ক্রোড়পত্র
কুমিল্লা দখলের লড়াই
মোহাম্মদ আইনউদ্দিন (বীর প্রতীক) ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থানরত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তখন তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
৪ ডিসেম্বর ব্যাটল অব ইন্ডিয়া-পাকিস্তান শুরু হয়। সেটাতে নবম বেঙ্গলকে দায়িত্ব দেওয়া হলো গঙ্গাসাগর এলাকায় অবস্থান নিতে, যেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পাকিস্তানি বাহিনী কোনো সমস্যা করতে না পারে। এই দায়িত্ব ছিল আমার। আর কর্নেল সফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন ৩ নম্বর সেক্টরকে দেওয়া হলো একটা ব্যাটালিয়ন দিয়ে সিঙ্গারবিল এলাকার উত্তর অংশে প্রটেকশনের দায়িত্ব। ওইখানে ছিল ভারতীয় বাহিনীর টেন মাউন্টেন ডিভিশন, সেটার কমান্ডে ছিলেন জেনারেল গনজালভেস। তাঁর নেতৃত্বে ৪ ডিসেম্বর খুব সকালে আক্রমণ শুরু হয়। আমি বাইনোকুলার দিয়ে সব দেখছিলাম। টেন বিহার নামে ইন্ডিয়ান আর্মির একটা ব্যাটালিয়ন ছিল সবচেয়ে বাঁয়ে, তারা মাইন ফেটে আটকে যায়, এতে তাদের অনেক সেনা ও অফিসার আহত হয়। ডান পাশেও প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ভারতীয় বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। সেখানে তাদের একজন ব্রিগেডিয়ার আহত হন। তিনি ছিলেন ব্রিগেড কমান্ডার। জেনারেল গনজালভেসের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি গিয়েছিলেন।
...যাই হোক, তিন ঘণ্টা ককফাইটের পর ইন্ডিয়ান আর্মি পুরো এলাকা দখল করে নেয়। তারপর তারা আমাকে ওয়্যারলেসে খঁুজছিল। তখন নবম বেঙ্গলের জন্য আদেশ এল, আমরা যেন তৎক্ষণাৎ কুমিল্লা-চিওড়া কাজীবাড়ীর দিকে অগ্রসর হই। কুমিল্লা রুটে আমার জন্য অর্ডার ছিল, লাকসাম রুট দিয়ে, যেটা বর্তমানে কুমিল্লা চিটাগাং রোড—একে মেইন এক্সেস করে কুমিল্লা টাউন দখল করতে হবে আমাকে। আমি কয়েকজনকে ওখানে প্রটেকশনে রাখি। আমি না এলে ব্যাটালিয়নও আসতে পারবে না। তখন লেফটেন্যান্ট হারুন ব্যাটালিয়নকে মুভ করালেন আর আমার জন্য মেসেজ রেখে তিনি সীমান্ত পর্যন্ত চলে গেলেন। আমি ওখানে গিয়ে ওদের সঙ্গে মিলিত হলাম। ৪ ডিসেম্বর ভোরে সীমান্ত অতিক্রম করে আমরা সন্ধ্যার দিকে চিওড়া কাজীবাড়ীর কাছে পৌঁছি, সেখানে চারপাশে ইন্ডিয়ান আর্মির ব্যারিকেড ছিল। তারা আমাদের টেক ওভার করল। ওখানে ব্রিগেডিয়ার বকসিকে বলা হলো, তিনি যেন চাঁদপুর হয়ে কুমিল্লাগামী রাস্তাটা ধরে লালমাই এক্সেস যান। আমাকে বার্তা পাঠানো হলো, ইনডিপেনডেন্ট এক্সেস চট্টগ্রাম-কুমিল্লা হাইওয়ে হয়ে কুমিল্লা টাউন দখল করতে হবে।
আমিই মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার, আমার অধীনে ছিল একটা ইন্ডিয়ান মাউন্টেন আর্টিলারি ব্যাটারি, সেটার কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন জামাল। আমি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, তিনি ব্যাটারি কমান্ডার। ওই ব্যাটারির সাপোর্ট নিয়ে, আর্টিলারির সাপোর্ট নিয়ে আমি চিওড়া কাজীবাড়ী থেকে ডিসেম্বরের ৫ বা ৬ তারিখ সকালবেলা রওনা হই কুমিল্লার উদ্দেশে। পথে প্রথম আক্রমণ হলো কুমিল্লা টাউনের পুবদিকে বালুথুবা এলাকায়। সেখানে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হারুন ছিলেন। আমাদের তখন অফিসার নেই। আর আমি আশরাফকে খঁুজে পাচ্ছিলাম না। শাহরিয়ার নামে আরেকজন অফিসার ছিলেন। সেখানে হারুন আক্রমণ করলেন। পাকিস্তান বাহিনী সরে গেল, আমরা বালুথুবা দখল করলাম। সকাল পৌনে ১০টার দিকে আমি কুমিল্লা টাউনে পৌঁছে রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ডিফেন্স এক্সটেন্ড করে পজিশন নিই। সন্ধ্যায় ভারতীয় বাহিনী আসে। জেনারেল হীরা জানালেন, এ সময়ের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার বকসি ও টম পান্ডে আহত হয়েছেন। আমি কুমিল্লা টাউন দখল করি ৬ ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র প্রণীত, ইউপিএল থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে কসবা গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত, সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত।
Also Read
-
মা খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে তারেক রহমান
-
নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: শফিকুল আলম
-
জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধছে এনসিপি, দাবি আবদুল কাদেরের
-
এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেই স্বপ্ন দেখেছি: তারেক রহমান