ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ ব্যাংকক পোস্ট লিখেছে, মুজিব বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তান যদি তাঁর দলের ঘোষিত ছয় দফা কর্মসূচি হুবহু গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি এককভাবে অগ্রসর হবেন এবং সংবিধান রচনা করবেন।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ মুজিব বলেন, ‘আমাদের অবস্থান নিরঙ্কুশভাবে স্পষ্ট। ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান তৈরি হবে।’

২৩ ফেব্রুয়ারি লন্ডন টাইমস–এর রিপোর্টে বলা হয়, মুজিব ইতিমধ্যেই তাঁর বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান শব্দের পরিবর্তে ‘বাঙালি জাতি’ উল্লেখ করছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ লিভারপুল ডেইলি পোস্ট লিখেছে, হোয়াইট হলের (ব্রিটেনের এস্টাবলিশমেন্ট) আশঙ্কা পাকিস্তান ভেঙে যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তান নিজেকে একটি ‘স্বাধীন বাঙালি মুসলিম প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করতে পারে। শেখ মুজিব ইতিমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে নয়, বাঙালি প্রজাতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেছেন। ফলে ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে এই উপলব্ধি এসেছে যে তারা কমনওয়েলথের একটি দেশ ভেঙে যাওয়ার মতো গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবিলার সম্মুখীন হচ্ছে।

২ মার্চ বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সংকটময় মুহূর্তে প্রত্যেক বাঙালির জীবনের সকল ক্ষেত্রে পবিত্র দায়িত্ব হলো গণবিরোধী শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা না করা এবং যার পক্ষে যতটা সম্ভব, তা দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা।’

৩ মার্চ ১৯৭১ ওয়াশিংটন পোস্ট ২ মার্চ ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য প্রকাশ করে। আগামী ৭ মার্চে অনুষ্ঠেয় এক জনসভায় তিনি বাংলার জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে একটি রূপরেখা ঘোষণা করবেন। যখন জানতে চাওয়া হয় যে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন কি না? তখন শেখ মুজিব বলেন, অপেক্ষা করুন।

লক্ষণীয় যে পাকিস্তানিরা এসব তথ্য ধারাক্রম অনুযায়ী তাদের শ্বেতপত্রে উল্লেখ করে। কিন্তু বিশ্বকে তারা এটা বলেনি যে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মুজিব ২৬ ও ২৭ মার্চে তাঁর পক্ষেই জিয়াউর রহমানের স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার তথ্য দেননি। এর কারণ মুজিবকে বিশ্বের কাছে একজন সফল জাতীয় বীর হিসেবে নয়, একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল তাদের লক্ষ্য।

সে কারণে তারা ২ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ওই বক্তব্যের পরেই জুড়ে দিয়েছে ২৭ নভেম্বর ১৯৭০ সালের একটি উক্তি। ওই দিন একটি সংবাদ সম্মেলনে একই প্রশ্নের উত্তরে মুজিব বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা, না, এখনই নয়।’

৯ মার্চ ১৯৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ–এর রিপোর্টে বলা হয়, ৭ মার্চে মুজিবের ঘোষণা এক পাতলা ছদ্মাবরণে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা। কারণ, মুজিবের দাবিগুলো ইয়াহিয়া খান পূরণ করতে পারেন না। একই দিনে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘ইতিমধ্যেই পৃথক রাষ্ট্রের নাম ভেসে আসছে। পূর্ব পাকিস্তান হবে “বাংলা দেশ”। বাঙালির ভূখণ্ড। ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে এই রাষ্ট্রের পতাকা।’

দ্য ইকোনমিস্ট ১৩ মার্চ লিখেছে, ‘৭ মার্চে দেওয়া মুজিবের চার শর্তের মধ্যে দুটি শর্ত অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর কার্যত রাষ্ট্রপতির পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শিগগিরই ঢাকায় যাচ্ছেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেটাই হতে পারে তার শেষ বৈঠক।’

