শহীদ বুদ্ধিজীবী
সিকদার হেমায়েতুল ইসলাম
শহীদ বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিসেবী, লোহাগড়া, নড়াইল, খুলনা বিভাগ
একাত্তরের ১৫ মে বেলা তিনটা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী নদীর তীরঘেঁষা ইতনা গ্রামে হামলা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বর্বরদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, শিক্ষক ও সংস্কৃতিসেবী সিকদার হেমায়েতুল ইসলাম আশ্রয় নিয়েছিলেন গ্রামের এক বাড়িতে। ঘাতক সেনারা অনেকের মধ্য থেকে শুধু হেমায়েতুল ইসলামকে ধরে নিয়ে আসে। ওই বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ জেরা করে বহু লোকের সামনে তাঁর বুকে গুলি করে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খুনিরা আরও চারটি গুলি করে তাঁকে। শিক্ষকের তাজা রক্তে ভেসে যায় সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটি। ওই দিন গ্রামের তিনজনকে হত্যা করে তারা।
শহীদ হেমায়েতুল ইসলামের জন্ম ইতনা গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ জানুয়ারি। বাবা আবদুল করিম সিকদার ছিলেন কৃষিজীবী ও গ্রামপ্রধান। মা রহিমা খাতুন গৃহিণী। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মেজ ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সিকদার আনোয়ারুল ইসলাম। হেমায়েতুল ইসলামের স্ত্রী হামিদা খাতুন ৮৪ বছর বয়সে গত আগস্ট মাসে মারা যান। তাঁর চার ছেলে, এক মেয়ে। হেমায়েতুল ইসলাম ১৯৫২ সালে বিএ পরীক্ষা দেওয়ার পরই ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর লোহাগড়ার লক্ষ্মীপাশা হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক ও যশোরের মনিরামপুরে রামগঞ্জ হাইস্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
হেমায়েতুল ইসলামের ভাই মুক্তিযোদ্ধা সিকদার আনোয়ারুল ইসলাম সেই বিভীষিকাময় দিনটির স্মৃতিচারণা করে প্রথম আলোকে বলেন, স্কুল ও কলেজজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন হেমায়েতুল ইসলাম। সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। ২৭ মার্চ লোহাগড়া থানা সদরে লক্ষ্মীপাশায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপিত হয়। সেখানে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ইতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু হলে ইতনায় এসে ক্যাম্পে কাজ করতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে যুবকদের সংগঠিত করতে থাকেন। রাজাকাররা হানাদার সেনাদের কাছে এই ক্যাম্পের কথা জানিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ১৫ মে গ্রামে হামলা করে হেমায়েতুল ইসলাম এবং অতুল পাল ও পেনু ঘোষকে হত্যা করে তারা।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্ত্রী হামিদা খাতুনের কাছে চিঠি ও দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তিনি মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকাভুক্ত হননি। বাংলা একাডেমির শহীদ বুদ্ধিজীবীকোষ গ্রন্থে সিকদার হেমায়েতুল ইসলামের নাম রয়েছে। ইতনা গ্রামে হানাদার সেনারা কয়েক দফা গণহত্যা চালায়। ১৫ মে শহীদ হন ৩ জন, ২৩ মে শহীদ হন ৩৯ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এ গ্রামের আরও আটজন শহীদ হন। ১৯৯৪ সালে ইতনা গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে এই ৫০ শহীদের নাম উৎকীর্ণ করে ইতনা চৌরাস্তায় স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। সেখানে ১৫ মে শহীদের তালিকায় প্রথম নামটিই শহীদ শিক্ষক হেমায়েতুল ইসলামের। লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শ ম আনয়ারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সংস্কৃতিসেবী শিক্ষক শহীদ সিকদার হেমায়েতুল ইসলামের নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীর সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।
গ্রন্থনা: মারুফ সামদানী, লোহাগড়া, নড়াইল
Also Read
-
নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন: ৬৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে লিখিত, ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক
-
ট্রাম্পের নির্দেশেই স্টর্মিকে ঘুষ দিয়েছি: কোহেন
-
কেন অর্থনীতিবিদকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করলেন পুতিন
-
ঢাকা অঞ্চলের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মূল্যছাড় পাবেন পুলিশ সদস্যরা
-
ছেলেকে কখন বুকে জড়িয়ে নেবেন, সেই অপেক্ষায় মা