শহীদ বুদ্ধিজীবী
মহসিন আলী
শহীদ বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, মেহেরপুর, খুলনা বিভাগ
রাজশাহী বেতারের প্রকৌশলী মহসিন আলী অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি আবৃত্তিও করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের রাজশাহী থেকে গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরে নিয়ে আসেন। ১০ আগস্ট তিনি বাড়ি থেকে রাজশাহী ফেরার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘রাজশাহী বেতারে আগামীকাল সকাল আটটা থেকে সোয়া আটটার মধ্যে আমার কণ্ঠ শুনতে পেলে বুঝবে আমি বেঁচে আছি।’ কিন্তু তাঁর কণ্ঠ আর কোনো দিন শোনা যায়নি। রাজশাহী বেতারের পাকিস্তানপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেয়। স্বজনেরা ঘটনা জেনেও ভয়ে লাশ উদ্ধার করতে পারেননি। দিনটি ছিল একাত্তরের ১১ আগস্ট।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আবদুল্লাহ আল-আমিন শহীদ প্রকৌশলী মহসিন আলীর ছবি ও তাঁর জীবনকর্ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্যসমৃদ্ধ একটি লেখা পাঠান। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।
মহসিন আলীর জন্ম ১৯৩৮ সালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামে। পিতা মকসেদ আলী কৃষক, মা রুমানা বেগম গৃহিণী। তিনি চুয়াডাঙ্গার হাট বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং কুষ্টিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষা শেষে রাজশাহী বেতারে প্রকৌশল বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। সপরিবার থাকতেন রাজশাহী শহরের সরকারি বাসভবনে।
প্রগতিশীল ও মুক্তিকামী শিল্পী-কলাকুশলীদের সঙ্গে শহীদ মহসিন আলীর সখ্য ছিল। ছাত্রজীবনে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। স্বাধিকার আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণা, অসহযোগ ও প্রতিরোধ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর রাজশাহী বেতারের শিল্পী-কলাকুশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর প্রেরণায় মিনাপাড়া ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার তরুণেরা দলে দলে মুক্তিবাহিনী ও মুজিব বাহিনীতে যোগ দেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
শহীদ প্রকৌশলী মহসিন আলীর সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন কেউ মেহেরপুরে বেঁচে নেই। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের মুক্তিসংগ্রামে মেহেরপুর, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রফিকুর রশীদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: মেহেরপুর জেলা বইতে মহসিন আলীর জীবনী ও অবদানের উল্লেখ রয়েছে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহসিন আলীর স্ত্রী হোসনে আরাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে পিপুল মহসিন ঢাকায় ব্যবসা করেন।
মিনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শহীদ মহসিনের নিকটাত্মীয় মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ মহসিন ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ। প্রকৌশলী হলেও তিনি ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী ও প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী। তিনি সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা না হলেও তাঁর অনুপ্রেরণায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।’ একই আসনের আরেক সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গণি বলেন, প্রকৌশলী মহসিন ছিলেন বড় মাপের মানুষ। শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাঁর সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।
গ্রন্থনা: আবু সাঈদ, মেহেরপুর
Also Read
-
আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়: ডোনাল্ড লু
-
নাকবা দিবস: আরও বড় মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি ফিলিস্তিনিরা
-
ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী
-
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেমড সেলে না রাখার রায় স্থগিত
-
সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে যে ‘উপহার’ দিতে চান নাজমুল