১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ৭ মার্চে উল্লেখ করা তাঁর দাবিগুলো পূরণ করতে বলেন। এদিনই এক বিবৃতিতে তিনি তাঁর জনগণের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

২৫ মার্চ সম্পর্কে শ্বেতপত্রে লেখা হলো, এদিন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিল যে তারা আর কোনো বৈঠকে আগ্রহী নয়। মুজিব ও তাঁর দল স্পষ্ট করল যে তারা আর কোনোভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা ফেডারেশন অব পাকিস্তানের বিষয়ে আর কোনোভাবে আগ্রহী নন। মুজিব বরং ফেডারেশনের পরিবর্তে কনফেডারেশনের ধারণা দিলেন।

অনেকের মধ্যে প্রশ্ন আছে যে মুজিব কেন শেষ মুহূর্তে দর–কষাকষিতে ‘কনফেডারেশন’ প্রতিষ্ঠার কথা বললেন। এর কারণ, সাংবিধানিকভাবে একটি অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা। মার্চের আলোচনায় ইয়াহিয়ারা এটা মেনে নিলে সাংবিধানিকভাবে দুটি দেশের শান্তিপূর্ণভাবে আলাদা হওয়ার পথ সুগম হতো। সেটা ইয়াহিয়া ও তাঁর কুশলীবরা বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে শ্বেতপত্রে মুজিবের কনফেডারেশনের ফর্মুলার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘এর লক্ষ্য ছিল যাতে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব একেবারেই নির্মূল হয়ে যায়। ১ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে তিনি একটি “সমান্তরাল সরকার” চালিয়েছেন, তাকেই একটা “ডি জুড়ে অথরিটি” দেওয়া হয়েছে।’ শ্বেতপত্রে দেওয়া ইয়াহিয়ার নিজের জবানিতে বলা হয়, ‘শেখ মুজিব এবং তাঁর উপদেষ্টাগণ এক পাকিস্তানের ভিত্তিতে আর সমঝোতায় আসতে চাননি । বরং তাঁরা আমার কাছ থেকে এমন একটা ঘোষণা আদায় করিয়ে নিতে চেয়েছেন, যাতে দুটি আলাদা গণপরিষদ হয়। একটি ফেডারেশনের পরিবর্তে যাতে একটি কনফেডারেশন জন্ম নেয়। এই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তারা আসলে একটি পৃথক বাংলা দেশ প্রতিষ্ঠা করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। এর ফলে জাতির জনক (জিন্নাহ) সৃষ্ট পাকিস্তানের যবনিকা টানার কথা।’

১৬ মার্চ ১৯৭১ ভারতীয় দৈনিক স্টেটসম্যান আওয়ামী লীগের নির্দেশনাবলি ১৪ মার্চের ঘোষিত নির্দেশনাবলি সম্পর্কে রিপোর্ট করতে গিয়ে লিখেছিল, মুজিব নির্দেশনাবলি জারি করে বলেছেন তিনি ‘বাংলা দেশের নিয়ন্ত্রণ ভার’ গ্রহণ করেছেন। তিনি এমনটাও বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হবেন আমাদের অতিথি।’

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বিরুদ্ধ প্রচারণা চলে যে মুজিব অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এর সপক্ষে বেশ কিছু কথাবার্তার নথিপত্র সংগত কারণেই পাওয়া গেছে। কারণ, মুজিব প্রধানত শান্তিপূর্ণ সাংবিধানিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে তাঁর চিন্তাভাবনার মূল প্রস্রবণী ছিল বাঙালির মুক্তি। বাঙালি জীবনের মর্যাদা ও সমতা প্রতিষ্ঠা। ব্রিটিশ নথিপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে পুনর্বার পরিষ্কার হলো, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের দীর্ঘকাল আগেই বঙ্গবন্ধু তাঁর লক্ষ্য স্থির করেছিলেন। স্বাধীনতায় নিরঙ্কুশ ভূমিকা রাখার জায়গাটি নিরঙ্কুশভাবে তাঁরই।

মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক