শহীদ বুদ্ধিজীবী
মো. আবুল খায়ের
শহীদ বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, কাউখালী, পিরোজপুর, বরিশাল
শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. মো. আবুল খায়ের ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক।
বিজয়ের উষালগ্নে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনীর একটি দল তাঁকে ফুলার রোডের ৩৫বি বাসার সামনে থেকে সকাল সাতটার দিকে ধরে নিয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর মিরপুর বধ্যভূমিতে আরও অনেকের সঙ্গে তাঁর গলিত মরদেহ পাওয়া যায়।
এ ঘটনার বিবরণ জানা যায় মো. আবুল খায়েরের ছেলে রাশেদুল ইসলামের কাছ থেকে।
এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে (৩ জানুয়ারি ২০১৫) রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিন আব্বা একটা শাল গায়ে বাইরে দাঁড়িয়ে। শীতের দিন উত্তাপ পোহাচ্ছিলেন।
এমন সময় মুখোশধারী কয়েকজন লোকসহ একটি মাইক্রোবাস এসে থামে তাঁর সামনে। তারা আব্বাকে জিজ্ঞেস করে, খায়ের সাহেব কোথায়?
আব্বা তেজোদীপ্ত কণ্ঠে বলেন, “আমি”। আলবদর বাহিনীর নরপিশাচরা আব্বাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি। চোখে কাপড় বেঁধে স্টেনগান উঁচিয়ে নিয়ে চলে গেল।
‘তারপর দুই দিন কারফিউ। টেলিফোন লাইন কাটা। কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো।
আব্বা আর ফিরে এলেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আব্বার গলিত লাশ পাওয়া গেল। তাঁকে শনাক্ত করা হয় গায়ের শাল দেখে। সেকি করুণ দৃশ্য।’
মো. আবুল খায়ের একাত্তরে ফুলার রোডের বাসাতেই ছিলেন। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা নিজ চোখেই প্রত্যক্ষ করেন।
তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপদ কোনো স্থানে যাননি। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘কী হবে একলা বেঁচে?
দেশের লোকের ওপর এত অন্যায়-অত্যাচার হচ্ছে, তা কি আমার জীবনের চাইতে বড়?’
সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠ অন্যান্যের সঙ্গে আলাপকালে আবুল খায়ের প্রায়ই বলতেন, ‘বর্বর পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের একত্রে আর থাকা সম্ভব নয়।
আমাদের স্বাধীনতা অবশ্যই চাই।’ এসব কথা বলে তিনি পাকিস্তানিদের বিরাগভাজন হন। সেনাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজনের সঙ্গে তাঁকেও আটক করে সেনানিবাসে নিয়ে যায়।
সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠায়। ১৭ দিন বন্দী থাকার পর মুক্তি পান।
মো. আবুল খায়েরের জন্ম পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া গ্রামে, ১ এপ্রিল ১৯২৯। বাবা আবদুর রাশেদ, মা সৈয়দা ফখরুননেছা।
পিরোজপুর সরকারি স্কুল থেকে ১৯৪৫-এ প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন।
১৯৪৭-এ প্রথম বিভাগে আইএ পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে ১৯৫০-এ ইতিহাসে অনার্স (দ্বিতীয় শ্রেণিতে তৃতীয়) এবং ১৯৫১-এ এমএ পাস করেন।
১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯৬২ সালে আমেরিকান ইতিহাসে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন।
আবুল খায়েরের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় বরিশালের চাখার ফজলুল হক কলেজে। ১৯৫৩-৫৪ পর্যন্ত এই কলেজে শিক্ষকতা করে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন।
১৯৫৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হন। পরে রিডার (বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক) পদে উন্নীত হন।
মো. আবুল খায়েরের স্ত্রী সাঈদা বেগম। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রিয়াজুল ইসলাম মারা গেছেন।
দ্বিতীয় ছেলে কামরুল ইসলাম ও তৃতীয় ছেলে রাশেদুল ইসলাম—দুজনই চাকরিজীবী। মেয়ে হোমায়রা ইয়াসমীন গৃহিণী।
স্কেচ: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (প্রথম পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯১) থেকে।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
সূত্র: ৬ জানুয়ারী, ২০১৫ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত
Also Read
-
প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য
-
আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান
-
তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে কী বললেন নাহিদ, আখতার, হাসনাত ও সারজিস
-
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর, ‘সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী’ বলে উল্লেখ
-
মঞ্চে নির্ধারিত চেয়ারে না বসে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলেন তারেক রহমান