স্বাধীনতার আহবান-৭ মার্চ
উত্তম ভাষণ
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৬ মার্চ টেলিফোনে মুজিবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন এবং তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন যে এমন পদক্ষেপ যেন তিনি না নেন—যেখান থেকে ফিরে আসার উপায় রুদ্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি মুজিবের জন্য টেলিপ্রিন্টারে একটা বার্তা প্রেরণ করেন। মধ্যরাতে আমার উপস্থিতিতে এই বার্তাটি ঢাকার সামরিক আইন সদর দপ্তরে পৌঁছায়। পাঠানোর আগে আমি তাড়াতাড়ি পড়ে নিলাম।…একজন ব্রিগেডিয়ার নিজে ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে মুজিবের হাতে বার্তাটি পৌঁছে দেন।
একই দিন (৬ মার্চ) প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, ‘২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’ যদি এই সিদ্ধান্তটি এক সপ্তাহ আগে নেওয়া হতো তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
পরদিন (৭ মার্চ) পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মি. ফারল্যান্ড মুজিবের সঙ্গে দেখা করেন। কিছুক্ষণ পর এক বাঙালি সাংবাদিক, নাম মি. রহমান, টেলিফোনে আমাকে বলেন, একপক্ষীয় স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারটি অপসারিত হয়েছে।
সেই চরম সন্ধিক্ষণ এসে গেল। মুজিবের ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল ২টা ৩০ মিনিটে (স্থানীয় সময়)।…কুণ্ডলী পাকানো টান টান উত্তেজনার মধ্যে তিনি মঞ্চে আরোহণ করলেন। একটি ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ বিশাল জনসমুদ্রের দিকে তাকালেন। মুজিব তাঁর স্বভাবসুলভ বজ্রকণ্ঠে শুরু করলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে কণ্ঠস্বর নিচু গ্রামে নামিয়ে আনলেন বক্তব্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি একপক্ষীয় স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না। কিন্তু ২৫ মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে চারটি পূর্বশর্ত আরোপ করলেন।
বক্তৃতার শেষ দিকে তিনি জনতাকে শান্ত এবং অহিংস থাকার উপদেশ দিলেন। যে জনতা সাগরের ঢেউয়ের মতো প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে রেসকোর্সে ভেঙে পড়েছিল—ভাটার টান ধরা জোয়ারের মতো তারা ঘরে ফিরে চলল।…এই বক্তৃতা সামরিক আইন সদর দপ্তরে স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিল। সদর দপ্তর থেকে টেলিফোনে কথোপকথনকালে একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জানান যে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে উত্তম ভাষণ।’
ঝড় শান্ত হওয়ার পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ৩টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় এলেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াকুব, মেজর জেনারেল খাদিম রাজা এবং অন্য উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন। আমিও সেখানে ছিলাম।
একই দিন সন্ধ্যায় জেনারেল টিক্কাকে সরকারিভাবে পরিস্থিতি অবহিত করা হলো। ব্রিফিংয়ের সময় আমাকে লাগোয়া কক্ষে থাকতে বলা হয়, যাতে আমাকে পাওয়া যায়। কিন্তু কেউ আমাকে ডাকতে আসেনি। ৭টা ৩০ মিনিটে জেনারেল ইয়াকুব ব্রিফিং শেষ করে কামরা থেকে বেরিয়ে এলেন। এবং তাঁর স্নেহভরা হাত আমার কাঁধে রেখে বললেন: ‘নাহি খেল আয়ে দাগ বারুছে খুদো কে আতি হে অওর দোঁ জবা আঁতে আঁতে।’ (প্রথম দৃষ্টিতে কেউই সমস্যার পুরোপুরি তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারে না।) (সংক্ষেপিত)
নিয়াজির আত্মসমর্পণের দলিল (জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৭) গ্রন্থ থেকে
সিদ্দিক সালিক: তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা
অনুবাদ: মাসুদুল হক
Also Read
-
অভিনেত্রী শমী কায়সার গ্রেপ্তার
-
মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি শুরুর চিন্তা বিএনপির
-
চট্টগ্রামে ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সংঘর্ষ, ফাঁকা গুলি, সাত পুলিশ সদস্য আহত
-
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো আক্রমণের মুখে: সম্পাদক পরিষদ
-
প্রাথমিক ভোট গণনার ফল যে কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে